রকিব মুহাম্মদ
যুগ্ম বার্তা সম্পাদক
আসছে কালো টাকা সাদা করার উৎসব। ঘোষিত বাজেটে কালো টাকা বা অপদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ এবার আরো অবারিত করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে অবস্থিত শিল্পে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে। এবার জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রেও এ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
তবে এবার অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে অপ্রদর্শিত অর্থের মালিকরা অপেক্ষাকৃত কম কর পরিশোধ করেই কালো টাকা বৈধ করতে পারবেন। মূলত নির্দিষ্ট কিছু খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে সরকার অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের এ সুযোগ দিয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর নতুন এ বাজেটে কালো টাকা সাদা করার পদ্ধতির ব্যাপারে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে বারবার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হলে দুর্নীতি উত্সাহিত হবে৷ আবার কারও বক্তব্য এমন যে অবৈধ পন্থায় উপর্জাতি হারাম টাকা সাদা করার ক্ষমতা সরকারের নেই, এটা শুধুমাত্র ইসলামি পদ্ধতিতে সাদা হতে পারে। আল্লাহর বিধান মেনে সেই টাকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
শাইখ যাকারিয়া রহ, ইসলামি রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ও দেশের অন্যতম শীর্ষ আলেম মুফতি মিজানুর রহমান সাইদ কালো টাকাকে প্রথমত দুই ভাগে ভাগ করেছেন। প্রথমত, বৈধ পন্থায় উপার্জিত টাকা কিন্তু সরকারের কর পরিশোধ না করার কারণে অথবা সরকারি কোন আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে তা কালো টাকায় পরিণত হয়েছে। দ্বিতীয় প্রকার কালো টাকা হলো, হারাম পদ্ধতিতে উপার্জিত অর্থ। অর্থাৎ, সুদ, ঘুষ, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি হারাম পন্থায় উপার্জিত অর্থও কালো টাকার অন্তর্ভুক্ত।
মুফতি মিজানুর রহমানের মতে সরকার প্রথম প্রকারের কালো টাকা বৈধ করার ক্ষমতা রাখে। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট পরিমাণ কর আদায়ের মাধ্যমে প্রথম প্রকারের কালো টাকাকে সরকার বৈধতা দিতে পারে। কারণ, কালো টাকা উপার্জনকারী সরকারি আইন ভঙ্গ করায় এ ব্যাপারে সরকার যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
দ্বিতীয় প্রকারের কালো টাকা অর্থাৎ অবৈধ পন্থায় উপার্জিত হারাম টাকা শুধুমাত্র ১০ পার্সেন্ট বা নির্দিষ্ট পরিমাণ কর আদায়ের মাধ্যমে সাদা বা হালাল হবে না বলে জানান মুফতি মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, চুরি, ডাকাতি, ঘুষ, লুটপাট ইত্যাদি মাধ্যমে হারাম পদ্ধতিতে উপার্জিত অর্থ হারাম। এটাও কালো টাকার অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু সরকারি বা বেসরকারি কোন কাতে বিনিয়োগ করে, কয়েক পার্সেন্ট কর আদায় করে এ টাকা হালাল করার কোন অবকাশ নেই।
কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ইসলামে হারাম উপার্জনের যেমন বৈধতা নেই, তেমনি সে টাকা হালাল করার ন্যূনতম সুযোগও নেই। ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক, এই টাকার মালিক সে কোনদিনই ছিল না। আর যে ব্যক্তির মালিকানায় এই টাকা নেই, সে ব্যক্তি কোন পদ্ধতিতেই হারাম টাকা সাদা করার ক্ষমতা রাখে না। সরকারও এ ব্যাপারে কোন অধিকার রাখে না বলে জানান তিনি।
মুফতি মিজানুর রহমান বলেন, এ ধরনের অবৈধ উপার্জনকারীর সকল টাকা বাজেয়াপ্ত করে যথাসম্ভব মালিকদেরকে ফিরিয়ে দিতে হবে। মালিক সনাক্ত করা সম্ভব না হলে তা জমা হয়ে যাবে রাষ্টীয় কোষাগারের দরিদ্রফান্ডে, যা শুধুই ব্যয় করা যাবে গরীব-দুঃখীদের পিছনে। অথবা, ব্যক্তি নিজেই মালিকক বা তার ওয়ারিশদের তালাশ করে এই টাকা ফিরিয়ে দেবে। মালিকপক্ষের কাউকে না পেলে সওয়াবের উদ্দেশ্য ছাড়া অসহায়দের মাঝে ওই টাকা বন্টন করে দেবে।
আরএম/