মোস্তফা ওয়াদুদ: বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক) এর ‘ফজিলত’ (স্নাতক) বিভাগে সারাদেশের মেধাতালিকায় দ্বিতীয়, তৃতীয়, পঞ্চম ও সপ্তম স্থান অর্জন, ‘মুতাওয়াসসিতাহ’ (নিম্ম মাধ্যমিক) বিভাগে সারাদেশে প্রথম স্থান অধিকার ও ‘ইবতিদাইয়াহ’ (প্রাইমারী) তে ২য় স্থান অধিকারসহ ৮৪ জন মেধাস্থান অর্জন করে সাফল্যের শীর্ষে অবস্থান করছে ঢাকা জেলার জামিয়া ইসলামিয়া বাইতুন নূর, ওয়াসা রোড উত্তর-পশ্চিম যাত্রাবাড়ী মাদরাসা।
গত বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সকাল ১০ টায় বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক) এর ৪২তম কেন্দ্রীয় পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর এ তথ্য নিশ্চিতভাবে জানা গেছে।
মেধাস্থান পাওয়া ৮৪ জন ছাত্রের মাঝে ‘ফজিলত’ (স্নাতক) বিভাগ থেকে ৮ জন, ‘সানাবিয়া উলইয়া’ (উচ্চ মাধ্যমিক) বিভাগে ১ জন (১৪ তম), ‘মুতাওয়াসসিতাহ’ (নিম্ম মাধ্যমিক) এ ২৪ জন, ‘ইবতিদাইয়াহ’ (প্রাইমারী) ২য় স্থান অধিকারসহ ৭০ জন ছাত্রের মাঝে ৫০ জন মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছে। আর জোনভিত্তিক ‘হিফজুল কুরআন’ বিভাগেও ২য় হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
জানা যায়, গুণগত ও মানগত দিক থেকে বর্তমানে সাফল্যের শীর্ষে আছে রাজধানীর সায়েদাবাদের এ মাদরাসাটি। প্রথমস্থান অধিকারী মাদরাসার (জামিয়াতুস সুন্নাহ) অধিক ছাত্র সংখ্যা হিসেবে তুলনামূলক কম ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে মাদরাসাটি।
বেফাকের শীর্ষতালিকায় স্থানলাভ ও ছাত্রদের ভালো ফলাফলের ব্যাপারে মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মুফতি মুনীরুজ্জামান আওয়ার ইসলামের কাছে অনুভূতি প্রকাশ করে বলেছেন, আমি মাদরাসার ভালো রেজাল্টের কারণে অনেক খুশি। এ জন্য মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। বিশেষত মাদরাসার কমিটির সদস্য, মুহিব্বিন ও হিতাকাঙ্খীবৃন্দ সবার প্রতি শুকরিয়া জানাচ্ছি। আমি মনে করি সবার সমন্বিত মেহনত ও শিক্ষকদের আন্তরিক পরিশ্রমের ফলে আল্লাহ তায়ালা আমাদের এ সাফল্য দিয়েছেন। ভবিষতে এ সাফল্য ধরে রাখতে আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া চাই। সাথে সাথে আপনাদের (আওয়ার ইসলাম) মাধ্যমে সবাইকে অনুরোধ করবো আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করার জন্য।
আজকের ভালো রেজাল্ট প্রকাশের দিনে তিনি মাদরাসার মরহুম সভাপতি আলহাজ্ব এম. এম. গফুর মিয়ার কথা স্মরণ করে বলেন, তিনি আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপাড়ে চলে গিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন। তিনি মাদরাসার জন্য অনেক শ্রম দিয়েছেন। আজ যদি তিনি বেঁচে থাকতেন তাহলে অনেক খুশি হতেন।
মাওলানা মুফতি মুনীরুজ্জামান মাদরাসার পেছনে তাঁর শ্রমের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি মুহতামিম হিসেবে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই অত্যন্ত মেহনত, পরিশ্রম ও দক্ষতার সাথে মাদরাসাটি পরিচালনা করে আসছি।’
পড়াশুনার প্রতি ছাত্রদের প্রচুর মনোযোগের কথা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘এখানের ছাত্রদের পড়ায় গভীর মনোযোগ রয়েছে। ছাত্ররা পড়তে বসলে মাঝে মাঝে এমন অবস্থা হয় যে, সূর্য অস্ত ও উদয়ের কোনো খবর তাদের থাকে না। রাতদিন এ পরিমাণ মেহনত ও পরিশ্রম করে তারা। এমনও ছাত্র আছে যারা সারাক্ষণ পড়াশোনা করে।’
তিনি আওয়ার ইসলামের সাথে কথা বলেন খোলামেলা ভঙ্গিতে। বলেন, ‘আমিও তো এক সময় ছাত্র ছিলাম। কিন্তু আমার মাদরাসার ছাত্রদের মেহনত দেখে আমি নিজেই অবাক হয়ে যাই। বলি, এরা এতো মেহনত করে কিভাবে?’
তিনি বলেন, ‘এখানে সার্বক্ষণিক আমলের পরিবেশ চালু থাকে। সারাক্ষণ ছাত্ররা কিতাব নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ছাত্ররা কখনো মাদরাসার বাইরে রাস্তায় বের হয় না। ওরা মনে করে রাস্তায় বের হলেইতো গুনাহ হবে। কোনো কোনো ছাত্রতো সারা বছরের জন্য ইতিকাফের নিয়ত করে নিয়েছে। ইতিকাফের মতোই তারা সর্বক্ষণ মাদরাসায় অবস্থান করে।’
তিনি বলেন, ‘আমার এখানের সকল উস্তাদ অত্যন্ত যোগ্যতাসম্পন্ন। পাশাপাশি তাদের আমল-আখলাক, আচার-ব্যবহার অনেক ভালো। ছাত্ররা তাদের থেকে সব বিষয়ে ইস্তেফাদা (উপকার) লাভ করতে পারে। আমার এখানে অন্য যে কোন পরিবেশ থেকে কেউ আসলেও এখানের পরিবেশের সাথে মিশে যেতে পারবে ইনশাআল্লাহ।’
আমার এখানের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট হলো, ‘আমরা ছাত্রদের ফারাগাতের পর সাধ্যমতে সবাইকে খেদমাতের ব্যবস্থা করে দেই। মূলত আমাদের এখানে যারা ভালো রেজাল্ট করে তাদের দু’ বছরের ইফতা পড়ার সুযোগ দেই। ইফতার পর যার যে যোগ্যতা সে মোতাবেক চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন মাদরাসায় পাঠিয়ে দেই। এবছরও আমরা অনেক ছাত্রের খেদমাতের ব্যবস্থা করেছি।’
মাদারাসার ভর্তি কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী শিক্ষাবর্ষে আমাদের এখানে ভর্তি চলবে মাত্র ২ দিন। ৭ শাওয়াল ১৪৪০ হিজরি পুরাতন ছাত্রদের মাত্র একদিন ভর্তি নেয়া হবে। আর নতুন ছাত্রদের ভর্তি ৮ শাওয়াল ১৪৪০ হিজরি (মাত্র একদিন) নেয়া হবে।
জানা যায়, সারাদেশে ‘ফজিলত’ (স্নাতক) বিভাগে ২য় স্থান অধিকার করা এ মাদরাসার ছাত্র ‘মুহা: ইকরামুল হাসান আহমদ’। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৬৪। মাত্র ২ নাম্বার বেশি পেয়ে অন্য মাদরাসার একজন প্রথম হয়েছে। আর একই বিভাগে ৩য় স্থান অধিকার করা ছাত্রের নাম ‘মাহবুবুল আলম’। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৬১।
পরীক্ষায় তাকমিল (এম.এ.) ব্যতিত ৬টি স্তরে মোট পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৮০ জন অংশগ্রহণ করে। এর মাঝে উত্তীর্ন পরীক্ষার্থী সংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫২ জন।
বি.দ্র. আপনার মাদরাসার ভালো রেজাল্টের খবর জানাতে পারেন আমাদের। আমরা গুরুত্ত্বসহ আপনার প্রতিষ্ঠানের সংবাদ করবো।