শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী শীত ও শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস

নিজ হোটেলে বিনামূল্যে সেহরি খাওয়ান রশিদ মাতবর

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: ‘বাবা বছরে ১১ মাস ব্যবসা করি, একমাস আল্লাহ তায়ালার অশেষ কৃপা লাভের আশায় রোজাদার ব্যক্তিদের খেদমত করি।’

ভাবলেশহীন মুখে কথাগুলো বললেন মো. আব্দুর রশিদ মাতবর; যিনি বরিশালের গৌরনদীর মাতবর হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক। আব্দুর রশিদ মাতবর একটা উদ্যোগ নিয়েছেন, আর তা হলো– তার হোটেলে রমজান মাসে বিনামূল্যে সেহরি খাওয়ানো। এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে উপরের কথাগুলো বলেন তিনি।

রমজানের শুরুতে এ হোটেলে ১০০-১২০ জনের মতো মানুষ এসে সেহরি খেতেন। পরবর্তীতে এ সংখ্যা দেড়শ’ থেকে ১৮০-তে গিয়ে পৌঁছে। বিনামূল্যে সেহরি খাওয়ানোর জন্য এ হোটেল বরিশালজুড়ে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে; এ অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষই আব্দুর রশিদ মাতবরের এমন মহতি উদ্যোগের প্রশংসা করছেন।

বিষিয়টি জানাজানি হয় বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য আবদুল্লাহ আল সাইদের এক ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে। ওই ফেসবুক স্ট্যাটাসে আবদুল্লাহ আল সাইদ লিখেছেন, ‘গত সোমবার (২৭ মে) দিনগত রাতে ঢাকা থেকে বরিশালের আসার সময় ফ্রি সাহরি খাওয়ানোর বিষয়টি বুঝতে পারি। নিজের কাছেই অজান্তে ভালো লেগে যায়। সেখান থেকেই মঙ্গলবার (২৮ মে) রাতে ফেসবুকে স্ট্যাটাসটি দেই।

স্ট্যাটাসে উল্লেখ, ‘রোজার মধ্যে রাতের বাসে হাইওয়েতে যাতায়াত করা আমাদের জন্য খুব দুশ্চিন্তার বিষয় না হলেও মোটামুটি চিন্তার বিষয়। কারণ ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের মতো আমাদের ঢাকা-বরিশাল হাইওয়েতে খুব ভালো মানের খাবার হোটেল পাওয়া যায় না। তাই সাহরি খাওয়ার জন্য আমাদের ভরসা করতে হয় রাস্তার পাশের মোটামুটি মানের খাবার হোটেলের ওপর। এ ভরসার মধ্যে দুইটি চিন্তার বিষয় হলো খাবারের মান এবং খাবারের অতিরিক্ত মূল্য। রাত জেগে হোটেল খোলা রাখার কারণে খাবারের মূল্য অনেক সময় হোটেল মালিকরা দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে থাকেন। যাত্রীরা মোটামুটি বাধ্য থাকেন হোটেল মালিকের নির্ধারিত মূল্যে খাবার গ্রহণ করার জন্য। কারণ যাত্রীদের হাতে কোনো বিকল্প উপায় থাকে না। যাত্রীদের এ অসহায়ত্বের সম্পূর্ণ সুযোগ নেন হোটেল মালিকরা। তার মধ্যে পুরাতন পচা-বাসি খাবারতো আছেই। আমরা যারা রোজার মধ্যে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসার জন্য রাতের বাসে যাতায়াত করি তারা এই বিষয়গুলোতে মোটামুটি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি।’

তিনি আরও লিখেন, ‘কিছুদিন আগে আমি একটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পর সোমবার রাত ৯টায় সাকুরা পরিবহনের একটি বাসে ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওনা করি। বাসে উঠে সুপারভাইজারের সঙ্গে সাহরি খাওয়ার বিষয় নিয়ে কথা বললাম। সুপারভাইজার আমাকে আশ্বস্ত করলো রাত তিনটার দিকে যেখানে হোটেল পাওয়া যাবে সেখানে আমাদের সাহরি খাওয়ানোর জন্য বাস থামানো হবে। রাত তিনটায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডে বাস থামলো। যে হোটেলের সামনে বাসটি থামলো ওই হোটেলের সামনে আরও ১০ থেকে ১২টি বাস থামানো ছিল। ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলরত ভালো মানের অধিকাংশ বাসই ওই হোটেলের সামনে থামানো দেখতে পেলাম।’

স্ট্যাটাসে বলা হয়, ‘যাত্রীদের সাহরি খাওয়ার জন্য একসঙ্গে অনেকগুলো বাস ওই হোটেলটির সামনে থামায় হোটেলটিতে অনেক ভিড় হয়ে গেল। আমি সাহরি খাওয়ার জন্য হোটেলের খাবার টেবিলের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম এবং কিছুক্ষণ পরে একটি চেয়ার খালি হলে আমি ওই চেয়ারটিতে বসি। আমি খাবারের কোনো দাম জিজ্ঞেস না করে খাওয়া শুরু করলাম। কিন্তু আমার পাশে একজন যাত্রী হোটেল বয়কে দাম জিজ্ঞেস করতেই বয় উত্তর দিলো দাম লাগবে না, কী খাইবেন বলেন।

কথাটা শুনে তখনো বুঝতে পারিনি বিষয়টা কী। আমি খাওয়া শেষ করে বিল দেয়ার জন্য হোটেলের ম্যানেজারের কাছে যাই। তিনি আমাকে বিনয়ের সঙ্গে বললেন টাকা দেয়া লাগবে না। বিষয়টি বুঝতে পারলাম না। তাই আবার তাকে জিজ্ঞেস করলাম কেন টাকা দেয়া লাগবে না। তিনি আমাকে বললেন, বাবা বছরে ১১ মাস ব্যবসা করি, এক মাস আল্লাহ তায়ালার অশেষ কৃপা লাভের আশায় রোজাদার ব্যক্তিদের খেদমত করি।’

আবদুল্লাহ আল সাইদও আরও লিখেছেন, ‘আমি একটু অবাক হয়ে গেলাম এবং বিষয়টি ভালো করে বোঝার চেষ্টা করলাম। জানতে পারলাম তিনি হোটেলের ম্যানেজার নন, তিনিই হোটেলের মালিক মো. আব্দুর রশিদ মাতবর। পুরো রমজান মাসজুড়ে তিনি সাহরি খাওয়ানোর পর কারও কাছ থেকে টাকা নেন না। আমার মতো কৌতুহলী হয়ে অনেক যাত্রী তার কাছ থেকে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করলেন। অনেক যাত্রী অবাক হয়ে হোটেলের মালিকের দিকে তাকিয়ে রইলেন।

হোটেলের বয়রাও অনেক আন্তরিক। যে কোনো একজন খাবারের জন্য চেয়ারে বসার সঙ্গে সঙ্গে তারা জিজ্ঞেস করেন- কী খাবেন মাছ না মাংস। মাছ হলে কোন মাছ, আর মাংস হলে কিসের মাংস! যেখানে বাংলাদেশে রমজান মাসে ব্যবসায়ীরা পণ্য মজুদ করে মূল্য বাড়ায়, ভেজাল পচা-বাসি এবং অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রির দায়ে ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নামি-দামি খাবার হোটেলগুলোতে জরিমানা করেন, সেখানে গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডের মাতবর হোটেল অ্যান্ড রেস্ট্যুরেন্টের মালিক মো. আব্দুর রশিদ মাতবর স্রোতের বিপরীতের একজন মানুষ। যে মানুষ পুরো রমজান মাসে মহান সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের আশায় রোজাদার ব্যক্তিদের খেদমত করার জন্য এই ব্যবস্থা নিতে পারেন, তিনি অবশ্যই কোনো সময় পচা-বাসি খাবার বিক্রি করতে পারেন না। আব্দুর রশিদ মাতবরের কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করুন আমাদের দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা।’

এ ব্যাপারে মাতবর হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক মো. আব্দুর রশিদ মাতবর বলেন, ‘নিজের আত্মতৃপ্তির জন্য প্রথমবারের মতো রমজানে বিনামূল্যে সেহরি খাওয়ানোর আয়োজন করেছি। এতোটুকু সেবা করতে পারাটা সৌভাগ্যের বলেই মনে করি।’

কেপি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ