রকিব মুহাম্মদ
যুগ্ম বার্তা সম্পাদক
সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরায় মসজিদে শিশুদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। মসজিদের দেয়ালে কর্তৃপক্ষের এ নির্দেশ ঝুলিয়ে দিতেও দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিশুদের মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বিষয়ক নির্দেশিকা সম্বলিত পোস্টারের ছবিটি ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে সমালোচনা শুরু হয়েছে দেশজুড়ে।
কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, মসজিদে গিয়ে তারাও অবুঝ শিশুদের খেলাতামাশায় বেশ বিরক্ত। কেউ বলছেন, শিশুর মানস গঠনে মসজিদ, জামাত, রুকু, সিজদা, সালাম, তেলাওয়াত, তাসবিহ, জায়নামাজের চিত্র অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।
নামাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে তাই শিশুদের মসজিদে প্রবেশের ব্যাপারে ইসলাম কঠোরতা অবলম্বন করেছে বলেও দাবি অনেকের। সত্যিই কি শিশুদের মসজিদে নিয়ে গেলে কোন ক্ষতি রয়েছে? এ ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ও জামিয়া ইকরা বাংলাদেশের সহকারী প্রিন্সিপাল (শিক্ষা) মাওলানা ড. হুসাইনুল বান্না জানান, ‘ইসলামের বিধি অনুসারে শিশুদের মসজিদে প্রবেশে কোন বাধা নেই। বরং, এ বিষয়ে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিভাবকদের উৎসাহিত করেছেন। শিশুদের মসজিদে যাওয়ার ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করতেন। ’
ড. বান্না আল্লাহর রাসুলের একটি হাদিস উল্লেখ করে বলেন, রাসুল সা.-এর মসজিদে নারীরা শিশুদের নিয়ে নামাজ পড়তে যেতেন। আনাস রা. বলেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মায়ের সাথে মসজিদে আসা শিশুর কান্না শুনলে ছোট সূরা দিয়ে নামাজ পড়তেন।’ এটা মুসলিম শরিফের হাদিস।
‘বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোন দেশে শিশুদের মসজিদে যাওয়ার ব্যাপারে এমন কঠোরতা অবলম্বন করা হয় না। আমি তুরস্ক সফরে শিশুদের মসজিদে প্রবেশের ব্যাপারে স্বয়ং মসজিদ কর্তৃপক্ষকেই উৎসাহ দিতে দেখেছি। শিশুরা দুষ্টমি করেছে, চিল্লাপাল্লা করেছে-আমাদের নামাজের খুশুখুজু পর্যন্ত নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে কিন্তু কাউকে কোন উচ্চবাচ্য করতে দেখিনি।’ বললেন ড. হুসাইনুল বান্না।
বাংলাদেশে এ ধরণের নিয়ম বা শিশুদের মসজিদে প্রবেশে কঠোরতা অবলম্বন একটি গর্হিত কাজ এবং এটি অতিভক্তি থেকে করা হয় বলে জানান তিনি। অভিভাবক ও কর্তৃপক্ষকে শিশুদের মসজিদে আসার প্রতি উৎসাহিত করার পরামর্শ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক।
এদিকে, নিয়মিত মসজিদে যাতায়াতের মাধ্যমে শিশুদের মনে ইসলামি সংস্কৃতি জায়গা করে নেয় বলে জানালেন মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইন মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা জুবায়ের হুসাইন ফয়েজী ।
তিনি বলেন, যখন কোন শিশু ভূমিষ্ট হয়, তখন কানে আজানের দেয়ার মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দর্যের আবহ তুলে ধরা হয় তার সামনে। অর্থাৎ ছোটবেলা থেকেই শিশুর মনে ইসলামের শিক্ষা ও সংস্কৃতির সৌন্দর্য ছড়িয়ে দেয়ার প্রয়াস চালানো হয়।
শিশুদের মসজিদে নিয়ে যাওয়া এবং তাদের নামাজে অভ্যস্থ করার ব্যাপারে অভিভাবকদেরই ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
শিশুদের মসজিদমুখী করতে আলেম-ওলামাদের ওয়াজ মাহফিল, জুমার খুতবা, ঘরোয়া আলোচনায় অভিভাবকদের প্রতি নসিহত করার তাগিদ দেন এ ইমাম। শিশু কিশোররা যেন পরিপূর্ণ ধর্মীয় পরিবেশে বেড়ে উঠে এবং তাদের মানসপটে ইসলামি ভাবধারার শিক্ষা ও সংস্কৃতি সঞ্চারিত হয় সে দিকেও খেয়াল রাখার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
আরএম/