ড. মুফতি মুহাম্মদ গোলাম রব্বানী । ।
নব্বইয়ের দশকে আমরা যখন লেখালেখি শুরু করি তখন লেখক সম্মানীর কথা কল্পনাই করা যেত না। আমরা লেখেছি দীন প্রচারের জন্য। কিছুটা নিজেদের প্রচারও এতে জড়িত ছিল। আমার লেখা ছাপা হবে, ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখতে পাবো এটাও ছিল তখনকার সময়ে বড় পাওনা। সম্পাদকদের থেকে সম্মানী আশা করা যেত না।
উর্দু কথাসাহিত্যিক কৃষন চন্দরের ভাষায়- ‘আমরা যখন শব্দের গাঁথুনি সুন্দর করে শেষ করি তখন সম্পাদক একটি ধন্যবাদ দিয়ে লেখাটি নিয়ে যায়। সে লেখাটির মাধ্যমে তার পত্রিকাকে চমৎকার করে তুলে।’
মাসিক আদর্শ নারীতে কাজ করার সময় মাসুদ মজুমদারের সঙ্গে তার বাসায় দেখা হতো। তার দামি লেখাটি নিয়ে মাত্র দু’শ টাকা সম্মানী দেয়ার সুযোগ হতো। এটাই ছিল মাসিক আদর্শ নারীর পক্ষ থেকে একমাত্র সম্মানী প্রদান।
মাসুদ মজুমদার বলতেন, ‘একজন সম্পাদক বা মালিক পত্রিকার কম্পোজের বিল দিতে পারেন, কভার ডিজাইনের বিল দিতে পারেন, পত্রিকা ছাপার বিল দিতে পারেন, বাইন্ডিংখানার বিল দিতে পারেন, যাতায়াত ও কর্মচারীদের বিলও দিতে পারেন, লেখকের সম্মানী দেয়ার সময় তাদের টাকা থাকে না।’
আসলে আমাদের মানসিকতাই হয়ে আছে লেখকরা আছেন ফ্রি সার্ভিস দেয়ার জন্য। তাদের লেখা ছাপাচ্ছি এটাই তো তাদের বড় পাওয়া। লেখালেখির জগতে এসে যখনই সুযোগ পেয়েছি তখনই কিছুটা হলেও সম্মানী দেয়ার চেষ্টা করেছি।
একজন লেখক তার লেখা তৈরি করতে প্রয়োজনীয় বই কিনে পড়েন। কাগজ-কলম কিনে লেখেন। আবার ডাকে বা ই-মেইলে টাকা খরচ করে পাঠান। লেখক অনেক সময় ব্যয় করে তার লেখাটি লিখে থাকেন। এসব কিছুর মূল্যায়ন হওয়া উচিত। ভালোভাবেই মূল্যায়ন করা উচিত।
আমার জীবনে লেখালেখি শুরু হয়েছিল ফ্রি সার্ভিসের মাধ্যমে। অনেক দিন বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি করার পর মাসিক আদর্শ নারীর সম্পাদক মুফতি আবুল হাসান শামসাবাদী সাহেবের নজর কাড়তে সক্ষম হই। তিনি তাঁর পত্রিকার প্রশ্নোত্তর (সওয়াল-জওয়াব) পাতার জন্য ফাতাওয়া লেখা ও আনুসঙ্গিক কাজের জন্য তার পত্রিকায় ঠাঁই দিলেন।
বিকাল তিনটা থেকে রাত দশটা, কখনও আরও বেশি সময় কাজ করতে হতো পত্রিকায়। বিনিময়ে প্রথম মাসে পেলাম বার’শ টাকা। দ্বিতীয় মাসে চৌদ্দশ টাকা। এটাই প্রথম লেখক হিসেবে, বলা যায় কর্মচারী হিসেবে প্রথম পারিশ্রমিক। পরবর্তী সময়ে অবশ্য বিভিন্ন পত্রিকা থেকে পাঁচশ এক হাজার টাকা করে লেখক সম্মানী পেয়েছি। তখন অবশ্য পারিশ্রমিকের প্রতি আকর্ষণ কমে গিয়েছে।
এই মুহূর্তে একটি স্মৃতি খুব নাড়া দিচ্ছে। তখন ১৯৯০ সাল হবে। ময়মনসিংহে জামিয়া আরাবিয়া মাখযানুল উলূমে পড়ি। লাবীব আব্দুল্লাহ ও আমি বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা পাঠাই। একবার মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ সাহেবের আরবি পত্রিকা ‘ইকরা’য় একটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ১৫ টাকা পেয়েছিলাম।
সে দিনটি ছিল আমার অনেক আনন্দের। সেই ১৫ টাকা পাঠানো হয়েছিল মানিঅর্ডার যোগে। মানিঅর্ডার ফরমটির নিচের অংশটি এখনও আমার কাছে সংরক্ষিত আছে।
লেখক: ড. মুফতি মুহাম্মদ গোলাম রব্বানী: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
[লেখা ও লেখকের কথা নিয়ে প্রকাশিত সাময়িকী ‘লেখকপত্র’ এর সৌজন্যে]
এমএম/