মোস্তফা ওয়াদুদ
আওয়ার ইসলাম
গত ৮ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ এর অধীনে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় ইতিমধ্যে পর পর দু বার প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে পরীক্ষার্থী ও বোর্ড নেতৃবৃন্দের মাঝে চরম উদ্বেগ কাজ করছে।
স্থগিত পরীক্ষা শনিবার (২১ এপ্রিল) থেকে পুনরায় শুরু হচ্ছে। এবার হাইয়াতুল উলইয়া কর্তৃপক্ষ প্রশ্নফাঁস রোধে নিয়েছেন বিকল্প ব্যবস্থা। ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রশ্ন পৌঁছাবেন সকল মারকাজের নেগরানে আ'লার কাছে।
এ ব্যাপারে বেফাক বোর্ডের সহ-সভাপতি ও হাইয়াতুল উলইয়ার সদস্য মাওলানা মুসলেহুদ্দীন রাজু বলেন, আমরা প্রশ্নফাঁস রোধে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কয়েকটি হোয়াটএ্যাপ গ্রুপ খুলেছি। যেখানে সব মারকাজের নেগরানে আলা ও তার সহকারীদের নাম্বার যুক্ত করেছি। তাতে ঠিক সকাল ৮ টা ৩০ মিনিটে একযোগে প্রশ্ন আপলোড করা হবে। আর কোন নাম্বার থেকে প্রশ্নগুলো আপলোড করা হবে সেটা আমরা সংক্ষিপ্ত ভিডিও বার্তায় তাদের বলে দিবো।
তিনি জানান, আজকের প্রশ্ন এখনো (সকাল ৭ টা ৩৫ মিনিট) তৈরি হয়নি। কাজ চলছে। তবে আশা করি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়ে যাবে। এরপর পিডিএফ করে আমরা সবার কাছে প্রশ্ন পৌঁছে দিবো।
পরীক্ষা প্রধানগণ প্রশ্ন পাওয়ার পর মাত্র ৩০ মিনিটে ছাত্রদের হাতে কিভাবে প্রশ্ন পৌঁছাবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যদি পরীক্ষা কেন্দ্রের মাঝে প্রিন্ট করার ব্যবস্থা থাকে. তাহলে প্রিন্টের অনুমতি আছে। তবে বাইরে প্রিন্ট করার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া বোর্ডে লিখে পরীক্ষার্থীদের মাঝে প্রশ্ন দিতে পারবে। পূর্বের যুগে যখন কোনো ডিজিটাল কিছু ছিলো না তখনকার মতো ইমলা করানো যেতে পারে। তবে এ প্রক্রিয়াটি পরীক্ষামূলক করা হচ্ছে।
সামনের পরীক্ষাগুলোতে কোন পদ্ধতিতে প্রশ্ন পাঠাবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজকের পদ্ধতিই অবলম্বনের ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত সিদ্ধান্ত আছে। যদি এ পদ্ধতিতে প্রশ্নফাঁস না হয় তাহলে সামনের গুলোতেও এমনটা করা যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গত ২৫ এপ্রিল হাইয়াতুল উলইয়া এর অধীনে চলমান দাওরায়ে হাদীসের (তাকমিল) আবু দাউদ শরিফের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
পরীক্ষা স্থগিত ও প্রশ্নফাঁসের ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় (২৫ এপ্রিল) মাগরিবের পরে জরুরি বৈঠক করেছেন কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ অথরিটি ‘আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
বৈঠকে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয় হাইয়া কর্তৃপক্ষ। সিদ্ধান্তগুলো হলো, শুক্রবারের (২৬ এপ্রিল) পরীক্ষা হবে না। শনিবার (২৭ এপ্রিল) থেকে আগের রুটিনে যথানিয়মে পরীক্ষা চলবে। আবু দাউদ শরীফের পরীক্ষা ১ মে অনুষ্ঠিত হবে। আগামীকালের ত্বহাবী শরীফের পরীক্ষা ২ মে (বৃহস্পতিবার) দুপুর ২ টায় থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে। ৩ মে পরীক্ষা শেষ হবে।
এর আগে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠায় সম্মিলিত কওমি মাদরাসা শিক্ষা বিষয়ক সংস্থা ‘আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ চলমান দাওরায়ে হাদীস (তাকমিল) পরীক্ষা বাতিল হওয়ার পর গত ২৩ এপ্রিল (মঙ্গলবার) থেকে পুনরায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
৬টি কওমি মাদরাসাভিত্তিক শিক্ষাবোর্ড থেকে প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থী আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর কেন্দ্রীয় এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে।
উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদে ‘কওমি মাদরাসা সমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমিল)-এর সনদকে আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীনে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান বিল ২০১৮’ পাস করার পর প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল ২০১৭ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি শিক্ষা সনদের মান ঘোষণা করার পর হাইআতুল উলয়ার অধীনে ৬ বোর্ডের সম্মিলিত দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা ইতোপূর্বেও দুইবার (১৬-১৭ ও ১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এমএম/