সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


বিশ্বে আল্লামা মুফতি তাকি উসমানির কৃতিত্ব

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ইসমাঈল আযহার: করাচির সুপরিচিত আলেম আল্লমা তাকি উসমানির গাড়িতে গতকাল অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। এ হামলায় তাকি উসমানির স্ত্রী এবংতার দুই ছেলে বেঁচে গেলেও  শহিদ হয়েছেন দুইজন।

আল্লামা তাকি উসমানিকে এবং বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ ও পাকিস্তানের জন্য তার কী কৃতিত্ব আছে? এ ব্যাপারে তাকি উসমানির ব্যক্তিত্ব, জীবনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো।

আল্লামা তাকি উসমানি ইসলামি বিশ্বের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। পৃথিবীর সমস্ত আলেম তার দিকে চেয়ে থাকেন। নতুন কোনো মাসলা মাসায়েল এলে তাকি উসামানির মতামত এবং সনদ না দেওয়া পর্যন্ত সেটা গ্রহণযোগ্যতা পায় না।

এ কারণে পৃথিবীর সমস্ত আলেম ওলামা তাকি উসমানিকে মুসলিম উম্মাহর অভিবাক হিসেবে সম্মান করেন। পাকিস্তানেও রয়েছে আল্লামা তাকি উসমানির বিশেষ সম্মান। যে কোন বিষয়ে তার মন্তব্যকে আলাদা গুরুত্ব দেয়া হয়।

মুফতি তাকি উসমানি ইসলামকে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। যিনি ধর্ম প্রচারকে উৎসাহিত করেছেন এবং প্রতিটি বিচার ব্যবস্থাকে ন্যায়ের পথে উন্নত করেছেন।

আল্লামা তাকি উসমানি শাইখুল হাদিস আল্লমা ইউসূফ বিন নুরীর দেখানো পথে ১৯৭৪ সালের পর থেকে কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন। কাদিয়ানীদের অমুসলিম ফতওয়ার বিষয়ে আল্লামা তাকি উসমানি এবং মাওলানা সামিউল হক একটি নথি প্রস্তুত করেছিলেন। যেটা পাকিস্তানের পার্লামেন্টে পেশ করা হয়েছিল।

১৯৪৩ সালের অক্টোবরে সাহরানপুরের দেওবান্দে জন্ম নেয়া মুফতি তাকি উসমানি বিশ্ববরেণ্য মুফতি শফি উসমানির সুসন্তান। মুফতি শফি উসমানি দেওবান্দের সেসকল আলেমের একজন যারা পাকিস্তান সংঘঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

মুফতি শফি উসমানি মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহর ঘনিষ্ঠ মাওলানা শিব্বির উসমানির নিকটাত্মীয়। তিনি কোরংগীতে দারুল উলুম করাচি প্রতিষ্ঠা করেন, যার বর্তমান মুহতামিম আল্লামা তাকি উসমানির বড় ভাই মওলানা মুহাম্মদ রফি উসমানি। যিনি ইতোমধ্যে পাকিস্তানের প্রধান মুফতির হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।

মাওলানা তাকি উসমানি পাঞ্জাবের একটি বিদ্যালয় থেকে কুরআন হেফজ করে আরবি পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে এলএলবি এবং করাচি বিশ্ববিদ্যালয় ও পি ইউ ইউনিভার্সিটি থেকে এমএ ডিগ্রী অর্জন করেন। আজ তিনি দারুল উলুম করাচিতে হাদিস এবং বিচারশাস্ত্র (ইফতা) বিভাগে পড়ানোর দায়িত্ব পালন করছেন।

তাকি উসমানি পুরো বিশ্বে একজন প্রশিদ্ধ গ্রহণযোগ্য মুফতি। বিশ্বের বড় বড় কয়েক জন ব্যক্তির মধ্যে তিনি একজন। মুফতি তাকি উসমানি ১৯৮০ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান হাইকোর্টের শরিয়া আপিল বেঞ্চের বিচারক এবং ১৯৮২থেকে২০০২ পর্যন্ত ফেডারেল শরিয়া আদালতের একজন সদস্য ছিলেন।

দীর্ঘ সময় এই গুরুদায়িত্ব পালনের পর তিনি এ দায়িত্ব থেকে অব্যহতি নেন। শরিয়া আদালতে ব্যাংকগুলোর সুদি লেনদেনকে তিনি ইসলামি ব্যবস্থার বিরোধী ঘোষণা দেন। তিনি বর্তমানে ‘ইসলামিক জুরিসপ্রুডেন্স একাডেমি’, জেদ্দার উপ-রাষ্ট্রপতি এবং করাচির জামিয়া দারুল উলুমের সহ-সভাপতির  দায়িত্ব পালন করছেন।

পাকিস্তানে ইসলামিক ব্যাংকিং সিস্টেম চালু করার ক্ষেত্রেও মাওলানা তাকি উসমানি প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন। এছাড়া তিনি ৮টি ইসলামি ব্যাংকের উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করছেন। তিনি একজন ইসলামি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পর্যাবেক্ষণ সংস্থার চেয়ারম্যান।

শায়খুল ইসলাম মাওলানা তাকি উসমানি ৪৪ টিরও বেশি বই লিখেছেন। তিনি ‘আলবালাগ’ নামক একটি পত্রিকার সম্পাদক। আল্লামা তাকি উসমানির বইগুলো মূলত উর্দুতে লেখা হলেও সেগুলো ইংরেজি, বাংলাসহ আরো অনেক ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে।

মুফতি তাকি উসমানির পরিবার রাজনীতি থেকে সরে এলেও ধর্মীয়ভাবে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ভারতে বিশেষভাবে মান্য করা হয়। পাকিস্তানে মুফতি তাকি উসমানির শিক্ষার্থীরা ইসলামের শিক্ষার আঞ্জাম দিয়ে আসছে।

আফগান তালেবানদের আমির মুহাম্মাদ ওমরের কাছে পাকিস্তান সরকার উলেমায়ে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিলেন লাল মসজিদ সম্বন্ধে প্রশাসনের সাথে আলোচনার জন্য, এই পতিনিধিদলে মুফতি তাকি উসমানিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

আল্লামা তাকি উসমানির উল্লেখ্যযোগ্য কিছু বই

তাফসিরে তাওযীহুল কুরআন, তাকলিদ কি শরয়ী হায়সিয়াত, বাইবেল, হামারা মাআয়েশি নেজাম, মুয়াবিয়া এবং ঐতিহাসিক ঘটনা, হুজুর স.কে ফরমায়া, বিজ্ঞান,আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, নামাজে নুন্নত মোতাবেক পড়হে, বিচারিক ব্যবস্থা, মাসিহিয়্যাত কিয়া হে, এবং দরসে তিরমিযী। উন্দুলুসে কয়েক দিন, ইসলাম ও রাজনীতি, ইসলাম ও উদ্ভাবন।

ডেইলি পাকিস্তান উর্দু থেকে ইসমাঈল আযহারের অনুবাদ

আরএইচ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ