সাজ্জাদ আকবর
গুরুজন আর প্রিয় মানুষদের উপহার তো কতভাবেই মানুষ দিয়ে থাকে। কিন্তু বাঙালি এক যুবক প্রিয়জনের জন্য সাজিয়েছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম এক উপহার। আপনজনকে তিনি উপহার দিতে চান নিজের হাতে বানানো বিশালাকার এক তাসবিহ। যার দৈর্ঘ্য সাড়ে চার হাজার ফুট। পৃথিবীতে এর আগে এর চেয়ে বড় কোন তাসবিহ রচিত হয়েছে বলে শোনা যায়নি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার আব্দুল্লাহ আল হায়দার নামের এক তরুণ তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের ভালোবাসায় পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এ তাসবিহটি তৈরি করেছেন। কালো সাদা সবুজ রঙের ১ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ পুঁতি দিয়ে এক সুতোয় গাঁথা হয়েছে অনন্য এ তাসবিহটি। খবর আনাদোলু এজেন্সির।
এরদোয়ানের জন্য আত্মোৎসর্গী এই যুবক নবীনগরের জালশুকা গ্রামের শরীফ আবদুল্লাহ হারুন ও খোশ নাহার বেগমের ছেলে। তিনি রাজধানীর উত্তরার দারুল এহসান কলেজ থেকে হিসাববিদ্যায় স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পাস করেছেন।
পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্র আনাদুলো এজেন্সিকে জানিয়েছে, হায়দারকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তাসবিহ তৈরির কাজে পুঁতি দিয়ে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন তার বন্ধু আরিফুল ইসলাম। মা খোশ নাহার বেগম ও বড় ভাই আল মামুন পুঁতি গণনার কাজে সহযোগিতা করেছেন। বোন লাইলি বেগম এবং আবদুল্লাহ আল হাসান ও আবদুল্লাহ আল মনসুর নামের ফ্রান্সপ্রবাসী দুই বড় ভাই এতে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। এটি তৈরি করতে দেড় লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রায় দুই মাস সময় লেগেছে।
হায়দার জানান, গত ২ জানুয়ারি থেকে তিনি তসবিটি তৈরি শুরু করেন। প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা সময় ধরে পুঁতি গাঁথতেন। এক হাজার পুঁতি গাঁথতে এক ঘণ্টা লাগত। এতে কালো, সাদা, সবুজ ও সোনালি রঙের পুঁতি ব্যবহার করেন হায়দার। পাকিস্তানে ৬০ কেজি ওজনের একটি তসবি রয়েছে বলে তিনি ইন্টারনেট ঘেঁটে জেনেছেন। সেই হিসাবে তাঁর তৈরি তসবিটি দৈর্ঘ্যে ও ওজনে বিশ্বের সর্ববৃহৎ।
আবদুল্লাহ আল হায়দারের আশা, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের স্বীকৃতি পেলে তসবিটি তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে উপহার দিতে চান। তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে তাশামালিজার সবুজ পাহাড়ের চূড়ায় এশিয়া-ইউরোপের সবচেয়ে বড় মসজিদ ‘তাশামালিজা’ নির্মাণ করার কারণে তিনি তসবিটি এরদোয়ানকে উপহার দিতে চান। আর এরদোয়ান যদি তার এই 'সামান্য' উপহার গ্রহণ করেন তবেই তার সব কষ্ট সার্থক হবে।
হায়দারের ভাষায়, এরদোয়ান বর্তমান বিশ্বের একজন প্রকৃত জননেতা। যিনি সত্যিকার মানবতা, ন্যায় ও মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলেন। বিশেষ করে নিপীড়িত মুসলিম বিশ্বের পাশে দাঁড়ান। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।
বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সংকটেও এরদোগান অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। এছাড়া ফিলিস্তিন,সিরিয়া,ইয়েমেন ও উইঘুরসহ সারা বিশ্বের নির্যাতিত মুসলিম জনগণের জন্য তিনি দরদি অভিভাবকের ভূমিকা নিয়েছেন। এসব কারণেই মূলত এরদোগানের প্রতি হৃদ্যতা বেড়েই চলেছে।
তবে হায়দার আনাদুলো এজেন্সির কাছে তার জোরালো প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বলেন, এরদোগান অবশ্যই তার মানবিক ও মহৎ কর্মকাণ্ডের জন্য নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হবেন।
উল্লেখ্য বাংলাদেশের তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের বিপুল পরিমাণ ভক্ত রয়েছে। দেশটির তরুণ যুবকদের বড় একটি অংশ এরদোগানকে খুব বেশি পছন্দ করেন। তাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর প্রোফাইলে এরদোগানের ছবি দেখেই সেটা আন্দাজ করা যায়।
সূত্রঃ আনাদোলু এজেন্সি
আরআর