সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


ছেলেকে হাফেজ বানাতে চান আবুল বাশার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সুফিয়ান ফারাবী
ভ্রাম্যমাণ প্রতিবেদক

আবুল বাশার তার নাম। প্রচণ্ড ধার্মিক একজন গ্রাম্য মানুষ। বেড়ে উঠেছেন কুমিল্লা জেলার মন্দুক গ্রামে। ছোট বেলায় আড়নিয়া নামক একটি বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে ‘চলাচল’ শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন ।

এই সমস্যার কারণে বিয়ে করবেন না বলে ঠিক করেছিলেন। কারণ বিয়ে করতে টাকার প্রয়োজন। বিয়ের পর স্ত্রী ও সন্তানের ভরণপোষণের প্রয়োজন দেখা দিবে, আর এই পঙ্গু মানুষটি কোনভাবেই টাকা উপার্জনে সক্ষম নন।

এজন্য তিনি চল্লিশ বছর পর্যন্ত বিয়ে করেন নি। কিন্তু তার মৃত্যুর পর তার বংশের কোন অস্তিত্ব থাকবে না, তার জন্য দোয়া করার কেউ থাকবে না, এমনটা তিনি ভাবতে পারেন নি। তাই একদিন সিদ্ধান্ত পাল্টে বিয়ের করে সংসার বাঁধেন।

অতপর ফুটফুটে দুটি ছেলেয় আলোকিত হয় তার বাগান। সংসারের টাকার জোগাড় হচ্ছিল এদিক সেদিক থেকে। কখনো চায়ের দোকানে কারো কাছে হাত পাতেন, আবার কখনো হাটের দিনে কোন ব্যবসায়ীর দোকানে গিয়ে ধর্না দেন। এতে মানুষের মন নরম হলে কিছু দিয়ে সহযোগিতা করেন। আর এরমধ্যমেই সংসারে দু মুঠো অন্যের ব্যবস্থা করেন আবুল বাশার ।

আবুল বাশারের শারিরীক অসুস্থতা থাকলেও নামাজে অলসতা করেন না কখনোই। লাঠিতে ভর দিয়ে মসজিদের সামনের সারিতে স্থান করে নেন সবসময়ই। তার স্বপ্ন ছেলেকে হাফেজে কুরআন ও আলেম বানাবেন। কিন্তু তা আর হচ্ছে কই?

ছেলের পড়াশোনার খরচ চালানোর মতো টাকা তার হাতে নেই। সামান্য ডাল ভাতের জোগান দেওয়াই দায় হয়ে পড়েছে। মানুষের কাছ থেকে মাসে দুই আড়াই হাজার টাকা পান আবুল বাশার। তা দিয়েই চার জন মানুষের রুটির ব্যবস্থা করতে হয়।

বড় ছেলের নাম নাজমুল। বয়স সাত। নিয়ম অনুযায়ী তার থাকার কথা কোন মাদরাসায়। কিন্তু দারিদ্র্যতার কারণে স্কুল বা মাদরাসায় যাওয়া হচ্ছে না।

তার বাবা আবুল বাশারের শারিরীক অবস্থা অচল হওয়ায় তিনি ততটা কষ্ট পাচ্ছেন না, যতটা কষ্ট পাচ্ছেন তার ছেলেকে হাফেজে কুরআন বানাতে না পেরে।

তিনি বলেন, আমার পা দুটোর শক্তি নেই তাতে আমি আল্লাহর প্রতি কোন অভিযোগ করছি না। আমার আক্ষেপ হলো, আমার ছেলেকে আমি হাফেজ ও আলেম হিসেবে গড়ে তোলার কোন উপায় পাচ্ছি না।

মানুষের কাছে চাওয়ারও একটা পরিমাণ আছে। এযাবৎ তো চেয়ে চেয়েই চলছি৷ কিন্তু পড়াশোনার মতো এতো খরচ মানুষের কাছ থেকে পাচ্ছি না। প্রতিমাসে ২৫০০-৩০০০ মানুষ দয়া করে দেন। এতে চাল-ডালে বেঁচে আছি। শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় প্রতিমাসে ঔষুধেও বেশ কিছু টাকা যাচ্ছে। সবমিলিয়ে কোনরকম বেঁচে আছি। ছেলে দুটিকে হাফেজ বানাতে চাই। এ স্বপ্নটি বাস্তবায়িত হলেই হয়। আর কিছু চাওয়ার নাই।

যখন লোকটির বক্তব্য নিচ্ছিলাম আমার চোখ অজানা কারণে ভিজে যায়। ভাবলাম, কেউ ছেলেকে হাফেজ বানাতে চায়, কিন্তু টাকার অভাবে পারেন না। আবার কেউ টাকা থাকা সত্ত্বেও ভাল কাজে ব্যবহার করতে চান না। বিলাসিতায় বিলিয়ে দেন হাজার হাজার টাকা।

অথচ, সামান্য কিছু টাকা হলে একটি ছেলে তার বুকে ধারণ করতে পারে কুরআন। সাথেসাথে একজন বাবারও স্বপ্ন পূরণ হয়।

পরিশেষে আবেদন, কয়েকজন মানুষের প্রয়োজন যারা এ পরিবারকে কিছু টাকা দিয়ে সহযোগিতা করবেন। একটি পরিবারের মুখে দুবেলা আহার তুলে দিবেন। একটি ছেলের দায়িত্ব নিয়ে তার পড়াশোনার খরচ চালাবেন। সাহায্য পাঠাতে পারেন এ ঠিকানায়, (বিকাশ পার্সোনাল) 01789828388।

ক্ষুদাতুর শিশু চায় না স্বরাজ/চায় দুটো ভাত একটু নুন।
ওহে দয়াময় কেন উঠে না কালি ও চুন/যারা খায় এই শিশুদের খুন।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ