কৌশিক পানাহি: অর্থ-বিত্তের পেছনে ছুটছে প্রায় গোটা পৃথিবী; যেখানে প্রায় প্রতিটা কাজেই কিছু মানুষের একমাত্র লক্ষ্য– মুনাফা। এর মধ্যে কিছু মানুষের আবার যতটা পারা যায় আরও কিছু মানুষ শুষে সম্পদের পাহাড় বানানোর বাতিক দেখা যায়; যেখানে সাধারণে সহজাত দয়া-মায়ার অভাবটাই প্রকট।
বিনামূল্যে কাউকে কিছু দেওয়ার কথা না হয় না-ই টানলাম, প্রাপ্য পারিশ্রমিকেও সত্যিকারের সেবা মেলে না আজকাল।
এর ব্যত্যয় খুব কমই দেখা যায় বাস্তবে, আর সেই বিরল ব্যতিক্রমের নায়ক হাফেজ আব্দুল হান্নান। কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের সুলতানপুর গ্রামের এই কুরআন প্রেমিক গত ৩৫ বছর ধরে কুরআন শিখিয়ে আসছেন শিশু-কিশোরদের, তাও ফ্রিতে। আর এভাবে গত ৩৫ বছরে প্রায় ১০ হাজার শিশু-কিশোরকে কুরআন শিখিয়েছেন তিনি।
হাফেজ হান্নান জানান, ১৯৮৪ সালে সর্বপ্রথম বাড়ির উঠানে গ্রামের ছেলেমেয়েদের কোরআন শেখানো শুরু করেন তিনি। এরপর শিক্ষার্থী বেড়ে যাওয়ায় ১৯৮৬ সালে বাড়ির পাশে রাস্তার ধারে একটি মাটির ছাপড়াঘর তৈরি করে সেখানে কোরআন শিক্ষা অব্যাহত রাখেন।
একটু বিরতি নিয়ে হান্নান জানান, ৯ বছর পর ১৯৯৫ সালে তার বাবা আব্দুল আজিজ শেখ তাকে মক্তব নির্মাণে আরও এক কাঠা জমি দেন।
হাফেজ হান্নান জানান, মানুষকে কোরআন শিক্ষা দেওয়াই তার একমাত্র পেশা। কিন্তু এখান থেকে তিনি এক টাকাও উপার্জন করেন না। ভালোবেসে ফ্রি-তে পড়িয়ে যান।
তার ভাষ্য, ‘নিজের আয় বলতে স্থানীয় একটি মসজিদের ইমামতি করে বছরে ২০ মণ ধান পাই। এ ছাড়া, নিজের দুই বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে সংসার চলে আমার।’
হাফেজ আব্দুল হান্নান শুধু তার গ্রামেই নয়, পাশের অনেক গ্রামেও ফ্রিতে কুরআন শেখানো শুরু করেছেন। বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী সকাল বেলা তার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত মক্তবে কুরআন শিখছেন।
হাফেজ হান্নান বলেন, “আমি নিজে কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করেছি। কোরআন শিক্ষা গ্রহণের সময় আমাদের শিক্ষক বলেছিলেন, ‘যে নিজে কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয় সে রাসূল (সা.)-এর কাছে উত্তম ব্যক্তি’। আমি তখন থেকেই সিদ্ধান্ত নিই, মানুষকে বিনা খরচে কোরআন শিক্ষা দেবো। তাই আমি এখন পর্যন্ত করে যাচ্ছি এবং যতদিন বেঁচে থাকবো ততোদিন কোরআন শিক্ষাদানের এই মহান কাজটি করে যাবো।”
কেপি