সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


শাইখুল আযহার আহমদ তাইয়েবের জীবনের অজানা অধ্যায়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রোকন হারুন : ১৯৪৮ সালের ৬ জানুয়ারি শায়েখ আহমাদ তাইয়েব মিশরের প্রাচীন শহর আকসার অন্তর্গত আল- কোরানাতে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মগ্রহণের পর কেউ ধারণা করতে পারেনি, এ আহমাদ তাইয়েব একদিন বিশ্বখ্যাত আল আযহারের প্রধান হবেন।

শায়েখ আহমাদ তাইয়েবের পিতা সব সময় চাইতেন তার প্রিয় দুই পুত্র ‘আহমাদ ও মুহাম্মাদ’ যেন আল্লাহ তায়ালার রহমতে দীনি ইলম অর্জন করে জামিয়া আযহারে দীনি খেদমত করতে পারে। সে লক্ষ্যে তিনি সন্তানদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে ছোটবেলা থেকে শিষ্টাচার, আমানতদার, পরপোকার, ন্যায়পরায়নতা ও খোদাভীরু রূপে গড়ে তুলতে সচেষ্ট ছিলেন।

আহমাদ তাইয়েব পিতার মনবাসনা পূরণ করতে সক্ষম হন। তিনি জামিয়াতুল আযহারে ‘উসুলে দীন’ নিয়ে লেখাপড়া করেন। ‘উসুলে দীন’-এর ওপর তিনি স্নাতক করেন। এরপর এ বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ‘উসুলে দীন’ সম্পর্কে জানার আরো আগ্রহ নিয়ে সর্বোচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য তিনি ফ্রান্স যান।

মিশরের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী হিসেবে তিনি কর্মজীবনের সূচনা করেন। দক্ষতার সাথে এ কাজের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। পর্যায়ক্রমে তিনি প্রধান মুফতির পদে অলংকৃত হন।

আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শায়খ মুহাম্মদ তানতাভীর ইন্তেকালের পর ১৯ মার্চ ২০১০ সালে সরকার আহমদ তাইয়েবকে জামিয়াতুল আযহারে তানতাভীর স্থলভিষিক্ত করেন।

শায়খ আহমদ তাইয়েব অধিকাংশ সময়ই কায়রোতে অবস্থান করলেও নিজ গ্রাম ও আত্বীয়স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেননি। মাঝে মাঝে প্রয়োজনে, তাদের হক পালন করতে ছুটে যান। বিপদে তাদের পাশে দাঁড়ান এবং সাহায্য-সহযোগিতা করেন।

শায়খের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে মাহমুদ ইঞ্জিনিয়ার এবং মেয়ে যুনায়েব আকসায় বসবাস করেন। আকসাতে মানুষের মধ্যকার বিচার-আচর ও বিবাদের ফয়সালায় শায়েখ আহমদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। সেই সাথে হীন-দরিদ্র মানুষের স্বার্থে কাজ করে চলেছেন।

কায়রো শহরে শায়খ আহমদের জায়গা রয়েছে। মূলত সেখানেই বসবাস  করেন। তিনি ও তার বড় ভাই মুহাম্মদ সুফিয়া দু‘ভাই একসঙ্গে মুসলমানদের জন্য কাজ করেন। পাশাপাশি ভিন্ন ধর্মালম্বিদের বিষয়েও কাজ করেন।

ড. আহমদের ভাই বলেন, আমাদের পারিবারিকভাবে একটি সংস্থা আছে। যেটি শিশু কল্যাণ সংস্থা নামে পরিচালিত। এখানে মূলত ইয়াতিম শিশুদের দেখাশুনা করা, যত্নসহকারে লালন-পালন করা, তাদের শিক্ষা দিয়ে বড় করা, বিয়ে-শাদীর ব্যবস্থাও করা হয়।

সেই সঙ্গে নিরাপরাধ জেলে বন্দি লোকদের পরিবারের খোঁজ নিয়ে তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করা এবং তাদের মুক্ত করার যাবতীয় বন্দবস্ত করা। সুদুরপ্রসারী এ লক্ষে নিরলসভাবে মানবতার সেবাই কাজ করে যাচ্ছেন তাদের এ পরিবার।

শায়খুল আযহার বেতন নেন না!

তিনি অত্যন্ত দিলখোলা, সাদাসিধে নির্ভেজাল মানুষ। একজন মুখলেস মানুষ। জামিয়া আযহারে শিক্ষকতার কোন পারিশ্রমিক গ্রহণ করেন না। বরং ফি সাবিলিল্লাহ দীনের খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন এভাবেই। শুধু বেতনের ক্ষেত্রে নয়, বরং দীনের যে কোন খেদমতের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করেন না তিনি।

জামিয়াতুল আযহারের ফান্ড থেকে বিপদগ্রস্ত মানুষের জন্য খরচ করেন। হাসপাতাল নির্মাণের কাজে ব্যায় করেন। যুদ্ধ বিদ্ধস্তদের প্রয়োজনে সাহায্য করেন। শুধু মুসলমান নয়, যেকোন ধর্মের মানুষদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেন শায়খ আহমদ তাইয়েব ।

যেভাবে আযহারের শায়েখ মনোনিত হন

শায়েখ আহমদের গ্রামের এক সাংবাদিক ‘আত্বয়্যিব আত্তাহির’রের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ২০১০ সালে যখন শায়খ মুহাম্মদ তানতাভী ইন্তেকাল করেন, সে সময় হুসনি মোবারক জার্মানে চিকিৎসারত ছিলেন। হুসনি মোবারকের সেক্রেটারি জামিয়া আযহারে জন্য বিশিষ্ট পাঁচজনের একটি তালিকা তৈরি করে হুসনি মোবারককে দেন। সে পাঁচজনের মধ্য থেকে শায়েখ আহমদ তাইয়েবকে জামিয়া আযহারের জন্য নির্বাচন করেন হুসনি মোবারক।

শায়েখ আহমদ তাইয়েব নির্বাচনের কারণ হুসনি মোবারককে জিজ্ঞাস করা হলে  তিনি বলেন, ড. আহমদ ইংরেজি ও ফ্রান্স ভাষা জানেন। দীনের প্রচার-প্রসারে সে অন্যদের চেয়ে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে আসছেন।  তাছাড়াও তিনি ইংরেজি ও ফান্স ভাষাভাষি মানুষের জন্য দীনের খেদমতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবেন এবং তাবলিগের কাজও গুরুত্বের সাথে পালন করতে পারবেন।

শায়খুল আযহার আহমদ তাইয়েব জামিয়া আযহারের মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে ইসলামের সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিতে বদ্ধপরিকর। সে লক্ষে দীনের খেদমত করে যাচ্ছেন তিনি। আহমদ তাইয়েব যখন ফান্স ছিলেন তখনও তিনি ইসলামের সৌন্দর্যতা ছড়িয়ে দিতে কাজ করছিলেন। সে সময় তার হাতে উল্লেযোগ্য সংখক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেন।

সূত্র: আল আরাবিয়া ডটনেট

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ