মাহমুদুল হাসান: বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের। যেখানে প্রায়ই নিত্যনতুন আবিষ্কার আমাদেরকে চমকে দেয়। প্রতিনিয়ত আমরা মিডিয়ার কল্যাণে জানতে পারি নতুন নতুন আবিষ্কারের কথা।
কিশোরগঞ্জের তরুণ আলেম, আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার প্রাক্তন ছাত্র মাদরাসা বাইতুল হিকমার পরিচালক কে এম নাজিমুদ্দীন ইতিহাস ঐতিহ্যের বিশ্ব মানচিত্র তৈরী করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
ইতোমধ্যে তার করা মানচিত্র দেখার জন্য প্রতিনিয়ত লোকেরা ভির করছে তার প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা বাইতুল হিকমায়। মাদরাসা বাইতুল হিকমার মিডিয়া রুমের দেয়ালে সাটানো (১০ ফিট - ৬ ফিট) মানচিত্র দেখে তার বিস্ময়কর প্রতিভার প্রশংসা করছেন সবাই।
প্রত্যক্ষদর্শী মাওলানা ফরহাদ বলেন (যিনি কে এম নাজিমুদ্দীনের শৈশবের ইতিহাস ও ভূগোল বিষয়ের উস্তাদ) এটা আমাদের স্বপ্ন ছিল; কিন্তু কে এম নাজিমুদ্দীন তা তৈরী করতে পেরেছে।
হাফেজ্জী হুজুর রহ. এর খলীফা শায়খ খালেদ সাইফুল্লাহ এটি পাঠকের হাতে দ্রুত তুলে দেওয়ার পরামর্শ দেন। এ ছাড়াও আরও অনেকেই এটাকে বর্তমান মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি খুশির সংবাদ হিসেবে মনে করছেন।
মানচিত্রে যা আছে
রাসুল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী-৬৫ বছর (৫৬৯-৬৩২ খ্রি.), খিলাফতে রাশেদা-৩০ বছর (৬৩২-৬৬১), খিলাফতে উমাইয়া-৮৯ বছর(৬৬১-৭৫০), খিলাফতে আব্বাসীয়া- ৫০৮ বছর (৭৫০-১২৫৮ খ্রি.), খিলাফিতে উসমানীয়া- ৬২৫ বছর (১২৯৯-১৯২৪ খ্রি.), স্পেনে মুসলিম শাসন- ৭৮০ বছর (৭১৩-১৪৩২ খ্রি.)।
খিলাফতে ফাতেমী (৯০৯-১১৭১) আইয়ুবী শাসন ( ১১৭৪-১২৫০), সেলজুক সালতানাত ( ১০৩৭- ১১৯৪ খ্রি.), গজনবিয়া সালতানাত (৯৬৩-১১৮৭খ্রি.), উপমহাদেশে মুসলিম ও বৃটিশ শাসন (৭১০-১৯৪৭ খ্রি.), ইউরোপ (১৭৮৯-১৯৪৫ খ্রি.), আমেরিকা (৭০০-২০০১ খ্রি.),অস্ট্রেলিয়া,তাতারী বাহিনীও সমসাময়িক ইতিহাসের সাল ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত বর্ণনা।
মূল মানচিত্রে উল্লেখিত খিলাফত ও শাসনসমূহের তৎকালীন সীমানা চিহ্নিত করণ ও আয়তন উল্লেখ করা হয়েছে । পাশাপাশি প্রসিদ্ধ ৩০ জন নবীর আগমনের স্থান, এবং মিশরীয় সভ্যতা,ব্যবিলন সভ্যতা,সিন্দু সভ্যতা,আসিরিয় সভ্যতাসহ ইত্যাদি সভ্যতার প্রাচীন স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। নতুন নামের সাথে সাথে প্রাচীন নামেরও উল্লেখ রয়েছে ।
আরো চিহ্নিত করা হয়েছে প্রাচীন বায়জান্টইন সাম্রাজ্য (রোম), সাসানী সাম্রাজ্য (পারস্য) ও শামের সীমানা। ইতিহাস ঐতিহ্যের এই মানচিত্র প্রস্তুত করতে তার সময় লেগেছে প্রায় আড়াই বছর। মানচিত্র প্রস্তুতের ব্যাপারে দীর্ঘ কথা হয় তার সাথে।
নাজিমুদ্দীন জানান, মানচিত্র তৈরী করার ইচ্ছা জাগে শৈশবেই। কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় অবস্থিত বাগে জান্নাত মাদরাসায় ২০০৭ সালে হিফজ বিভাগে পড়াকালীন আমার উস্তাদ মাওলানা ফরহাদ সাহেব হুজুর বাংলাদেশের মানচিত্র সম্পর্কে আমাদেরকে ধারণা দেন।
তখন সবার সাথে আমিও বাংলাদেশের মানচিত্র মুখস্ত করি৷ তখন থেকেই আমার মানচিত্রের প্রতি আসক্তি আসে। এবং নিজে ইতিহাস ঐতিহ্যের বিশ্ব মানচিত্র প্রস্তুত করা এবং এর ওপর বই লেখার আগ্রহ হয়।
যে বইয়ের বৈশিষ্ট্য হবে ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি ওই সময়ের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক অবস্থার সমন্বয়ে মানচিত্র যুক্ত করা। এবং তাতে নতুন পুরাতন নামও রাখা।
তিনি আরও জানান, কওমী সিলেবাসে প্রথমে জামিয়া আবু বকর রা. ও পরে কিশোরগঞ্জের আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ায় পড়াকালে ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তকগুলো পড়া হয়।
২০১৫ সালে ফারেগ হওয়ার পর ইতিহাস নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আরও প্রবল হয়। তখন থেকে বইয়ের প্রস্ততিমূলক প্রথম কাজ হিসেবে মানচিত্র অঙ্কন করে থাকেন। যার কাজ ১৬ সালে শুরু হলে শেষ হয় ২০১৯ সালে। এই মানচিত্র প্রস্তুত করতে তার প্রায় অর্ধশতাধিক নির্ভরযোগ্য বই পড়তে হয়েছে।
মানচিত্র প্রস্তুতকারী প্রতিভাবান কওমি তরুণকে ইতিহাস বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে সহায়তা করেছেন শ্রদ্ধেয় আসাদুল্লাহ (আসাদ স্যার), হস্তে অঙ্কন করতে সহয়তা করেছেন জনাব মুজিবুল হুদা, গ্রাফিক্স করতে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন খ্যাতনামা গ্রাফিক ডিজাইনার আবু উবায়দা এবং তথ্য যোগাতে সহায়তা করেছে মাদরাসা বাইতুল হিকমাহ'র ছাত্র মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ।
কাজের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন কাজী নাহীদ হাসান এবং বিকে শামিম শাহসহ আরও অনেকেই।
উল্লেখ্য, বর্তমানে মানচিত্রটির প্রস্তুতিমূলক মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। সারা দেশে প্রকাশের প্রস্ততি চলছে। অতি দ্রুত পাঠকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
-এটি