সৈয়দ রাকিব
নীচ তলা থেকে সিঁড়ি বেয়ে সাত তলায় ছাদের ওপরে উঠে দেখা গেল বেশ ছিমছাম, সাজানো-গোছানো একটি বাগান। লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি পরা প্রায় ষাটোর্ধ্ব একজন লোক বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত। টমেটো, ঝিঙে আর বাউকুল গাছের ডালপালা সোজা করে দিচ্ছিলেন।
একই সঙ্গে বিভিন্ন গাছের মরা পাতা আর আগাছা সরানোর কাজও সেরে নিচ্ছিলেন। তিনি হচ্ছেন সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর আবাসিক এলাকায় বাড়ির ছাদ বাগানের মালিক হাজী মুহাম্মদ আব্দুস সালাম।
শখের বশে বাড়ির ছাদে ফল ও সবজির বাগান করেছেন তিনি। ছাদে বাগান করে তিনি যেমন মনে আনন্দ পাচ্ছেন; তেমনি বিশুদ্ধ শাক-সবজি ও ফল পাচ্ছেন।
উপশহর আবাসিক এলাকার এইচ ব্লকের ৩ নম্বর সড়কের সুরম্য বাড়িটির মালিক হাজী মুহাম্মদ আব্দুস সালাম। তার নিজ হাতে গড়া এই সবজিবাগান।
গত শুক্রবার বিকালে বাগানটি দেখতে গেলে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি জানান, প্রায় এক হাজার ১৪৫০ বর্গফুটের ছাদের পুরোটাজুড়ে তিনি বিভিন্ন সবজির চাষ করেছেন।
কী নেই তার সেই বাগানে। সব ধরনের সবজি সহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ রয়েছে পুরো ছাদ জুড়ে।
সেখানে ৬ ও ৭ তলার দু’টি ফ্লোরে রয়েছে টমেটো, বেগুন, মূলা, ফুলকপি, শালগম, লালশাক, পালংশাক, লাইশাক, লুডুস পাতা, কাঁচা মরিচ, ধনিয়াপাতা, ক্যাপসিকাম, নাগা মরিচ, লাউ, পেপে ও কলমির শাক। আরও রয়েছে বাতাবি লেবু, পেয়ারা, বাউকুল, আপেলকুল, বারোমাসি আম, মেহেদি, ডালিম, কালোজাম, কামরাঙ্গা, সফেদা, তেজপাতা, মেহেদী।
মোসাম্বি ও কলাগাছ সহ তিন রকমের পিয়ারা, দু’রকমের বড়ই, এলাচি, লুকলুকি, আপেল কুল, বাউকুল, শরীফা, দারুচিনি।
এছাড়া ফুল গাছের মধ্যে গাদা, সূর্যমুখী, কেকটাস, নয়নতারা, গোলাপ, মোহন লোভা, বাগান বিলাস, বাহারি কচু, ঘৃতকুমারী এবং আম, তুলসী, কমলা সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। যা পুরো ছাদটাকে একটি নির্মল বাগানে রূপ দিয়েছে। গত দু’বছর যাবৎ আব্দুস সালাম আরো দু’জনকে সাথে নিয়ে তার মনের মতো করে পুরো ছাদটাকে একটি বাগানের পরিণত করেছেন।
ছাদের চারপাশে টাইলস দিয়ে বাঁধানো সবজিখেত। এখানে বিভিন্ন শাকের মধ্যে টমেটোগাছে শোভা পাচ্ছে ছোট-বড় কাঁচা-পাকা টমেটো। বেগুনগাছে দু-একটি বেগুনও উঁকি দিচ্ছে।
হাজী মুহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেন, ‘এখন তো মৌসুমের প্রায় শেষ সময়। তাই সবজির বাগানের শোভা কিছুটা কমে গেছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বাইরে থেকে সবজি কিনতে হয় না। প্রতি মৌসুমেই খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা করে লাভ থাকে।’
জানা যায়, আব্দুস সালাম দীর্ঘদিন আমদানী-রপ্তানীর ব্যবসা করেছেন। বর্তমানে তিনি তার উপশহর এলাকায় অবসর সময় কাটানোর খেয়াল থেকেই বাড়ির ছাদে বাগানটি গড়ে তোলেন কৃষি বিভাগের পরামর্শে।
প্রতিদিন সকাল-বিকেল বাগানে এসে গাছে পানি দেওয়াসহ পরিচর্যার কাজ করেন আব্দুস সালাম নিজেই। মাঝে মাঝে বাড়ির তত্তাবধায়ক সাহায্য করেন তাকে।
নিচ থেকে ছাদে পাইপ টানা হয়েছে বাগানে পানি দেওয়ার জন্য। ওপরে নেট টানিয়ে দেওয়া হয়েছে বাগানের সুরক্ষার জন্য। আব্দুস সালামের স্ত্রী আর এক ছেলে নিয়ে সুখের সংসার।
এ প্রসঙ্গে সিলেট কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আবুল হাশেম বলেন, ‘জনসংখ্যার চাপের কারণে ইতিমধ্যেই সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমি বিলীন হতে বসেছে। এ অবস্থায় বহুতল ভবনের ছাদে সবজি চাষকে আমরা উৎসাহ জোগাই এবং উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি।’
তিনি বলেন, বাড়ির ছাদকে ফেলে না রেখে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি ও ফলের আবাদ করা সম্ভব। এতে কীটনাশকমুক্ত ফল উৎপাদন করা সম্ভব। বাড়ির ছাদে বাগান করতে কৃষি বিভাগের ওয়েবসাইট থেকেও অনেকে জানতে পারবেন।’
-এটি