আবদুল্লাহ তামিম: প্রায় ১০৪ বছর আগে জার্মানে প্রথম মসজিদ নির্মাণ করা হয়।জার্মানের বার্লিনে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে উইনসফোর্ড অঞ্চলের মুসলিম বন্দী যোদ্ধাদের ইবাদতের জন্য ১৯১৫ সালের জুলাই মাসে নির্মিত একটি মসজিদ।
উইনসফোর্ডে নির্মিত এই মসজিদটি সেদেশের প্রথম মসজিদ হিসেবে পরিগণিত করা হয়। মুসলমানেরা সেখানে ইবাদত বন্দেগী করত।
এর আগে জার্মানের সেন্সেশন ও অ্যালিলিনিং গার্ডেন মুসলমানদের ইবাদতের জন্য মসজিদ ছিল। তবে মুসলমানের ইবাদতের জন্য ততটা উপযুক্ত ছিল না বলে জানা যায়।
জার্মানে অবস্থিত ইসলামি একটি সংস্থার বরাতে জানা যায়, ইস্তানবুলে জার্মান রাষ্ট্রদূত হানস ভন ওয়াংহেনহেম এক সাক্ষাৎকারে বার্লিনের কর্মকর্তারা জানান, তুরস্কের পঞ্চম সুলতান মুহাম্মাদ জার্মানে মুসলিম বন্দীদের জন্য মসজিদ নির্মাণ করতে প্রস্তুত ছিলেন।
জার্মানের কর্মকর্তাদের নিকটে মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনাটি অনেক আকর্ষণীয় ছিল। মসজিদ নির্মাণের আগে জার্মানের কর্তৃপক্ষ এ অঞ্চলে যুদ্ধাপরাধীদের জন্য ক্যাম্প নির্মাণ করেছিল।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারত, উত্তর আফ্রিকা ও সিরিয়ার প্রায় ৪,০০০ বন্দী এবং ফরাসি ঔপনিবেশিক দেশগুলো থেকে ১২০০০ বন্দীকে ওয়েসেনডর্ফ ক্যাম্পে রাখা হয়।
জার্মানিরা মুসলিম সৈন্যদের মিত্রশক্তির (ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং রাশিয়া) বিরুদ্ধে কাজেল লাগাতে চেয়েছিল। তাদের এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য মুসলমানদের জন্য ক্যাম্প ও মসজিদ নির্মাণ করে।
এ জন্য জার্মানের যুদ্ধ মন্ত্রণালয় ১৯১৫ সালে একটি মসজিদ নির্মাণ আদেশ দেয়। মসজিদটি ৫ সপ্তাহের মধ্যে এক হাজার ‘রিচ মার্ক’ (সেই সময়ে জার্মান মুদ্রা) খরচ করে নির্মাণ করা হয়।
মসজিদের কেন্দ্রীয় ভবনটি বহুদল আর ছাদে একটি গুম্বজ নির্মাণ করা হয়। এ ভবনে নামাজরে জন্য বিশেষ কক্ষ নির্মাণ করা হয়।
ভবনের দক্ষিণে প্রবেশদ্বার ও উত্তরে মসজিদের খতিবের জন্য কক্ষ। মৃতদের রাখার জন্য পৃথক কক্ষ নির্মাণ করা হয়। ভবনের উত্তর দিকে বর্গকারে একটি প্রাঙ্গণ নির্মাণ করা হয়। আর এ প্রাঙ্গণে একটি ঝরনাও নির্মাণ করা হয়।
মসজিদের বাইরের ও অভ্যন্তরের প্রাচীরের জন্য তেল রং ব্যবহৃত হয়। দেয়ালের পটভূমি রঙ ছিল ধূসর। এর উপর, লাল এবং ধূসর ফিতে আঁকা ছিল। নামাজখানার মেঝের জন্য পাথর ব্যবহার করা হয় এবং মাদুর দিয়ে মেঝে ঢেকে দেয়া হয়।
মসজিদের মিনারটি ২৩ মিটার উচ্চ এবং কেন্দ্রীয় গম্বুজ ব্যাস ১২ মিটার ছিল। বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের এই মসজিদে নামাজ পড়ার কথা ছিল।
মসজিদটি নির্মাণের জন্য স্পেন, ক্বাবাতুল সাখরা, অটোমান মসজিদ এবং তাজমহল সহকারে বিভিন্ন ইসলামি স্থাপত্য ব্যবহার করা হয়।
অতঃপর মসজিদটি ১৯১৫ সালের ১৩ই জুলাই (রমজান মাসে) তুরস্কের কূটনীতিক মাহমুদ মোখতার পাশার উপস্থিতিতে উদ্বোধন করা হয়।
জার্মানের প্রথম মসজিদের ইতিহাস
মসজিদটি নির্মাণ এবং মুসলমানদের আকৃষ্ট করার পর মাত্র ২০০০ মুসলমান জার্মানের হয়ে যুদ্ধ করতে সম্মতি প্রদান করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এসকল মুসলমানেরা ধীরে ধীরে নিজেদের দেশে ফিরে যায়।
এদের মধ্যে শুধুমাত্র ৯০ জন মুসলমান জার্মানে থেকে যায়। কর্তৃপক্ষের অনুমতির মাধ্যমে তারা ভিলমারসার্দাফে তাদের জীবন অবিরত করতে সক্ষম ছিল। পরবর্তীতে মুসলমানেরা ১৯২৪ সালে ভিলমারসার্দাফে মসজিদ নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেই।
ঐ সময় উইনসফোর্ড মসজিদ ব্যবহার করার জন্য কারও তেমন কোন উৎসাহ ছিল না। এজন্য ইবাদতে ইসলাম আঞ্জুমানের সদস্যরা ১৯২৭ সালে সিদ্ধান্ত নেয় যে, সেদেশের সরকারের নিকট উইনসফোর্ড মসজিদটি ১০ হাজার রিচ মার্কে বিক্রি করে উক্ত অর্থ ভিলমারসার্দাফ মসজিদ নির্মাণের কাজে লাগাবে।
১৯২৭ সালে যখন ভিলমারসার্দাফ মসজিদ নির্মাণের কাজ শেষ হয়, তখন উইনসফোর্ড মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলার জন্য নির্দেশ দেয়। এভাবে মসজিদটি নির্মাণের ১৫ বছর পর অর্থাৎ ১৯৩০ সালে তা ভেঙ্গে ফেলা হয়।
মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলার পর স্থানীয় বাসিন্দারা ঐ রোডের নাম মসজিদ রোড নামকরণ করে। এরপর থেকে উক্ত জায়গায় একটি বোর্ড স্থাপন করা হয়। বোর্ডটিতে মসজিদের বিবরণ সম্পর্কে তথ্য উল্লেখ করা হয়।
-এটি