রোকন হারুন: আমাদের সময়গুলো অতিবাহিত হয় কর্ম ও ব্যস্ততার মাঝে। দৈনন্দিনের প্রতিটি মুহুর্ত কাজের ভারে নিঃশ্বাস ফেলানোর মতো ফুরসতটুকুও যেন মেলেনা। এভাবে বিরতহীন দৌড়াদৌড়ি ও কাজের ফলে এক সময় নেমে আসে বিষাদের ছায়া। তিক্ততা ভর করে, তখন আর কিছুই ভালো লাগেনা।
এভাবে ঘরে সংসার দেখাশুনা ও সংসার গোছানোর কাজ করতে করতেও মাঝে মাঝে ঝিম ধরে যায়। ইচ্ছে করে অজানা কোন সুন্দর জায়গায় একটু ঘুরে আসি। অজানা কোন ইতিহাস ঐতিহ্য ঘুরে ঘুরে দেখি।
যতো ভালই হোক, একই কাজ বিরতিহীন করার ফলে মাঝে মাঝে অবসাদ নেমে আসে। তখন এ অনিহা ও আনমনাভাব দূর করতে পারে একটি সুন্দর স্থানে ভ্রমণ। দর্শনীয় স্থানের পদাচরণ। তাতে মন ও দেহ উৎফুল্ল হবে । ফিরে পাওয়া যাবে সেই আগের মতো নতুন উদ্যোম। বিষাদের হাসিতে ফিরে আসবে প্রাণ।
তাহলে চলুন, আজকে পরিচয় করিয়ে দিই এমন কয়েকটি সুন্দর স্থানের সঙ্গে। যেখানে ভ্রমণ করলে অনায়েসেই ভালো হয়ে যাবে মন। জানতে পারা যাবে ইতিহাস ঐতিহ্য।
লালবাগ কেল্লা: লালবাগ কেল্লা জাদুঘরে রয়েছে সুবেদার শায়েস্তা খাঁর বাসভবন এবং দরবারহল। লালবাগ কেল্লার মূল ফটক থেকে সোজা হেঁটে সামনের দিকে গেলে দেখতে পাওয়া যায় শায়েস্তা খাঁর কন্যা পরী-বিবির কবর। এই দুটি জায়গা লালবাগ কেল্লার জাদুঘর হিসেবে দর্শনার্থীদের কাছে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
জাদুঘরটিতে রয়েছে শায়েস্তা খাঁর ব্যবহৃত দৈনন্দিন জিনিষপত্র। এছাড়াও তৎকালীন রাজা ও শাসকদের ব্যবহৃত মুদ্রাও এখানে সংরক্ষিত আছে। এ মুদ্রাগুলো দেখতে বর্গাকার বা গোলাকার।১৭-১৯ শতকের রাজা বাদশাহদের কিছু অস্ত্র এবং শিলালিপিও রয়েছে এই লালবাগ কেল্লায়।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন রবিবার। রবিবার ছাড়া বাকি দিনগুলো লালবাগ কেল্লা খোলা থাকে সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৬ টা পর্যন্ত। আর শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। প্রতিটি টিকেটর মূল্য ১০ টাকা করে।
সোনারগাঁ লোকশিল্প জাদুঘর: সোনারগাঁ ছিল বাংলার প্রাচীন রাজধানী। বাংলা বা বাঙালি শিল্প-সংস্কৃতি ইতহাস বানিজ্যের মিলনমেলা ছিল এই সোনারগাঁ। এই স্থানটিতে রয়েছে বাঙালি ইতহাস এবং ঐতিহ্যের নানা নিদর্শন।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সরকারী সহায়তায় তৎকালীন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে সোনারগাঁয়ে গড়ে তোলেন বাংলাদেশ লোকজ ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এবং জাদুঘর। কারু শিল্প, জামদানী, নকশীকাঁথা, নৌকা, গ্রামীণ জীবনের প্রতিরূপ, পটচিত্র, তৈজসপত্র, যানবাহন এরকম অনেক নিদর্শন রয়েছে এই লোকশিল্প জাদুঘরে।
বন্ধুবান্ধব কিংবা পরিবার-পরিজনসহকারে ঘুরে আসতে পারেন এই লোকশিল্প জাদুঘরে। এতে করে পরপস্পর বন্ধনের নতুন এক মাত্রা সৃষ্টি হবে। সাথে সাথে জাতীয় এবং দেশজ শিল্প সম্পর্কে জানা হবে।
আহসান মঞ্জিল জাদুঘর: ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত আহসান মঞ্জিল। মূলত ঢাকার নবাব পরিবারের আবাসস্থল এবং সরকারী অফিস ছিল এই আহসান মঞ্জিল। বর্তমান এই ভবনটিকে জাদুঘর হিসেবে সাজানো হয়েছে।
বর্তমানে আহসান মঞ্জিলের মূল প্রাসাদে ২৩ টি গ্যালারি রয়েছে। তৎকালীন নবাবদের দৈনন্দিন জীবন যাপনের প্রায় সমস্ত সামগ্রী এসব গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয়ে থাকে। নবাবদের ব্যবহৃত বর্ম, তাদের ব্যবহৃত আলমারি, তৈজস, অলংকার, ফানুস, নবাবদের ডাইনিং রুম, নবাবদের ছবি এবং আরো কিছু শতবর্ষ পুরোনো সব নিদর্শন।
বৃহস্পতিবার ছাড়া বাকি দিনগুলোতে আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে ঘুরে দেখা যাবে ১০ টাকার টিকেট সংগ্রহ করে।
প্রতিটি দর্শনীয় জায়গা আমাদের জন্য আনন্দদায়ক ও রোমাঞ্চকর। পাশাপাশি শিক্ষামূলক একটি কেন্দ্রও বটে। কেননা, এসব স্থানে আসলে আমরা জানতে পারি ঐতিহ্যগত সকল সাক্ষ-বহনকারী বিষয়বস্তু। জানেতে পারি নিজ দেশের ইতিহাস, শিল্প-সংস্কৃতির সঠিক ধারণা। তাতে আমাদের জ্ঞানের পরিধিরও বিস্তৃত ঘটে।
-আরএইচ