জুনায়েদ হাবিব
চট্টগ্রাম
সোশ্যাল মিডিয়া এখন সবার কাছে জনপ্রিয় মাধ্যম। এ জগৎ অনেকের উপকারের কারণ হলেও আবার অনেককে ঠেলে দিচ্ছে ভয়ানক পথে! এ যোগাযোগ মাধ্যমটি আমদের সবারই পরিচিত।
ফেসবুকে আমরা ঘন্টার পর ঘন্টা সময়ের অপব্যবহার করছি। তবে আশার ব্যাপার হলো, এ অপব্যবহার রুখতে বিভিন্নভাবে এগিয়ে আসছে অনেক তরুণ। তারা সামাজিক নানা উদ্যোগ নিয়ে প্রেরণা সৃষ্টি করছেন সমাজে।
বলছিলাম এমন এক তরুণের কথা যার চিন্তা ধারায় থাকে সবসময় আকাশ ছোঁয়ার ইচ্ছে।
মোহাম্মদ ইমরান আহমেদ ইমু (২৫) বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটিতে অধ্যায়নরত এ শিক্ষার্থী ২০১২ সালে ফেসবুকে সিটিজি ব্লাড ব্যাংক নামক এই মানবসেবী গ্রুপটি ক্রিয়েট করেন এরপর তার বন্ধু ইমাম হোসেন, ফরহাদ মাহমুদ কাউসার, মাসুদুর রহমান রুবেল, মোহাম্মদ শোয়াইব, আলতাফ মাহমুদ জাহেদ, মোর্শেদ আলম, কে এইচ ইউসুফ, রাজু দেব, নিশি আকতার, সোহেল রানা, সূর্য দাস একে একে তার ১৩ জন বন্ধুর সহায়তায় এই গ্রুপটি চট্টগ্রামের একটি বড় পরিবার হিসেবে পরিচিতি পায়।
সিটিজি ব্লাড ব্যাংকের কাজ রক্ত সংগ্রহ ও দান করা। আর এ উপায়ে অনেকেই ইমার্জেন্সি রক্ত সংগ্রহ করছেন খুব সহজেই।
সিটিজি ব্লাড ব্যাংকের কার্যকরী সদস্য রাহাত কোরাঈশী’র কাছে এই গ্রুপে সদস্য হওয়ার কারণ জানতে চাইলে আওয়ার ইসলামকে বলেন, ২০১৩ সালে আমার এক স্বজনের জন্য খুব ইমার্জেন্সি রক্তের প্রয়োজন হয়েছিল। আমাদের গ্রাম উপজেলা সদর থেকে অনেক দূরে। তখন রাত অনুমানিক ১১ টা। যে কারণে ওই মুহূর্তে রক্ত পাওয়াটা ছিল অনেকটাই কঠিন। আমরা উপায় পাচ্ছিলাম না রক্ত কোথায় পাই এই রাতে।
তখন একজন বলল ফেসবুকে সিটিজি ব্লাড ব্যাংক গ্রুপটিতে রক্ত চেয়ে যেন পোস্ট করি। আমি দেরি না করে গ্রুপটিতে পোস্ট দেওয়ার ৪০ মিনিটের মধ্যে একজন রক্ত দিতে রাজি হন।তখন থেকেই এই গ্রুপের প্রতি ভালোবাসা।
সিটিজি ব্লাড ব্যাংকের প্রধান প্রতিষ্ঠাতা এডমিন ইমরান ইমু’র সঙ্গে এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা হয়। নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
আওয়ার ইসলাম: সিটিজি ব্ল্যাড ব্যাংক সবার কাছে পরিচিত একটি নাম। তবে এ নাম বা সংগঠনটি গড়ার পেছনের গল্পটি কী ছিল?
ইমরান ইমু: ছোটকাল থেকেই এমন কিছু একটা করার চিন্তা ভাবনা সব সময় মাথায় ঘুরপাক করতো। যেটি করলে আমাদের সমাজের অনেকটা উপকার হবে।
২০১২ সালের দিকে আমি তখন বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির ১ম বর্ষে অধ্যায়নরত ছিলাম তখন থেকে এমন একটি গ্রুপ খোলার সিদ্ধান্ত নেই। একদিন ১২ ডিসেম্বর ২০১২ সালে হঠাৎ করে এই গ্রুপটি ক্রিয়েট করি। এরপর নিজের কাছের বন্ধুদের জানাই আর তারাও আমাকে উৎসাহ দিয়ে গ্রুপটিকে এখন পর্যন্ত বহুদূর নিয়ে এসেছে আলহামদুলিল্লাহ।
প্রথমে লক্ষ্য ছিলো নিজেদের বন্ধু-বান্ধবের রক্তের গ্রুপ জেনে রাখা এবং নিজেদের ও পরিচিত প্রয়োজনের সময় গ্রুপে পোষ্টের মাধ্যমে সবার কাছে জানিয়ে দেয়া। এতে অল্প সময়ের মধ্যেই ব্লাড ম্যানেজড হতে থাকলো।
পরবর্তীতে ধীরে ধীরে রক্তের প্রয়োজনীয়তার জন্য পোষ্ট বাড়তে লাগলো। এভাবেই গ্রুপটি আস্তে আস্তে চট্টগ্রামে পরচিত হয়েছে।
আওয়ার ইসলাম: আপনাদের সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা মোট কতজন এবং এডমিন প্যানেলে কতজন আছেন?
ইমরান ইমু: আমাদের এ গ্রুপটি পরিচালিত হয় ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে। যেমন- কারো জরুরি রক্ত প্রয়োজন হয়, গ্রুপে পোস্ট করলেই ম্যানেজ হয়ে যায়। যার গ্রুপে মিল আছে সে সাড়া দেয়।
আর আমাদের গ্রুপটিতে ৩ টি স্থরে পরিচালিত হয়। ১টি এডমিন প্যানেল ১টি কার্যকরী সদস্য ও ১টি সহ কার্যকরী সদস্য।
এডমিন ২০ জন, কার্যকরী সদস্য ৪৯ জন আর সহ-কার্যকরী সদস্য ১১২ জন। আমাদের ফেসবুক গ্রুপ পরিবারে সদস্য মোট চার লক্ষ একচল্লিশ হাজার। বলা যেতে পারে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ফেসবুক গ্রুপ পরিবারের এটি।
আওয়ার ইসলাম: আপনাদের ব্লাড গ্রুপিং কর্মসূচিগুলো কিভাবে পরিচালনা করছেন? বা আপনাদের ক্যাম্পেইনগুলো কিভাবে হয়ে আসছে?
ইমরান ইমু: প্রথম দিকে আমরা নিজেদের অর্থায়নে ব্লাড গ্রুপিং ক্যাম্পেইন করতাম। সচেতনতা বৃদ্ধি ও রক্তদাতা বাড়ানোর উদ্দেশে পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানীয় সামাজিক সংগঠন থেকে উদ্যোগ নিতে থাকে এবং আমাদের সাথে যোগাযোগ করে।
আমরা তাদের ট্যাকনিক্যাল সাপোর্ট দেই। এভাবে আস্তে আস্তে ক্যাম্পেইনও বাড়তে থাকে।
আওয়ার ইসলাম: আপনাদের এই মানবসেবী সংগঠনটিতে যারা কার্যকরী সদস্য/সহ কার্যকরী সদস্য আছেন। সেখানে কাদের সংখ্য বেশি? চাকরিজীবি নাকি ছাত্র?
ইমরান ইমু: গ্রুপে যারা কাজ করছেন তারা সবাই সেচ্ছাসেবী আর সবাই নিজেদের আগ্রহে যুক্ত হয়েছেন। প্রথম থেকে ছাত্র সংখ্যা বেশি ছিল। তবে ধীরে ধীরে চাকরিজীবি মানুষ বাড়ছে।
আওয়ার ইসলাম: সিটিজি ব্লাড ব্যাংক ব্লাড ম্যানেজ/ডোনেট ছাড়া আর কি কোনো কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়?
ইমরান ইমু: আমাদের সেচ্ছাসেবী গ্রুপটি যে ব্লাড ম্যানেজিং বা ডোনেট নিয়েই কাজ করে তা নয়। আমরা সমাজে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন অবস্থানে সহযোগিতার প্রয়াস চালাচ্ছি। যেমন শীতের মৌসুমে পথচারী বা সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের শীতবস্ত্র বিতরণ।
গরিব রোগীকে সহায়তা ছাড়াও প্রাকৃতিক দূর্যোগময় পরিস্থিতিতে ও সময় মতো এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি আমরা। তাছাড়া এগুলোতে আমাদের অনেকেই সহায়তাও করেছেন।
আওয়ার ইসলাম: গ্রুপটি পরিচালনা করতে গিয়ে কোনো বাধার সম্মুখিন হতে হয়েছে কি?
ইমরান ইমু: এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সমস্যা ফেইস করতে হয়নি আমাদের আলহামদুলিল্লাহ। তবে কয়েকবার গ্রুপ হ্যাক করার চেষ্টা করা হয়েছিল তবে সফল হয়নি।
আওয়ার ইসলাম: এ পর্যন্ত কতজন রোগীকে আপনাদের গ্রুপের মাধ্যমে রক্ত ম্যানেজ করে দিয়েছেন?
ইমরান ইমু: গত ৬ বছরে আনুমানিক লক্ষাধিক মানুষ ব্লাডসহায়তা পেয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
আওয়ার ইসলাম: একটি সূত্রে জানা গেছে, আপনাদের গ্রুপটিতে ব্লাড ডোনেটের নাম করে কিছু প্রতারক মহল বিভিন্নভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
ইমরান ইমু: আমরা সিটিজি ব্লাড ব্যাংক নিয়ে নিরলসভাবে ভূমিকা রাখছি। গ্রুপের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি হওয়ায় মানুষ এ ধরনের কথা বলছে। আমরা এ ধরনের কোনো তথ্য আদৌ পাইনি। পেলে সাথে সাথেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আওয়ার ইসলাম: ধন্যবাদ আপনাকে সময় দেওয়ার জন্য।
ইমরান ইমু: আপনাকে ও ধন্যবাদ
আরআর