রোকন রাইয়ান ।।
একাদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস জাতীয় পার্টির সঙ্গে ঐক্য বেঁধেছিল গত আগস্টে। এর আগে বেশ কয়েকটি দল নিয়ে গঠিত হয়েছিল সম্মিলিত জাতীয় জোট।
মহাজোট থেকে বেরিয়ে এসে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এ জোট গঠন করলেও জোটটি আবার সংঘবদ্ধ হয় মহাজোটের সঙ্গে। আগামী নির্বাচনে মহাজোটের সঙ্গেই নির্বাচন করবে জাতীয় পার্টি তথা সম্মিলিত জাতীয় জোট।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে সম্মিলিত জাতীয় জোটে থাকা সবচেয়ে বড় দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। দলটি আগামী নির্বাচনে চূড়ান্তভাবে অন্তত ৫ আসনের দাবি জানিয়েছে।
জানা যায়, শুরুতে ১৩ আসনের দাবি নিয়ে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের কাছে গেলেও মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টির আসন সংখ্যা কমে আসায় মজলিসকেও তালিকায় কাটছাট করতে হয়।
সর্বশেষ ৫ টির জন্য লবিং করছেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। তবে ১ বা ২টি আসন তাদের দেয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ১ টি আসন দেয়া হলে সেটি কে পাবেন তা নিয়ে হচ্ছে আলোচনাও।
মনোনয়ন ফরম জমা দেয়া প্রার্থী ও তাদের আসন বিচারে এ দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন ময়মনসিংহ ৭ আসনের তরুণ প্রার্থী মুফতি আবদুল মুমিন।
মুফতি আবদুল মুমিনের পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড, এলাকায় পরিচিতি ও প্রভাব এবং এ আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী না থাকায় প্রার্থী বিবেচনায় শর্ট লিস্টে রয়েছেন তিনি। দলের অন্য প্রার্থীদের অবস্থান দৃঢ় থাকলেও আসন বিচারে পিছিয়ে পড়ছেন তারা।
মুফতি আবদুল মুমিন বাংলাদেশ খোলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরীর জয়েন্ট সেক্রেটারি। কওমি স্বীকৃতি আন্দোলনে ছাত্রদের মধ্যে যারা ভূমিকা রেখেছেন তার মধ্যে অন্যতম তিনি। রাজনীতির মাঠেও সক্রিয় কিশোর বয়স থেকেই। একসময় ছাত্র রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন।
১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিং ৭ (ত্রিশাল) আসনে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন জাতীয় পার্টির এম এ হান্নান। যুদ্ধপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন। সে কারণে তিনি আর এ আসনে নির্বাচন করতে পারছেন না।
আওয়ামী লীগ থেকে আসনটিতে একাধিক প্রার্থী থাকলেও এতটা আলোচনা নেই এবং দলটিও এ আসনে নিজেদের প্রার্থী দেয়ার ব্যাপারে বিবেচনা করছে না। শুরুতে এ আসনে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে দলের সিনিয়র কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের প্রার্থী হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি ময়মনসিং ৪ (সদর) আসন থেকে মনোনয়ন তুলেছেন।
এ দিক থেকে বিবেচনা করলে তরুণ ও ক্লিন ইমেজের মুফতি আবদুল মুমিনই বিবেচনাধীন একক প্রার্থী।
মনোনয়নের প্রত্যাশায় গত ২ মাস ধরে এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন মুফতি আবদুল মুমিন। জানা যায়, পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো হওয়ায় তিনি ব্যাপকভাবে জন সাধারণের সাড়াও পেয়েছেন।
মুফতি আবদুল মুমিনের চাচা এম এ খালেক বিএনপি থেকে ১৯৯৪ সালে এমপি নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি ইউনিয়ন ও উপজেলা চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া তার বাবা আবদুল বারেকও একজন পরিচিত রাজনীতিবিদ।
আবদুল বারেক ত্রিশালের বালিপাড়া ইউনিয়নের ১৯৯৩ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা চেয়ারম্যান ছিলেন।
জানা যায়, এসব বিচারে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতাকর্মীরাও চাচ্ছেন সম্মিলিত জোট থেকে ১ বা ২টি আসন দেয়া হলে আবদুল মুমিনকেই যেন বিবেচনা করা হয়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মুফতি আবদুল মুমিন টেলিফোনে আওয়ার ইসলামকে বলেন, চূড়ান্ত মনোনয়ন নিয়ে উৎকণ্ঠার মধ্যেই আছেন নেতারা। এখনো জানি না কয়টি আসন আমরা পাবো এবং কার আসনটি চূড়ান্ত হবে। তবে আমরা আশাবাদী জোট আমাদের যথাযোগ্য মূল্যায়নই করবে।
তিনি বলেন, শুরু থেকেই দলের নেতাকর্মীদের পুরো সাপোর্ট আমি পাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ। সে হিসেবে এলাকাতেও জোর কাজ চালাচ্ছি। মনোনয়ন পেলে জয়ের ব্যাপারে এলাকার মানুষ আন্তরিকতা নিয়ে আমার পক্ষে কাজ করতে ঐক্যবদ্ধ।
এলাকায় কী ধরনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে কাজ করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাবা ও চাচা রাজনীতি করেছেন এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে। আমরাদেরও সে শিক্ষাই তারা দিয়েছেন। জনসাধারণের সঙ্গে আমার কাজ হবে সেটিই, তাদের সঙ্গে মিলে মিশে থাকা এবং তাদের উন্নতি অগ্রগতিতে কাজ করা।
নির্বাচনী প্রতীক বিষয়ে তিনি বলেন, আমার জন্য সুবিধা হলো আমাদের দলের প্রতীক রিকশা নিয়ে নির্বাচন করা। গত ২ মাসে আমার সমর্থকগণ রিকশা মার্কার ব্যাপক প্রচার করেছেন এলাকায়। এ জন্য রিকশা প্রতীকেই নির্বাচন করতে চাই।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আরও রয়েছেন দলের নায়েবে আমির মাওলানা ইসমাঈল নূরপুরী, মাওলানা যুবায়ের আহমদ আনসারী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহম ও সহকারী মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন।
গত ১১ আগস্ট বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে নির্বাচনী ঐক্য করে। সে থেকে দলটির যৌথভাবে নির্বাচনী কাজ করছে।
‘ফেয়ার ইলেকশন না হলে দেশে গণবিষ্ফোরণ শুরু হবে’