রকিব মুহাম্মদ
আওয়ার ইসলাম
পাকিস্তানের পাঞ্জাবপ্রদেশের গুজরাট অঞ্চলের অধিবাসী নাসিমা আখতার। ৩২ বছরের সাধনায় সুঁই-সুতোয় পবিত্র কুরআন লিপিবদ্ধ করে মহান এক দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন এক পুণ্যবতী নারী।
১৯৮৭ সালের আগস্ট মাসে ৩০ বছর বয়সে এ কাজে হাত দেন তিনি। প্রত্যেক রাতের শেষাংশে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে কুরআনের আয়াত লিখতে বসতেন তিনি।
এ ছাড়া দৈনন্দিন কাজ শেষ করে জোহর ও আছরের মধ্যবর্তী অবসর সময়ে লিখতাম। পূর্ণাঙ্গ পবিত্রতা ও মনোযোগ দিয়ে প্রতিটি আয়াত লিখতেন নাসিমা আখতার।
এভাবেই ৩২ বছরের দীর্ঘ শ্রম এ সাধনার পর গত জানুয়ারিতে তার আল কুরআন লিপিবদ্ধের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন হয়। টানা ১৫ বছরের প্রায় প্রতিটি দিনই কলম দিয়ে মখমলের কাপড়ের ওপর কুরআনের আয়াত লিখে গেছেন নাসিমা।
কুরআনটির দৈর্ঘ্য ৫৬ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ৩৮ সেন্টিমিটার। এর ওজন ৫৫ কেজি।
মখমলের কাপড়ে লিখিত কুরআন শরিফটির দৈর্ঘ্য ৩০০ মিটার। ২৫ হাজার মিটার কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে এতে। এ কুরআনকে ১০ খণ্ডে ও প্রতি খণ্ডে তিন পারা করে বিন্যাস করা হয়েছে।
২৪ পৃষ্ঠা করে একটি পারা শেষ করেছেন নাসিমা। তবে শেষ পারাটি লিখতে ব্যয় হয়েছে ২৮ পৃষ্ঠা। প্রতি পৃষ্ঠায় ১৫ লাইন করে কুরআনের আয়াত রয়েছে।
তার নিজ হাতে লিপিবদ্ধ এ পবিত্র কুরআন শরিফ প্রথমে পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় ওলামা-মাশায়েখ ও আরবি ভাষাবিদদের দিয়ে যাচাই-বাছাই করানো হয়েছে।
নির্ভুল এ ঐশি গ্রন্থটি গত ২১ সেপ্টেম্বর মসজিদে নববীর প্রাঙ্গণে অবস্থিত আল কুরআন মিউজিয়ামে উপহার দিয়েছেন নাসিমা আখতার।
জীবনের শেষ বয়সে এসে অনন্য এ দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করায় দেশটির পাঞ্জাব সংসদের স্পিকার চৌধুরী পারভেজ ইলাহি প্রেসিডেন্ট পদক ‘দ্য প্রেসিডেন্স প্রাইড অব পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড’-এর জন্য তার নাম প্রস্তাব করবেন।
পাঞ্জাব সংসদের স্পিকার চৌধুরী পারভেজ ইলাহি, তার স্ত্রী ও ছেলে রাশেখ ইলাহি কুরআনের লেখিকা নাসিম আখতারের বাড়ি পরিদর্শনে যান। নাসিম আখতারকে তার এ অসামান্য অবদানের জন্য অভিনন্দন জানান।
পরে স্পিকার সাংবাদিকদের জানান যে, তিনি রাষ্ট্রপতি ডা. আরিফ আলভির সঙ্গে দেখা করে নাসিম আখতারকে ‘প্রাইড অব পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড’-এর জন্য মনোনীতদের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করার পরামর্শ দেবেন।
শুধু তা-ই নয়, তিনি নাসিম আখতারের এ অবদানের জন্য প্রেসিডেন্ট পদক লাভে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী সরদার উসমানের বুজদারেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন।
নাসিম আখতার তার এ অসামান্য কাজের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পাকিস্তান ও গুজরাটের নাম তুলে ধরছেন বলেও জানান স্পিকার।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি সৌদি আরব সরকারের কুরআন সংরক্ষণ মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। যারা পাঞ্জাবের গুজরাট শহরের অধিবাসী নাসিম আখতারের কাজটিকে স্বীকৃতি দিয়ে মসজিদে নববিস্থ মিউজিয়ামে প্রদর্শনীর জন্য স্থান দিয়েছে।
সুঁই-সুতোয় কুরআনের লেখিকা নাসিম আখতার পাঞ্জাবের স্পিকার ও তার পরিবারকে তার সাক্ষাতের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
সূত্র: ডেইলি পাকিস্তান
মদিনার মিউজিয়ামে হাতে লেখা কুরআন হাদিয়া দিলেন পাকিস্তানের নাসিমা!
আরএম/