আবদুল্লাহ তামিম: মার্কিন একতরফা নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক অবাধ বাণিজ্য আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ধরণের আচরণ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং আন্তর্জাতিক অবাধ বাণিজ্য ব্যবস্থা মাত্র কয়েকটি দেশের অন্যায় ও অবৈধ রাজনৈতিক ইচ্ছা অনিচ্ছার কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের বিশেষ প্রতিবেদক ইদ্রিস জাজায়েরি ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন একতরফা নিষেধাজ্ঞাকে বেআইনি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করে আমেরিকার এ অর্থনৈতিক যুদ্ধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ওয়াশিংটনের একতরফা আচরণ জাতিসংঘের গঠন-কাঠামো ও নিয়ম-নীতিকে প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে।
এ ছাড়া, পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরানের বিরুদ্ধে ফের মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কোনো বৈধতা নেই। কারণ ওই পরমাণু সমঝোতার প্রতি জাতিসংঘের সমর্থন ছিল এবং আমেরিকাও তাতে সই করেছিল।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের বিশেষ প্রতিবেদক ইদ্রিস জাজায়েরি মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে মানবতা বিরোধী হিসেবে উল্লেখ করে ইরানের বিরুদ্ধে যেসব সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে তা উঠিয়ে নিতে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান যাতে ইরান খাদ্য, কৃষিপণ্য, ওষুধ, চিকিৎসা সামগ্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানি করতে পারে।
জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী কেবল নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে কোনো দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যেতে পারে। এ অবস্থায় আমেরিকার একতরফা পদক্ষেপ জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সকল আইনের পরিপন্থী।
পরমাণু সমঝোতা একটি বহুপক্ষীয় আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং এর প্রতি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সমর্থন রয়েছে। ফলে এককভাবে এটিকে বাতিল করার ক্ষমতা কোনো দেশের নেই।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকার বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং এর পেছনে মার্কিন ইহুদিবাদী লবিং গ্রুপের ইন্ধন রয়েছে।
গ্রিস বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক বিষয়ক অধ্যাপক ইয়ানিস ওয়ারেস বলেছেন, “বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক অবাধ বাণিজ্য আইনের লঙ্ঘন এবং তা সম্পূর্ণ অনৈতিক।” তিনি বলেন, “ইরানসহ বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা যত দ্রুত সম্ভব উঠিয়ে নিতে হবে।”
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, আমেরিকার আন্তর্জাতিক আইন বিরোধী পদক্ষেপ মোকাবেলার সক্ষমতা ইরানের রয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে ইরান চেষ্টার কোনো ত্রুটি করবে না।
এরই অংশ হিসেবে হেগের অবস্থিত আন্তর্জাতিক আদালতে গত মাসে ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপকে কেন্দ্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ইরান।
যাইহোক, নিষেধাজ্ঞাকে কখনই কোনো জাতির বিরুদ্ধে আগ্রাসনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। আমেরিকা ইরানের সঙ্গে যে আচরণ করছে তা স্পষ্ট ইরানি জাতির অধিকার লঙ্ঘন।
আমেরিকার এ বেআইনি নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য কেবল ইরান নয়। আমরা লক্ষ্য করছি আমেরিকা বহু কেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থায়ও আঘাত হানার চেষ্টা করছে যাতে বিশ্বে তাদের একক আধিপত্য বজায় থাকে।
সূত্র: আল-জাজিরা
আরো পড়ুন–
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে অংশ নিয়েছে ৬৩ হাজারের বেশি রুশ সেনা
প্রিয়নবির স্মৃতি বিজড়িত মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা
মসজিদে নববীর অদূরে ঐতিহাসিক ৩ মসজিদ
ব্যবসার হিসাব নিকাশ এখন হাতের মুঠোয়- ক্লিক
এটি/আওয়ার ইসলাম