সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

তাখাসসুস নিয়ে জরুরি কিছু কথা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা আশরাফ উদ্দীন খান
আলেম, গবেষক

সম্প্রতি কওমী মাদরাসার দাওরায়ে হাদীসের ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে। হাইয়াতুল উলইয়ার অধীনে দ্বিতীয়বারের মতো দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষায় সারা দেশের মোট এক হাজার ৩৮টি কওমি মাদরাসার মোট ২০ হাজার ৭৪৯ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছিলেন।

দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত করার পরে, কেউ খেদমত শুরু করেন আবার কেউ ‘তাখাসসুস’ বা গবেষণাধর্মী শিক্ষায় আত্মনিয়োগ করে থাকেন।

বর্তমানে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাখাসসুস এর বিষয়টি বেশ আগ্রহ ও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। দেখা যায় দাওরায়ে হাদীস শেষ করার পরে অধিকাংশ শিক্ষার্থী কোন একটি বিষয়ে তাখাসসুধর্মী শিক্ষায় আত্মনিয়োগ করে থাকেন, আবার তাখাসসুসধর্মী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও এখন আগের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশী।

এটি ইতিবাচক বিষয়, যার মাধ্যমে শিক্ষার প্রতি আমাদের অধিক আগ্রহই প্রকাশ পাচ্ছে। দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত যে শিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে তাকে ইসলামী বিভিন্ন শাস্ত্রের বুনিয়াদি শিক্ষা হিসাবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

এই শিক্ষা সঠিকভাবে শেষ করার পরে একজন শিক্ষার্থীর মধ্যে উলুমে-ইসলামীর বিভিন্ন শাস্ত্রে মোটামুটি একটি স্তরের জ্ঞান অর্জিত হয়ে থাকে, এবং এর মাধ্যমে ছাত্রদের মধ্যে উচ্চতর শিক্ষার আগ্রহ সৃষ্টি হয়ে থাকে।

শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মনে এই ধারণার সৃষ্টি হয় যে, মানুষের আসল অবস্থা হচ্ছে অজ্ঞতা, তাই জ্ঞান অর্জন করা ছাড়া মানুষ অজ্ঞই থেকে যায়। তাই জ্ঞান অর্জনের জন্যে তাকে অবশ্যই অধ্যায়ন করতে হবে, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জনের ধারা অবশ্যই তাকে অব্যাহত রাখতে হবে।

দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত যে সকল বিষয় মাদরাসাসমূহে পড়ানো হয়ে থাকে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে- তাফসিস, হাদীস, ফিকাহ, উসুলে ফিকাহ, আকিদাহ, আরবি ভাষা ও সাহিত্য, ইসলামী ইতিহাস, ইসলামী অর্থনীতি, ইসলামী রাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি।

দাওরাহ পর্যন্ত এসব বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান অর্জন করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, আর দাওরার পরে এখান থেকে কোন একটি বিষয় নির্বাচন করে সেই বিষয়ে উচ্চরত জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থা রয়েছে।

সাধারণ অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যে, আমাদের দেশের অধিকাংশ ক্ষেত্রে আরবী সাহিত্য, ফিকাহ, তাফসির ও হাদীস এই কয়েকটি বিষয়ে তাখাসসুস ধর্মী শিক্ষা ধারা চালু হয়েছে।

তাখাসসুসের জরুরত

তাখাসসুসধর্মী শিক্ষা যেহেতু বর্তমানে প্রচলিত, তাই সেই বাস্তবতার আলোকে দাবী করা যায়, তাখাসসুসের জরুরত অনুভব করেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের শিক্ষা চালু করা হয়েছে।

তাছাড়া দাওরায়ে হাদীসের আগ পর্যন্ত যে সকল কিতাব পড়ানো হয়ে থাকে, তা নিজ নিজ বিষয়ের প্রাথমিক কিতাব হিসাবে বিবেচিত, ফলে সেই সকল কিতাব থেকে ছাত্রদের মাঝে প্রাথমিক পর্যায়ের ধারণাই তৈরি হয়ে থাকে।

দাওরায়ে হাদীসের আগ পর্যন্ত শিক্ষার উদ্দেশ্য থাকে প্রচলিত ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের অধিকাংশ শাস্ত্রের সাথে ছাত্রদের পরিচিত করে দেওয়া, তাদেরক কোন একটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসাবে তৈরি করা উদ্দেশ্য থাকে না।

তাই এই স্তর অতিক্রম করার পরে এবং এক পর্যায়ের প্রাথমিক ধারণা তৈরি হয়ে যাওয়ার পরে, জরুরত দেখা দেয় কোন একটি বিশেষ বিষয় নিয়ে গবেষণাধর্মী শিক্ষা অর্জন করা। তাখাসসুসের মাধ্যমে সেটাই করা হয়ে থাকে।

ইলমের বিভিন্ন শাস্ত্রের মধ্যে বিভাজন থাকার পরেও, কোন শাস্ত্র অন্য আরেকটি শাস্ত্র থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ও পৃথক নয়, বরং একটি বিষয়ের সাথে আরেকটি বিষয়ের গভীর সম্পর্ক দেখা যায়, যেমন তাফসির শাস্ত্রের সাথে হাদীস শাস্ত্রের সম্পর্ক, তেমনি ফিকাহ শাস্ত্রের জন্যে তাফসিফ ও হাদীস সম্পর্কেও ধারণা অর্জন করতে হয়। তাই শুধুমাত্র একটি বিষয় নিয়ে নিজের অধ্যায়ন সীমাবদ্ধ করার কোন সুযোগ নেই।

আবার অন্যদিকে জ্ঞানের একেকটি শাখা এত বিস্তৃত হয়ে পরেছে যে, জ্ঞানের কোন একটি ছোট বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করতেও মানুষকে অনেক সময়, শ্রম ব্যয় করতে হয়ে থাকে।

যেমন উদাহরণ হিসাবে ইসলামী ইতিহাস শাস্ত্র তাখাসসুসের একটি বিষয়, ইসলামী ইতিহাসের মধ্যে আবার বিভিন্ন ভাবে ভাগ করা হয়েছে, যেমন নববী যুগ, খিলাফায়ে রাশেদার যুগ, উমাইয়ার যুগ, আব্বাসী যুগ, এর মধ্যে আবার আরো ছোট ছোট বিষয়ে অধ্যায়ন করে হচ্ছে যেমন খিলাফায়ে রাশেদার শাসন ব্যবস্থা, মুদ্রা ব্যবস্থা, প্রশাসনিক ব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়েও তাখাসসুস ধর্মী শিক্ষা অর্জন করা হচ্ছে।

এর কারণ এটাই যে বিস্তারিত ধারণা অর্জন করার জন্যে বিষয়ের পরিধি সংক্ষিপ্ত করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। এই কারণে জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারে একটি মূলনীতি হচ্ছে ‘সকল বিষয়ে কিছু কিছু জানা, আর কোন একটি বিষয়ে বিস্তারিত জানা’, অর্থাৎ যেহেতু একটি বিষয় অন্য আরেকটি বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত, আবার সঠিক ও উপযুক্ত সচেতনতার জন্যে যুগের প্রচলিত সকল বিষয়েই স্বাভাবিক ও সাধারণ ধারণা রাখা জরুরি, আবার সেই সাথে কোন একটি বিষয়ে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করাও জরুরি, তাই তাখাসসুসধর্মী শিক্ষা আমাদের জন্যে অতি জরুরি।

মানুষের মর্যাদা সেই বিষয়েই হয়ে থাকে যে বিষয়ে তিনি অন্যদেরকে ধারণা ও অভিজ্ঞতা দান করতে পারেন, আর এই জন্যে তাখাসসুসধর্মী শিক্ষার বিকল্প নেই।

তাখাসসুস নির্ধারণ

এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন শিক্ষার্থীর জন্যে কোন বিষয়ে তাখাসসুস উপযুক্ত তা তাকেই বিচক্ষণতার সাথে নির্ধারণ করতে হয়। আমাদের সামনে বিদ্যমান প্রচলিত তাখাসসুসধর্মী শিক্ষা নিয়ে চিন্তা করলে দেখা যায় যে, একেক বিষয়ে তাখাসসুসের জন্যের শিক্ষার্থীর মধ্যে একেক ধরণের যোগ্যতা ও শর্ত পূরণ করতে হয়।

যে কোন তাখাসসুসের জন্যে প্রথম শর্ত হচ্ছে সেই বিষয়ে ‘অধিক আগ্রহ’ থাকা। মানুষ যে বিষয়ে আগ্রহী সেই বিষয়ে অতি সহজেই উন্নতি অর্জন করতে পারে। তাই তাখাসসুস নির্বাচনের সময় অবশ্যই নিজের আগ্রহের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

কারো প্রশ্ন হতে পারে নিজের আগ্রহ ছাড়া কি কেউ কোন বিষয়ে তাখাসসুস করতে চাই? বাস্তবতার আলোকে দেখা যায় যে, পারিপার্শিক বিভিন্ন কারণে কোন সময় আগ্রহ ছাড়াই তাখাসসুস শুরু করছে।

আবার শুধুমাত্র আগ্রহ থাকলেই চলে না, বরং একেকটি শাস্ত্রের জন্যে ভিন্ন ভিন্ন কিছু শর্তের দরকার পরে, যেমন আরবী ভাষার তাখাসসুসের জন্যে ভাষার রুচি ও রস-বোধ থাকতে হয়, আবার হাদীস শাস্ত্রের জন্যে অধিক মুখস্ত শক্তি ব্যবহার করতে হয়, ফিকাহ শাস্ত্রের জন্যে উসুল ও আধুনিক বিষয়ের অনেক কিছু সম্পর্কে ধারণার দরকার পরে, তাফসিরের জন্যে কুরআনের হিফজ দরকার পরতে পারে।

এভাবে দেখা যায় একেকটি বিষয়ে একেকটি শর্ত ও যোগ্যতার দরকার পরে। কাজেই তাখাসসুসের আগে শিক্ষার্থীকে সেই সকল শর্ত ও যোগ্যতা নিজের মধ্যে আছে কি না সেটা নির্ধারণ করা জরুরি।

এর বিপরীতে যেটা এই ক্ষেত্রে হতে পারে সেটা এই যে, নির্ধারিত শর্ত ও যোগ্যতার দিকে খেয়াল না করে, সামনে যে বিষয়ের তাখাসসুস বিদ্যমান আছে সেই বিষয়েই অনেকে নিজেকে যুক্ত করে ফেলেন।

এখানে তাখাসসুস নির্বাচনের মাপকাঠি হিসাবে না নিজের আগ্রহের দিকে খেয়াল করা হয়, না সেই জন্যে জরুরি শর্তের দিকে খেয়াল করা হয়, বরং এখানে সামনে বিদ্যমান থাকার কারণেই কোন একটি বিষয় গ্রহণ করা হয়েছে। এটা সঠিক ও উপকারী সিদ্ধান্ত হতে পারে না।

তাখাসসুসের বিষয় নির্বাচন করার সময় সেই বিষয়ে কোন কিছু যুক্ত করার যোগ্যতা আছে কি না সেই দিকেও খেয়াল করা দরকার। অসংখ্য জ্ঞান পিপাসু, অনুসন্ধানী, গবেষকের খণ্ড খণ্ড ফসলের মাধ্যমে জ্ঞানের এই বিশাল জগত গড়ে উঠেছে।

শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে আমাদের হাতে পুর্ববর্তী প্রজন্মের জ্ঞান-অভিজ্ঞতা আমাদের হাতে এসেছে, আবার আমাদের জ্ঞান-অভিজ্ঞতা পরবর্তী প্রজন্মের হাতে পৌঁছে যায়। মোটামুটিভাবে যে কোন বিষয় অধ্যায়নের মাধ্যমে মানুষ সেই বিষয়ে কিছু তথ্য ও ধারণা অর্জন করতে পারে, কিন্তু সেই বিষয়ে নতুন কোন ধারণা বা তথ্য সকলেই যোগ করতে পারে না।

তাখাসসুস নির্বাচনের আগে অবশ্যই এটা খেয়াল করা দরকার, এই বিষয়ে আমার ‘ইযাফাহ’ করার যোগ্যতা কতটুকু আছে। কোন একটি বিষয়ে আমাদের অর্জিত জ্ঞান ও বিদ্যমান আগ্রহ ও সম্ভাব্য গবেষণার ধারণার দিকে খেয়াল করেই আমরা এটা অনুমান করতে পারি।

আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখ করার দরকার, অনেকেই একটি তাখাসসুস শেষ করার পরে আরেকটি তাখাসসুসে যুক্ত হয়ে যান, দেখা যায় অনেকে আরবী ভাষার তাখাসসুসের পরে হাদীস, তারপর তাফসির, তারপর আবার ফিকাহ নিয়ে তাখাসসুস করে থাকেন। এই ভাবে অব্যাহত তাখাসসুসের কারণে তাখাসসুসের মূল উদ্দেশ্যও হারিয়ে যায়।

কারণ তাখাসসুসের উদ্দেশ্য হচ্ছে কোন একটি বিষয়ে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করা। তাই কেউ যদি হাদীস শাস্ত্রকে নিজের তাখাসসুস হিসাবে নির্বাচন করেন, তাহলে তাকে এই শাস্ত্র নিয়ে শিক্ষা-গবেষণা অব্যাহত রাখা জরুরি এবং নিজের তাখাসসুসের মধ্যে তিনি নিজেই আরো অনেক তাখাসসুস সৃষ্টি করতে পারেন, উদাহরণ হিসাবে হাদীসের ভাষ্য বা ‘মতন’ থেকে তাখাসসুস হিসাবে বিভিন্ন বিষয় নির্বাচন করা যেতে পারে, যেমন কিয়ামতের আলামত বিষয়ক হাদীস, জান্নাত-জাহান্নাম বিষয়ক হাদীস, শেষ জামানায় মুসলিম উম্মার ব্যাপারে বর্ণিত হাদীস।

আপনার মোবাইল সাজান ইসলামের আলোয়, ইনস্টল করুন ইসলামী যিন্দেগী

অন্যদিকে হাদীসের বর্ননা বিষয়ক বিভিন্ন দিক থেকে তাখাসসুস নির্ধারণ করা যেতে পারে, যেমন উদাহরণ হিসাবে বুখারি শরিফের বর্ণণা, জারাহ-তা’দিল, হাদীসের তায়া’রুদ, ইলাল ইত্যাদি।

কাজেই মৌলিক তাখাসসুস হিসাবে একাধিক বিষয় নির্বাচন না করা একটি জরুরি বিষয়। চিন্তা-ভাবনার পরে একটি বিষয় নির্বাচন করে সেই বিষয়েই অধিক সময়, অধ্যায়ন, গবেষণা, আলোচনা অব্যাহত রাখা অধিক উপকারী।

তাখাসসুসের অধ্যায়ন পদ্ধতি

সাধারণ শিক্ষা পদ্ধতি আর তাখাসসুসের শিক্ষা পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট। সাধারণ শিক্ষার সময় তাফসির বিষয় দুটি কিতাব পড়ানো হয়। তাফসিরের তাখাসসুসের সময় যদি তাফসিরের কয়েকটি কিতাবই পড়ানো হয়, তাহলে সেখানে তাখাসসুসের মূল উদ্দেশ্য হাসিল হয় না।

মনে করি কোন তাফসিরের তাখাসসুসে যদি তাফসিরে ইবনে কাসির, তাফসিরে রুহুল মায়ানি, তাফসিরে বাইযাবী ইত্যাদি কিতাব পড়ানো হয়, তাহলে এখানে তাখাসসুসের আলাদা কোন ফায়দাহ দেখা যায় না, কারণ দাওরায়ে হাদীসের পরে একজন যোগ্য ছাত্র নিজের ব্যক্তিগত মুতালা বা অধ্যায়নের মাধ্যমেই এই সকল কিতাব থেকে উপকৃত হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।

তাই এখানে দরকার ছিল তাফসিরের মূলনীতি বা উসুলে তাফসির নিয়ে আলোচনা করা ও সেই উসুল ও মানহাজের বাস্তব উদাহরণ হিসাবে শিক্ষার্থীদের সামনে তাফসিরের বিভিন্ন কিতাব পেশ করা।

কোন একজন মুফাসসিরের মানহাজ ও উসুলের সাথে পরিচিত করতে ঠিক যতটুকু তার তাফসির কিতাব দরসে শিক্ষকের মাধ্যমে অধ্যায়ন করা দরকার ঠিক ততটুকু অধ্যায়ন করার পরে ছাত্রদের নিজেদের উপর ছেড়ে দেওয়া সেই কিতাবের অবশিষ্ট অংশ অধ্যায়ন করা।

তাখাসসুসের সময় আমাদের স্বরণে রাখা দরকার, এখানে কিতাব পাঠ করা বা কিতাব পড়ানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়, বরং এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে বিষয়, ও সেই বিষয়ে গভীর ও বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন।

যেহেতু তাখাসসুসের সময় আমাদের উদ্দেশ্য থাকে কোন একটি বিষয়ে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করা, তাই নির্ধারিত সময়ে পাঠ্য বিষয়ের সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের সামনে সেই বিষয়ের ‘উম্মাহাতুল কিতাব’ বা মৌলিক কিতাবসমূহ থেকে সময় অনুযায়ী একটি তালিকা নির্ধারণ করা এবং ছাত্রদের নির্ধারিত সময়ে সেই কিতাবসমূহ অবশ্যই অধ্যায়ন করার পরিবেশ দান করা।

অধ্যায়ন থেকে অধিক ফায়েদা অর্জন করার জন্যে তাদের সেই কিতাবের মূল বিষয় বা উসুল সম্পর্কে কোনো গবেষণা বা রচনা পেশ করার বিষয়ের দিকে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।

আরেকটি বিষয় খেয়াল করা দরকার যে, তাখাসসুসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গবেষণার মানসিকতা তৈরি করা জরুরি। এই উদ্দেশ্যে, প্রতিটি তাখাসসুসের শেষে একটি নির্ধারিত মান ও পরিমাণ নির্ধারণ করে শিক্ষার্থীদেরকে একটি গবেষণা পত্র তৈরি করতে হবে।

একজন শিক্ষার্থী যখন– উদাহরণ হিসাবে ৫০ টি কিতাব অধ্যায়ন করার পরে নিজে একটি কিতাব বা গবেষণা পত্র তৈরি করে তখন সেই গবেষণাপত্রটি তার নিজের হয়ে যায়, যার অর্থ সেই শিক্ষার্থী ৫০ টি কিতাবের ধারণা ও তথ্যকে নিজের মধ্যে আনতে পেরেছে।

অধ্যায়নের মাধ্যমে মানুষ নতুন ধারণা অর্জন করে, কিন্তু সেই ধারণাসমূহকে নিজের ধারণা হিসাবে গঠন করার জন্যে তাকে তার নিজের ভাষায় ও পদ্ধতিতে অবশ্যই প্রকাশ করতে হবে। এবং প্রত্যেকেই যখন আরেক জনের ধারণা পেশ করে তখন সেই ধারণার সাথে নিজের কিছু ধারণাও যুক্ত করে থাকেন, ফলে ধারণার মধ্যে বিস্তৃতি ঘটে।

দেখা যায় কোন একটি ধারণা আগের কোন গবেষকের হাতে তেমন ভাবে স্পষ্ট হয় নি, নতুন আরকেজনের গবেষণা ও অধ্যায়নের মাধ্যমে সেই ধারণার মধ্যে স্পষ্টতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই ভাবে জ্ঞানের মধ্যে গভীরতা সৃষ্টি হতে থাকে।

তাখাসসুসকে জীবন ও বাস্তবমুখী করা, অর্থাৎ কুরআন, হাদীস, ইসলামী ইতিহাস, সাহিত্যের বিভিন্ন দিক থেকে এমন কোন সমস্যার সমাধান নিয়ে গবেষণা করা অধিক উপকারী যা উম্মতের বাস্তব ও দৈনন্দিন জীবনের সাথে জড়িত।

উদাহরণ হিসাবে ‘দারিদ্র বিমোচনে যাকাত ব্যবস্থা’ এই বিষয়ে যে সকল গবেষণা হয়েছে সেই সকল গবেষণা জীবন ও বাস্তবতামুখী, অর্থাৎ এমন একটি সমস্যা নিয়ে আমরা এখানে আলোচনা করছি যার সাথে আমরা দৈনন্দিন জীবনে জড়িত।

এর মাধ্যমে বইয়ের জ্ঞান বইয়ের বাইরের জগতের মধ্যে চলে যায়। আর জ্ঞান দিয়ে যখন জীবন পরিচালিত হয় তখন সেই জ্ঞানের উপকার আমাদের সামনে প্রকাশিত হয়ে উঠে স্পষ্ট ভাবে।

এতে কোন সন্দেহ নেই যে, সঠিকভাবে তাখাসসুসের বিষয় নির্বাচন করার পরে, তাতে যদি উপযুক্ত সময়, শ্রম ও গবেষণা করা হয়, এবং সেই গবেষণা পরিচালনা করার মত প্রতিষ্ঠান ও তত্ত্বাবাধায়ক থাকে, তাহলে অবশ্যই সেই বিষয়ে প্রতিটি শিক্ষার্থী অনেক নতুন ধারণা ও গভীরতা পেশ করতে পারবেন, আর এখানেই তাখাসসুসধর্মী শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য নিহিত।

‘অল্পকিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকিগুলোতে তাখাচ্ছুছের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে’

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ