আওয়ার ইসলাম : থানা, চেকপোস্টসহ পুলিশের স্থাপনাগুলোতে নাশকতা ও হামলার আশঙ্কা আছে- গোয়েন্দাদের এমন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে ১৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছে সদরদপ্তর।
সম্প্রতি অ্যাডিশনাল আইজি, র্যাব মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, পুলিশ কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনাটি পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সদরদপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স) মো. মনিরুজ্জামান।
নির্দেশনার চিঠিতে বলা হয়, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, পুলিশের স্থাপনার ওপর নাশকতা ও হামলার আশঙ্কা রয়েছে। সম্ভাব্য নাশকতা রোধকল্পে পুলিশের সদরদপ্তরসহ দেশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য নির্দেশ দেয়া হলো।
নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর, ডিএমপি, এসবি, সিআইডি, র্যাব সদরদপ্তরসহ সব স্থাপনায় স্ক্যান করে গাড়ি প্রবেশ ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রবেশের পূর্বে সেই গাড়ি ও ব্যক্তিগত সামগ্রী তল্লাশি করতে হবে। থানাসহ স্থাপনাগুলোতে সাহায্যকারী, দর্শনার্থীদের নাম-ঠিকানা ও তাদের আগমনের উদ্দেশ্য রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদরদপ্তর, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, অস্ত্রাগারে ও পুলিশ লাইনের প্রবেশপথে নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র পুলিশ ও তল্লাশির জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে হবে।
ক্যাম্প ও ফোর্সের নিরাপত্তা বিবেচনায় নিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। থানা বা স্থাপনার মেইন গেট ঝুঁকিপূর্ণ থাকলে সেগুলোকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করে নির্মাণ অথবা মেরামত করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ পুলিশ স্থাপনাগুলোর সীমানা প্রাচীর উঁচু করতে হবে বা কাঁটাতারের বেড়া দিতে হবে। রাতে থানা ও পুলিশ ফাঁড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত লাইট লাগাতে হবে।
থানাসহ পুলিশ ইউনিটসমূহে মেইন গেট বন্ধ রেখে পকেট গেট খোলা রাখতে হবে। কেউ পায়ে হেঁটে বা গাড়িতে প্রবেশ করতে চাইলে তার নাম-পরিচয় নিয়ে তল্লাশি করে প্রবেশ করাতে হবে। নম্বরবিহীন গাড়ি ও মোটরসাইকেল পুলিশ স্থাপনাসমূহে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।
বরাদ্দ অনুযায়ী ইউনিট প্রধানদের ভেহিকল সার্চিং মিরর, হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টর, টর্চ, হ্যালোজেন লাইট ও সিকিউরিটি লাইট নিশ্চিত করতে হবে। সব ইউনিট প্রধানকে নিরাপত্তার বিষয়ে নিয়মিত ফোর্সেস ব্রিফিং ও দায়িত্ব পালনে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
অফিস প্রধানরা সময়ে-অসময়ে আকস্মিকভাবে তার অধীন ইউনিটসমূহ পরিদর্শন করবেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন। ব্যক্তিগত দেহরক্ষী, অধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা পেশাগত জ্ঞান, অস্ত্র চালানোর সক্ষমতা এবং নিরাপত্তা সচেতনতা সম্পর্কে ব্যক্তিগতভাবে নিশ্চিত হবেন।
সব অফিসার ও ফোর্সকে মাঝে মাঝে অস্ত্র খোলা, জোড়া লাগানো, অস্ত্রের নিরাপত্তা, অস্ত্র চালানোর কৌশল রপ্ত করবেন। ইউনিট প্রধানরা বিষয়টি নিশ্চিত করবেন ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করবেন। বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটে অস্ত্রাগারের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইউনিট প্রধানরা পিআরবিতে বর্ণিত বিধিবিধানের কোনও ব্যত্যয় ব্যতীত পরিপূর্ণভাবে পালন করবেন।
পুলিশ সুপার ও তার ওপরের কর্মকর্তারা বিভিন্ন পুলিশ ইউনিট নির্ধারিত বা আকস্মিক পরিদর্শনে গেলে পুলিশ ইউনিটসমূহের নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই পরিদর্শন করবেন এবং পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করবেন। এসিআর মূল্যায়নকারী বা প্রতিস্বাক্ষরকারী কর্মকর্তারা মূল্যায়নাধীন পুলিশ কর্মকর্তার নিরাপত্তা সচেতনতার বিষয়টি বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে উল্লেখ করবেন।
পুলিশ ইউনিটগুলোর নির্দেশাবলী প্রতিপালনের ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যরা পেশাগত কারণে কঠোর ও বিনয়ী হবেন এবং কোনও ক্রমেই যাতে অহেতুক হয়রানি না হয়, ইউনিট প্রধানরা তা নিশ্চিত করবেন। এক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশ পুলিশ সদস্য ও স্থাপনা সংক্রান্ত নিরাপত্তা নির্দেশিকা’ অনুসরণ করতে করতে হবে।
নিরাপত্তা নির্দেশিকায় সন্ত্রাসী হামলার সময় দ্রুত ‘কুইক রেসপন্স টিম’ পাঠানো, ২৪ ঘণ্টার স্ট্রাইকিং টিম প্রস্তুত রাখা, ব্যাকআপ সাপোর্ট (এপিবিএন, র্যাব, বিজিবি) ইত্যাদি প্রস্তুত রাখার কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় বাসা ও মেস ভাড়া দেয়ার আগে আগতদের যথাযথভাবে পরিচয় নিশ্চিত, বাস-রেলস্টেশন, স্থল, বিমান, নৌ-বন্দরে নিয়ন্ত্রণ ও আকস্মিক তল্লাশির ব্যবস্থা, স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে বিকাশের মতো মোবাইল মানি অ্যাকাউন্ট পরিচালনাকারী এজেন্টদের পরিচয় ও কার্যকর যাচাই-বাছাই এবং নজরদারির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ডিএমপি।
আরও পড়ুন : আগামী সপ্তাহে শপথ নিচ্ছেন এরদোগান