মৌলভীবাজার শহর রক্ষা পায়নি আগাম বন্যার কবল থেকে। গতকাল শনিবার রাত প্রায় সাড়ে ১২টায় শহরের বারইকোণাতে মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধ প্রায় ৩০ ফুট স্থান ভেঙে মৌলভীবাজার শহরের পশ্চিমাঞ্চল প্লাবিত করে।
রাতের বেলা আকস্মিক এই ভাঙনের ফলে কয়েক শ ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে। ঘরের মূল্যবান মালামাল পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে পড়েছে। অনেকের বাসার আঙ্গিনায় থাকা গাড়ি পানিতে ডুবে অকেজো হয়ে পড়েছে। সিলেট সড়কে শতাধিক দোকান এখন তিন থেকে চার ফুট পানিতে নিমজ্জিত। গভীর রাতে বাঁধ ভাঙায় কোনো দোকানিই মালামাল সরাতে পারেননি।
জেলা শহরের চারটি সরকারি খাদ্য গুদামে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় প্রায় আড়াই কোটি টাকার চাল ও গম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে জেলা খাদ্য বিভাগ।
ভাঙা বাঁধ দিয়ে দ্রুতবেগে পানি প্রবেশ করে মৌলভীবাজার পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, বারইকোণা, পূর্বরড়হাট, পশ্চিম বড়হাট, বড়কাপন, পূর্বধরকাপন, পশ্চিম ধরকাপন, শেখেরগাও, দ্বারক, খিদুর, গোবিন্দশ্রী, পূর্বহিলালপুরসহ ৬, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সকল পাড়া মহল্লার বাসাবাড়িতে পানি উঠেছে।
ওইসব ওয়ার্ডের চলাচলের সকল রাস্তা তিন থেকে চার ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার পানি পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ড প্লাবিত করে নীচের দিকে গড়িয়ে মোস্তফাপুর ইউনিয়নের একাংশের হিলালপুর, ঘড়োয়া, বাহারমর্দন, সম্পাশি, ভুজবল ও কনকপুর ইউনিয়নের শাহবন্দর, সম্পাসী, দুর্লভপুর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। ওইসব এলাকায় পানি বাড়ছে।
ধরকাপন গ্রামের এস এম উমেদ আলী বলেন, 'আমাদের বাড়ির ভিটা বেশ উচুঁ, তারপরও পানি উঠান ডুবিয়ে ফেলেছে। আরেকটু বাড়লেই ঘরে ঢুকবে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সকল পথে পানি। আমরা পানিবন্দি হয়ে পড়েছি।'
পূর্বহিলালপুরের সালেহ এলাহী কুটি বলেন, 'রাতে বাঁধ ভেঙে গেছে জেনেই বৃদ্ধ মাকে নিরাপদ স্থানে এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে রাখি। আমি বাড়িতে হিমশিম খাচ্ছি। পানি উঠান ডুবিয়ে এখন ঘরে উঠে যাচ্ছে। গরু, ছাগল, হাঁস মোরগ নিয়ে মহাবিপদে আছি। এদিকে বিদ্যুৎও নাই। মোবাইলের চার্জ ফুরিয়ে এসেছে। কারো সঙ্গে যোগাযোগ করে সাহায্য চাইবারও উপায় নাই।'
মৌলভীবাজার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল হোসাইন খান বলেন, 'বারইকোণার যে স্থানটির বাঁধ ভেঙেছে, সেই বাঁধের ওপর দিয়ে পৌরসভার পিচ রাস্তা রয়েছে। এই স্থানটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল না। আমরা এদিকে লক্ষ্যই করিনি। কীভাবে হঠাৎ বাঁধটি ভেঙে গেল বুঝে উঠতে পারছি না।
ভাঙন দিয়ে পানি দ্রুতবেগে ঢুকছে। এই পানি বিভিন্ন ড্রেন দিয়ে শহরের মূল পশ্চিমবাজার পর্যন্ত আসবে। পশ্চিমবাজারের ব্যবসায়ীদের নীচু স্থানে রাখা মালামাল উপরে সরিয়ে রাখাটা ভালো।'
বন্যার পানিতে জেলা শহরের অবস্থিত খাদ্য বিভাগের চারটি সরকারী খাদ্য গুদামে পানি ঢুকেছে। মৌলভীবাজার উপজেলা পরিষদ অফিসের কাছে দুইটি গুদাম ও সিলেট রোডের পাশের দুই গুদাম। জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মনোজ কান্তি দাশ চৌধুরী বলেন, 'চারটি গুদামে এক হাজার ৫৬৮ মেট্রিকটন চাল ও ৪২৪ টন গম মজুদ রয়েছে।
মজুদকৃত এই চাল ও গমের মূল্য প্রায় ৯ কোটি টাকা। গুদামে যে উচ্চতায় পানি ঢুকছে তাতে চারটি লেয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। চার লেয়ারে প্রায় ৫৫০ মেট্রিকটন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা হবে।
খেলার নামে শুরু হলো এ কোন খেলা!
এসএস