মুমিনুল ইসলাম: উজানে আবারও বৃষ্টিপাত হওয়ায় মৌলভীবাজার শহরের কাছে চাঁদনীঘাটে মনু নদীর পানি বিপদসীমার ১৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মনু ও ধলাই নদীর ২০টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মনু প্রতিরক্ষা বাঁধ চুইয়ে বন্যার পানি শহরে প্রবেশ করছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন শহরবাসী।
জেলায় বন্যা পরিস্থিতির ক্রমে অবনতি হওয়ায় বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এম সাইফুর রহমান সড়ক দিয়ে সব রকম যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
মনু ও ধলাই নদীর ২০টি স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে বন্যার পানি প্রবেশ করে বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে বাড়ি ঘরসহ রাস্তাঘাট। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে দুই লক্ষাধিক মানুষ। অনেক স্থানে বন্যার পানির তোড়ে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। অনেকে বিশুদ্ধ পানিসহ খাদ্য সংকটে ভুগছেন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইতোমধ্যে শহরে সতর্কতামূলক মাইকিং করা হয়েছে। বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছেন অনেকেই। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মূল্যবান কাগজপত্র নিরাপদ স্থানে নিয়ে রাখা হয়েছে।
বন্যার্তদের উদ্ধার ও বাঁধ রক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি সেনাবাহিনী বন্যাদুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, মনু ও ধলাইর ২০টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ চুইয়ে পানি এসে বাঁধ ভেঙেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে মনু নদীর শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ চুইয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করে শহর তলিয়ে যেতে পারে।
রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সবশেষ শুক্রবার (১৫ জুন) রাত ৯টায় মনু নদীর পানি চাঁদনীঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১৪৬ সেন্টিমিটার ও রাত দেড়টার দিকে ১৫০ সেন্টিমিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, রাজনগর উপজেলার কদমহাটা এলাকায় মনু নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় কুলাউড়া ও মৌলভীবাজার সড়ক তলিয়ে গেছে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শহর রক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করেছে সিলেট থেকে আসা সেনাবাহিনীর একটি বিশেষজ্ঞ টিম। শনিবার সকাল থেকে শহর রক্ষা বাঁধে কাজ করবে একজন মেজরের নেতৃত্বে ৬০ সদস্যের সেনাবাহিনীর একটি দল।’
তিনি আরও বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টরা বাঁধ রক্ষায় দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। শহরের সাইফুর রহমান সড়ক এবং কনকপুর এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পৌরসভা বালির বস্তা ফেলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হচ্ছে।’