সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


শবে বরাতের ফযীলত ও ইবাদত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি মনির হোসাইন সুজাতপুরী

বছরে পাঁচটি পূণ্যময় রজনীর মধ্যে শবে বরাত অন্যতম একটি। শবে বরাতের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে মুক্তির রজনী। এ রাতে নিহিত রয়েছে মুসলমানদের মুক্তি ও কল্যাণের বিভিন্ন উপকরণ।

তাই এ রাতকে বলা হয়েছে লাইলাতুল বারাআত বা মুক্তির রজনী। এ রাতের এবাদত বন্দেগির মাধ্যমে মুসলমানদের গুনাহ মাফ হয়ে থাকে এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। হাদীসে এরাতের বহু কল্যাণ ও ফযীলতের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। ৎ

হযরত মুআয ইবনে জাবাল রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি কারিম সা বলেছেন, “আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে (শবে বরাতে) সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে মাফ করে দেন।” (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং- ৫৬৬৫)।

হযরত আলি ইবনে আবি তালিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে কারিম সা. বলেছেন যখন শাবানের ১৫তম রাতের আগমন ঘটবে তখন তোমরা সে রাতের কিয়াম করবে তথা রাত জেগে নামাজ পড়বে, আর দিনে রোযা রাখবে।

নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা সে দিন সুর্যাস্তের পর থেকে প্রথম আসমানে বিশেষ তাজাল্লী বর্ষণ করেন এবং ইরশাদ করেন  কেউ আছ কি আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনাকারী ? তাকে আমি ক্ষমা করে দিব। কেউ আছ কি জীবিকা প্রার্থনাকারী ? তাকে আমি জীবিকা দান করব। কেউ আছ কি মুসিবতগ্রস্ত ? তাকে আমি মুক্তি প্রদান করব। কেউ এমন আছ কি ? কেউ এমন আছ কি ?

এভাবে সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ পাক তার বান্দাদের কে ডাকতে থাকেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ১৩৮৮)। হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন  এক রাতে আমি রাসুল সা. কে বিছানায় পেলাম না। তাই (খোজার উদ্দেশ্যে) বের হলাম। তখন দেখতে পেলাম, তিনি জান্নাতুল বাকিতে আছেন।

আমাকে দেখে তিনি বলে উঠলেন, তুমি কি এই আশঙ্কা করছ যে, আল্লাহ এবং তার রাসুল তোমার প্রতি অবিচার করেছেন ? আমি বললাম হে আল্লাহর রাসুল ! আমি ধারণা করেছিলাম, আপনি আপনার অন্য কোন স্ত্রীর ঘরে তাশরীফ নিয়েছেন।

তখন রাসুল সা বলেন, শাবানের ১৫ তারিখ রাতে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং “বনু কালব” গোত্রের ভেড়া সমূহের পশমের চেয়েও অধিক সংখ্যক লোককে মাফ করে দেন। (সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং- ৭৪৪ ও সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং- ১৩৮৯)।

পবিত্র শবে বরাতের বরকতময় রজনীকে কেন্দ্র করে সাত প্রকারের আমল করার ব্যাপারে বুজুর্গগণ উৎসাহ প্রদান করেছেন (১) বেশি বেশি নফল নামায পড়া। (২) বেশি করে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা। (৩) বেশি বেশি ইস্তিগফার করা অর্থাৎ গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। (৪) বেশি বেশি দান ছাদকা করা। (৫) কবর যিয়ারত করা (৬) মৃত ব্যক্তিদের কবরে ছাওয়াব পাঠানোর ব্যবস্থা করা। (৭) পরের দিন অর্থাৎ ১৫ই শাবান দিবসের রোযা রাখা।

এ রাতে নফল নামাযের ধরা-বাধা কোন নিয়ম নেই। যত রাকাত ইচ্ছা এবং যে কোন সুরাহ দিয়ে ইচ্ছা অন্যান্য নামাযের মতই পড়া যাবে।

তাই আসুন, এ বরকতময় রজনীতে আমরা উপরে উল্লেখিত আমলগুলো পালন করতে যতœবাান হই এবং ক্ষমা প্রাপ্তদের মধ্যে শামিল হতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করি। এ বরকতময় রজনীতে যে ব্যক্তি ক্ষমা পাবে না, তার চেয়ে হতভাগা আর কে হতে পারে ?

আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে পবিত্র শবে বরাতের সকল ফযীলত ও বারাকাত হাসিল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: সাবেক মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিয়া বিননুরিয়া আল-ইসলামিয়া ও জামিয়া আবু হুরাইরা রা. মাদরাসা, মিরপুর-১০, ঢাকা।

আরো পড়ুন- শবে বরাতের ৬ কাজ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ