মুমিনুল ইসলাম: হেঁচকি বেশীরভাগ সময়েই হঠাৎ করে ঘটে এবং খুব দ্রুত আপনাআপনি চলে যায়। কিন্তু মাঝেমধ্যে এটি একটি বিরক্তকর এবং গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করে।
দেহতত্ত্বের বিশ্লেষণ মতে, হেঁচকি তখনই আসে যখন ডায়াফ্রাম(বুক এবং পেটের মধ্যবর্তী স্থানের পর্দা বা পাতলা ঝিল্লি) হঠাৎ অনিচ্ছাকৃতভাবে সঙ্কুচিত হয় এবং একই সময়ে কণ্ঠস্বর বক্স সংকুচিত এবং কণ্ঠস্বরের ভাঁজ রুদ্ধ হয়ে কার্যকরভাবে বায়ু প্রবাহকে অবরুদ্ধ করে।
অর্থাৎ ডায়াফ্রাম ও শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণকারী মাংসপেশী উত্তেজিত হয় এবং পেশী ঘন ঘন দ্রুত সংকোচনের সময় হঠাৎ বাতাস টেনে নেয়, তখন শ্বাসরন্ধ্রে খুব জোরে শব্দ করে বন্ধ হয় ফলে একপ্রকার উচ্চ শব্দের সৃষ্টি হয়, সেটাই হেঁচকি।
আজ আপনাদের জন্য হেঁচকি থেকে রেহাই পাওয়ার কিছু কার্যকরী উপায় শেয়ার করছি।
আপনার কান বন্ধ রাখুন
আপনার আঙ্গুল দিয়ে আপনার কান ২০-৩০ সেকেন্ডের জন্য আটকিয়ে রাখুন বা মাথার নিচে কানের লতির পিছনের নরম স্থানগুলো চেপে ধরুন। এটি ভ্যাগাস স্নায়ুর মাধ্যমে ‘আরাম’ অনুভূত হবে, যা ডায়াফ্রামের সাথে সংযোগ স্থাপন করে।
এক চুমুকে পানি পান করা
একটি স্ট্রো দিয়ে পানি পান করলে স্নায়ু শিথিল থাকে। পানি দিয়ে কুলকুচা করলেও একই প্রভাব পেতে পারেন। এই পদ্ধতিটি সাধারণত বেশ কয়েকবার ঢোক খেলার পর হেঁচকি বন্ধ করতে সহায়তা করে, কিন্তু মাঝেমধ্যে এটি বেশ কয়েকবার চেষ্টা করার প্রয়োজন হয়।
কান বন্ধ করে পানি পান করা
একটি স্ট্রো দিয়ে পানি পান করার সময় আপনার কান কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রাখুন। আপনি যখন আপনার আঙ্গুলগুলো কান বন্ধ করার জন্য ছোঁয়াবেন তখন প্রকৃতপক্ষে আপনি অবিচলভাবে পান করার সময় ভ্যাগাস স্নায়ুর উপর চাপ দিচ্ছেন।
একটি কাগজের ব্যাগের মধ্যে শ্বাস নেওয়া
এই পদ্ধতি রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের আংশিক চাপ বৃদ্ধি পায় এবং আরো অক্সিজেন আনতে ডায়াফ্রামের সাথে আরও গভীর সংযোগ স্থাপন করে। আপনি যদি মাথা ঝিমঝিম অনুভব করেন তাহলে তা বন্ধ করুন।
মধু এবং লেবু
লেবু চাবান বা উষ্ণ জলের সাথে মধু খান তাহলে ভ্যাগাস স্নায়ু উদ্দীপিত হয়ে হেঁচকি থেকে একটি বিরতি দিবে। ভ্যাগাস স্নায়ু আপনার মস্তিষ্ক থেকে পেট পর্যন্ত চলাচল করে। গবেষকেরা বিশ্বাস করেন যে, এই স্নায়ুতে জ্বালা হেঁচকির কারণ হতে পারে, তাই আপনি এই সহজ কাজটি করার চেষ্টা করতে পারেন যাতে হেঁচকি বিলীন হয়ে যায়।
আকুপাংচার চেষ্টা করুন
আকুপাংচার বা একিউপ্রেসর হেঁচকি দূর করার কার্যকর চিকিৎসা হতে পারে। এটি স্নায়ুকে উদ্দীপিত বা জ্বালাতন করতে পারে যা হেঁচকির জন্য দায়ী। কিছু মানুষ এই পদ্ধতি ব্যবহার করে তাদের দীর্ঘমেয়াদী হেঁচকি সমাধান করেছেন।
এক চামচ মিষ্টান্ন
এক চামচ চিনি বা পিনাট বাটার আপনার হেঁচকি বন্ধ করতে সাহায্য করবে। চিবানোর গতিবিধি এবং জিহ্বার চলার ধরণের কারণে আপনার পেটের শ্বাসের গতি পরিবর্তিত হয় যা পাক খুলে দেয় এবং হেঁচকি উপেক্ষা করে।
আপনার জিহ্বা বের করুন-এটি আপনার কাছে বিস্ময়কর মনে হতে পারে, কিন্তু হেঁচকি দূর করার জন্য খুবই উপকারী।
পেন্সিল পদ্ধতি
আপনার মুখে অনুভূতিকভাবে একটি পেন্সিল স্থাপন করে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করুন এবং একটি গ্লাস থেকে পানি চুমুক দেওয়ার চেষ্টা করুন। আপনার মুখ থেকে পেন্সিলটি পড়ে যেতে দিবেন না। এই পদ্ধতি কিছুটা কঠিন হতে পারে কিন্তু এটি হেঁচকি বন্ধ করার একটি ভালো উপায়।
দ্রুত শ্বাস নেওয়া এবং ধীরে ধীরে শ্বাসত্যাগ করা
এই কৌশলটি প্রয়োগ করে দেখতে পারেন, আপনাকে যথাসম্ভব দ্রুত শ্বাস নিতে হবে। এখন ৩০ সেকেন্ডের জন্য ধীরে ধীরে শ্বাসত্যাগ করুন। এই পদ্ধতিটি আপনার হেঁচকি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত করতে থাকুন।
হেঁচকি একটি রহস্যময় অবস্থা, আমরা অনেকেই অসংখ্যবার এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছি। এই প্রতিকারগুলো আপনাকে সাহায্য করবে, কিন্তু অত্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হেঁচকির একটি অন্তর্নিহিত কারণ থাকতে পারে এবং আপনাকে একজন ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হতে পারে।
আরো পড়ুন- সকালে নাস্তায় শরীররে জন্য আদর্শ খাবার কোনটি?