রকিব মুহাম্মাদ
আওয়ার ইসলাম
হাজার হাজার ফিলিস্তিনি গাজা থেকে ইসরাইলের সীমান্তের দিকে মিছিল করে যাওয়ার পর গতকাল শুক্রবার তাদের ওপর ইসরাইলি সৈন্যরা গুলি চালিয়েছে। এতে ১৬ জন ফিলিস্তিন নিহত ও ১৪শ’ আহত হয়েছে।ইসরাইলের বিরুদ্ধে ছয় সপ্তাহব্যাপী এক প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনিরা এই বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে।
এদিকে, ফিলিস্তিনের গাজার বিভিন্ন দিক দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনি তৈরি করেছে ইসরাইলি সেনারা। কার্যত গাজা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। ড্রোন ব্যবহার করে কাঁদানে গ্যাস ফেলা হচ্ছে বিক্ষোভকারীদের ওপর। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি সীমান্তে এসে জড়ো হয়েছে। উত্তেজিত এসব মানুষ আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি। যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুসালেমে স্থানান্তরের প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সীমান্তের কাছে ওই বড় ধরনের বিক্ষোভ চলাকালে ১৬ ফিলিস্তিনী নিহত ও আরো কয়েকশ আহত হয়েছে। ২০১৪ সালে ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধের পর এটাই একদিনে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরাইলি সেনারা এ পর্যন্ত মোট ৮শ’র বেশি গাজাবাসীকে গুলি করেছে। এদিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, যারা সেনার লক্ষ্য করে ইটপাটকেল, বোমা ও জ্বলন্ত চাকা ছুঁড়ে মেরেছে তাদের লক্ষ্য করেই শুধু গুলি চালানো হয়েছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী আরো অভিযোগ করে যে ফিলিস্তিনিরা সীমান্ত বেড়া কেটে ফেলে এর ক্ষতি করে এবং গাজা ভূখন্ড অবরুদ্ধ করে রাখে।
এছাড়াও বিক্ষোভকারীরা ইসরাইলে অনুপ্রবেশ করে সেনাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে চেষ্টা চালায়। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা জানায়, বিক্ষোভকারীরা সেনাদের প্রতি কোন হুমকি ছিল না। সম্পূর্ণ বিনা উস্কানিতে তাদের ওপর গুলি চালানো হয়।
বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোয় মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইসরাইলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কয়েকজন আহত বিক্ষোভকারী জানান, কেউ কেউ সেনাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়েছিল, এটা ঠিক। কিন্তু সেনারা নির্বিচারে তাদের ওপর গুলি চালায়। গাজায় তারা চরম দারিদ্রের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়ে যাচ্ছে। তাই তাদের হারাবার কিছু নেই। সুস্থ হলেই তারা আবার বিক্ষোভ করবে।
এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ মহাসচিব এন্টোনিও গুতেরেস এই সহিংসতার ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে ইসরাইল তাদের এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে।
সেনাবাহিনী দাবি করেছে, নিহত ১৬ জনের অর্ধেকের বেশি চরমপন্থী দলের সদস্য। ইসলামী চরমপন্থি দল হামাস শাসিত গাজায় ২০০৮ সাল থেকে উভয়পক্ষের সংঘাত চলছে। হামাস জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে পাঁচজন তাদের সশস্ত্র শাখার সদস্য।
ইসরাইল এক দশক ধরে গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছে। হামাসকে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যেই তারা এ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে দাবি করছে। কিন্তু এই দুই পক্ষের মাঝে পড়ে সেখানকার ২০ লাখ বাসিন্দা অত্যন্ত দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
[embed][/embed]