আওয়ার ইসলাম : রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কালবৈশাখীর হানায় বৈদ্যুতিক তারে ঝড়িয়ে এবং শিলাবৃষ্টিতে কমপক্ষে সাতজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এছাড়া শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ফসলহানির পাশাপাশি ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় কালবৈশাখী ঝড়ের এই তাণ্ডব চলে।
রংপুর : প্রথম কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রংপুরে। জেলার দুই উপজেলায় ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে প্রাণহানির পাশপাশি ঘরবাড়ি ও ফলসের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ঝড়ে বিদ্যুতের তার স্পৃষ্ট হয়ে শুক্রবার দুপুরে জেলার গঙ্গাচরা ও বদরগঞ্জ উপজেলায় দু’জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করলেও তাৎক্ষণিক নাম-পরিচয় জানাতে পারেনি।
দিনাজপুর: জেলার পার্বতীপুরে দুপুরে শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। এতে সৈয়দ আলী (৫৫) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। শিলার আঘাতে আহত হয়েছেন শতাধিক নারী-পুরুষ। তাঁদের কয়েকজনকে উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। নিহত সৈয়দ আলীর বাড়ি উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়নের চৈতাপাড়া গ্রামে।
শিলার আঘাতে বাড়িঘরসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বোরো ধানের ক্ষতি না হলেও সবজি খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রায়হান আলী জানান, শিলাবৃষ্টির পর হাসপাতালে এসে ২০ জনের মতো চিকিৎসা নিয়েছেন। অধিকাংশ নারী-পুরুষের মাথা ফেটে গেছে শিলার আঘাতে।
পার্বতীপুর উপজেলা ত্রাণ কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম শিলাবৃষ্টিতে একজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পার্বতীপুরে ১০ ইউনিয়ন ও পৌরসভায় শিলাবৃষ্টি আঘাত হেনেছে। পার্বতীপুরের ইউএনও তরফদার মাহমুদুর রহমান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দ্রুত করার জন্য বলা হয়েছে।
মাগুরা : মাগুরায় বিকাল ৫টার দিকে হঠাৎ ঝড়ো বৃষ্টিতে বড় বড় আকারে শিলা পড়তে শুরু করে। এ সময় সদর উপজেলার ডহরসিংড়া গ্রামের আকরাম হোসেন (৩৫) ক্ষেতে কাজ করা অবস্থায় বৃহদাকার শিলা বৃষ্টির আঘাতে গুরুতর আহত হন। পরে এলাকাবাসী খবর পেয়ে তাকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
যশোর: যশোরের অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ গ্রামে কালবৈশাখী ঝড়ে বিদ্যুতের ছিঁড়ে পড়া তারে জড়িয়ে লাইজু খাতুন (১৯) নামে এক কলেজছাত্রী মারা গেছেন। এসময় নওয়াপাড়া গ্রামের ফাতেমা বেগম (৪০) ও প্রেমবাগ গ্রামের কলেজছাত্রী ঐশী খাতুন (১৯) আহত হয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত লাইজু খাতুন যশোর আদর্শ ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। আহত ঐশীও একই কলেজের ছাত্রী। আহত ফাতেমা বেগম নওয়াপাড়া গ্রামের নিজাম উদ্দীনের স্ত্রী।
অভয়নগরের প্রেমবাগ ইউনিয়নের মেম্বর সৈয়দ শওকত হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পাবনা : পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় উপজেলার লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের গৃহবধূ জামিলা বেগম (৫০) বাড়ির পাশের লিচুবাগানে ডালপালা কুড়াতে গিয়ে শিলার আঘাতে মারা যান। স্থানীয় ইউপি সদস্য ইসরাইল হোসেন তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও নাটোরসহ রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের প্রায় সবক’টি জেলায় আঘাত হানে কালবৈশাখী ঝড়। এতে বেশ কয়েকজন আহতসহ ফসল ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ঈশ্বরদী: সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে পাবনার ঈশ্বরদীতে শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় উপজেলার লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের এক গৃহবধূ জামিলা বেগম (৫০) বাড়ির পাশের লিচুবাগানে ডালপালা কুড়াতে গিয়েছিলেন। তখন শিলার আঘাতে মারা যান তিনি। পরে স্বজনেরা গিয়ে তাঁর লাশ উদ্ধার করেন। ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ইসরাইল হোসেন তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
লক্ষ্মীকুণ্ডা ছাড়াও উপজেলার শাহপরী ইউনিয়নে ব্যাপক আকারে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে উভয় ইউনিয়নের লিচুবাগানের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
লালমনিরহাট: জেলায় সকালে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। এতে জেলার ৩৩৭ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি এবং ছোট ও মাঝারি প্রায় এক হাজার গাছপালা ভেঙে গেছে। জেলা কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন ছিল।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিধুভূষণ রায় শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, সর্বশেষ প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্যে জেলায় ৩৩৭ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আগামী শনি ও রোববারের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ জানা যাবে।
কুড়িগ্রাম: সকালে জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে শিলাবৃষ্টিতে ফসল ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শিলার আঘাতে কয়েক শ ঘরবাড়ির টিনের চালা ফুটো হয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, শিলাবৃষ্টিতে বোরো ফসলের পাশাপাশি পাট, ভুট্টা, করলা, পটলসহ বিভিন্ন সবজি খেত অনেকাংশে নষ্ট হয়ে গেছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আম, লিচু এবং সবজি খেতের। শিলাবৃষ্টির সময় অনেক বড় আকারের শিলা পড়ে। কেউ কেউ জানান, এত বড় আকারের শিলা তাঁরা আগে কখনো দেখেননি।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুর রশিদ বলেন, ‘আমার চাকরিজীবনে এত ব্যাপক শিলাবৃষ্টি কখনো দেখিনি। শিলাবৃষ্টিতে উপজেলার মোট চার হাজার হেক্টর কৃষিজমির ক্ষতি হয়েছে। বোরো ধানের তেমন ক্ষতি না হলেও আম, লিচু এবং বিভিন্ন শবজি খেতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।