আতাউর রহমান খসরু
গত ১২ মার্চ সোমবার চট্টগ্রামের মঈনুল ইসলাম হাটহাজারীতে অনুষ্ঠিত আল-হাইয়াতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া-এর বৈঠক ও তাতে গৃহীত সিদ্ধান্ত স্থগিত করতে সংস্থার চেয়ারম্যান আল্লামা আহমদ শফী চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাক ব্যতীত অন্য ৫ বোর্ড।
গত ১৮ মার্চ ইস্যু হওয়া চিঠিতে ৫ বোর্ডের পক্ষে স্বাক্ষর করেছেন, মাওলানা আবদুল হালীম বুখারী, মহাসচিব, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ; মুফতি রুহুল আমীন, চেয়ারম্যান, বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়্যাহ বাংলাদেশ (গহরডাঙ্গা বোর্ড); মুফতি আরশাদ রহমানী, চেয়ারম্যান, তানযীমুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়্যাহ বাংলাদেশ; মাওলানা আব্দুল বশীর, মহাসচিব, আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম সিলেট; মুফতি মোহাম্মদ আলী, মহাসচিব জাতীয় দীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ।
চিঠিতে গত ১৮ তারিখে ঢাকার বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারে ৫ বোর্ডের অনুষ্ঠিত বৈঠকের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তাদের আপারগতা প্রকাশ সত্ত্বেও হাটহাজারী মাদরাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠককে তারা হাইয়াতুল উলয়ার বৈঠক মনে করতে পারছেন না।
সুতরাং তারা উক্ত বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাতিল করত স্থগিত করা ৪টি মাদরাসার পরীক্ষা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন।
৫ বোর্ডের পাঠানো চিঠি নিয়ে ইতিমধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে বেফাক নেতৃবৃন্দের মধ্যে। তবে তারা এখনি মিডিয়ায় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হন নি। প্রতিবেদক একাধিক বেফাক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা সবাই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
তারা বলেছেন, যেহেতু চিঠি হাইয়াতুল উলয়ার চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো হয়েছে তাই তিনি কোনো সিদ্ধান্ত দেয়ার আগে তারা কোনো মন্তব্য করবেন না।
তারা অভিযোগ করে বলেন, ৫ বোর্ড অপারগতা জানানোর যে কথা প্রচার করছে তা আংশিক সত্য। কারণ তারা অনুষ্ঠানিকভাবে তা জানান নি। কোনো এক বোর্ডের মহাসচিব শনিবার বিকালে (১০ মার্চ) ফোন করে বলেছেন তারা যাবেন না। তখন বৈঠকের সব আয়োজন শেষ। এ অবস্থায় কী করে বৈঠক স্থগিত করা হয়।
তারা আরও বলেন, ‘আল্লামা আশরাফ আলী তাদেরকে বৈঠকে অংশগ্রহণের অনুরোধ জানালেও তারা সে অনুরোধ রাখেন নি।’
৫ বোর্ডের অন্যতম আজাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম, সিলেট-এর প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক আওয়ার ইসলামকে জানিয়েছেন চিঠি পাঠানোর পর তারা এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো সাড়া পান নি।
তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি হাইয়াতুল উলয়ার চেয়ারম্যান আমাদের দাবির যথার্থতা উপলব্ধি করবেন এবং এ বিষয়ে সুন্দর কোনো সমাধানে যাওয়া সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন বীরবিক্রমের সঙ্গে বৈঠক সম্পন্ন করেছেন হাইআতুল উলয়াভূক্ত ৫ বোর্ডের নেতৃবৃন্দ।
সেখানে তারা হাইআতুল উলয়ার কমিটিতে বেফাক বোর্ডের বাইরে অন্যবোর্ড থেকে একজন কো চেয়ারম্যান দেয়া, হাইআতুল উলয়ার বৈঠকে ৫ বোর্ডের নেতা বা প্রতিনিধি অনুপস্থিত থাকলে কোরাম পূর্ণ না হওয়া, পাঁচবোর্ডের জন্য মহাসচিব পদ তৈরি করা এবং মাদরাসাগুলো যে কোনো বোর্ডে চাইলে যেতে পারে এ স্বাধীনতা থাকা ইত্যাদি দাবি তুলে ধরেন।
১২ মার্চের বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাতিল এবং ৪টি মাদরাসার পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দানে সামরিক সচিবের হস্তক্ষেপ দাবি করেন।
কিন্তু এ নিয়ে অনেক বেফাক নেতার বক্তব্য, আগের মিটিংগুলোতে সিদ্ধান্তের পর পুনরায় প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিবের কাছে গিয়ে নিজেদের দাবি জানানো উচিত হয়নি। নিজেদের মধ্যে কোনো সমস্যা থাকলে সেটা মিটিংয়েই সেরে ফেলতে হবে। কিন্তু বৈঠকে উপস্থিত না হয়ে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করা বেমানান।
প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিবের সঙ্গে আলেমদের বৈঠক; সমস্যা সমাধানের আশ্বাস