আওয়ার ইসলাম:নগদ টাকা ছাপতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বছরে খরচ হয় ৪৪৭ কোটি টাকা। আর ছাপানো টাকা পরিবহন ও ছাপানোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে ব্যয় হয় আরো তিন কোটি টাকা।
এই হিসাব তুলে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নগদ টাকার পেছনেই শুধু তাদের খরচ হয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা। তবে নগদ টাকার পেছনে মোট যে খরচ হয়, এই ৪৫০ কোটি টাকা তার মাত্র ৫ শতাংশ।
বাকি ৯৫ শতাংশ খরচ হয় নগদ অর্থ লেনদেনে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, করপোরেট প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, সব মিলিয়ে নগদ অর্থ লেনদেনে গত অর্থবছরে বাংলাদেশের খরচ হয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা, যাকে খরচ না বলে ‘অপচয়’ বলা যেতে পারে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নগদ অর্থ লেনদেন কমিয়ে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারে মনোযোগ দিয়েছে। তাতে ওই সব দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে।
আমাদের পাশের দেশ ভারতও নগদ অর্থ লেনদেনের পরিবর্তে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে অর্থ লেনদেনে নাগরিকদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। এমন পরিস্থিতিতে নগদ অর্থের লেনদেন ও ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে লেনদেনের সার্বিক চিত্র সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে একটি প্রতিবেদন চেয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়।
ছয় কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি স্টাডি দল এসংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।
২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে নোট ও কয়েন ছাপানো, পরিবহন ও সংশ্লিষ্ট জনবল ব্যয় বাবদ বাংলাদেশ ব্যাংক খরচ করেছে ৩৩৬ কোটি টাকা, আগের অর্থবছর এর পরিমাণ ছিল ৩৮৯ কোটি টাকা। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে এ বাবদ খরচ ছিল ৪৪২ কোটি টাকা, ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে খরচ হয় ৩৭০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৭০টি দেশের ২০১১ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত পেমেন্ট কার্ড ব্যবহার এবং ব্যক্তির ভোগের তথ্য বিশ্লেষণ করে মুডি সম্প্রতি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
তাতে বলা হয়েছে, প্রতিটি দেশেই কার্ডের ব্যবহার তাদের মোট দেশজ আয়কে ধনাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান রেখেছে। অর্থনীতির ধরন অনুযায়ী, এই প্রভাবের মাত্রা পরিবর্তনশীল, কার্ডের ব্যবহার ১ শতাংশ বাড়লে জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে উন্নয়নশীল দেশে ০.০২ শতাংশ এবং উন্নত দেশে ০.০৪ শতাংশ অবদান রাখে।
প্রতিবেদনের তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে ১০ কোটিরও বেশি নিয়মিত ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এর সঙ্গে ১০ টাকার হিসাব রয়েছে দেড় কোটি। এর বাইরে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবধারীর সংখ্যা পাঁচ কোটিরও বেশি। এনজিও ও মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকসংখ্যা আড়াই কোটি।
বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়লেও পেমেন্ট কার্ডের সরবরাহ ও লেনদেনের ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক পদ্ধতি ব্যবহারে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি।