শায়খ আহমাদুল্লাহ
দাঈ, পশ্চিম দাম্মাম ইসলামিক স্টোর সৌদি
বর্তমান সিরিয়ার প্রাচীন ও ঐতিহাসিক নাম হলো শাম। বিভিন্ন হাদিসে শাম সম্পর্কিত যেসব বর্ণনা পাওয়া যায় সে শামের সীমানা অবশ্য আজকের সিরিয়া থেকে কিছুটা বিস্তৃত ছিল। সিরিয়া, ফিলিস্তিন, জর্ডান এবং লেবানন নিয়ে তখনকার শাম গঠিত ছিল। তবে বর্তমান সিরিয়া প্রাচীন শামের প্রধান ও সর্ববৃহৎ অংশ হওয়ায় সিরিয়াকেই শাম বলা হয়।
শামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, পৃথিবীর বেশিরভাগ নবী-রাসুল এ অঞ্চলেই আগমন করেছেন এবং এখানেই কেয়ামতের দিন মানুষ সমবেত হবে। এছাড়াও রাসুলুল্লাহ সা. আল্লাহর কাছ থেকে প্রাপ্ত ওহির আলোকে শাম বা সিরিয়া সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তার কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
১. মুয়াবিয়া রা. বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি নবী সা. কে বলতে শুনেছি, ‘আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা আল্লাহর দ্বীনের ওপর অটল থাকবে। তাদের যারা অপমান করতে চাইবে অথবা তাদের বিরোধিতা করবে, তারা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। এমনকি কেয়ামত আসা পর্যন্ত তারা এ অবস্থার ওপর থাকবে।’
উমাইর ইবনে হানি রা. মালিক ইবনে ইউখামিরের বরাত দিয়ে বলেন, মু’আজ রা. বলেছেন, ওই দলটি সিরিয়ায় অবস্থান করবে। মুয়াবিয়া বলেন, মালিক রা. এর ধারণা যে, ওই দলটি সিরিয়ায় অবস্থান করবে বলে মু’আজ রা. বলছেন। (বোখারি : ৩৬৪১)। তাবরানির বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বয়ং বলেছেন যে, তারা হবে সিরিয়াবাসী।
২. ইবনু উমার রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা. বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের শামে (সিরিয়া) ও ইয়ামেনে বরকত দান করুন। লোকেরা বলল, আমাদের নজদেও। তিনি পুনরায় বললেন, হে আল্লাহ! আমাদের শাম দেশে ও ইয়ামেনে বরকত দান করুন। লোকেরা আবারও বলল, আমাদের নজদেও। তখন তিনি বললেন, সেখানে তো রয়েছে ভূমিকম্প ও ফেতনা-ফ্যাসাদ; আর শয়তানের শিং সেখান থেকেই বের হবে (তার উত্থান ঘটবে)’। (বোখারি : ১০৩৭)।
৩. আবদুল্লাহ ইবনু হাওয়ালা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘হে ইবনে হাওয়ালা তুমি যখন দেখতে পাবে যে, খেলাফত পবিত্র ভূমিতে অবতরণ করেছে (বিভিন্ন বর্ণনার আলোকে হাদিস বিশারদদের মন্তব্য পবিত্র ভূমি বলতে শাম বা সিরিয়াকে বোঝানো হয়েছে) তখন মনে করবে যে কেয়ামত-পূর্ববর্তী ভূমিকম্প এবং ঐতিহাসিক বিপর্যয় ও বড় বড় ঘটনাবলি প্রকাশের সময় নিকটবর্তী হয়ে গেছে। আমার এ দুই হাত তোমার মাথার যত কাছাকাছি, তখন কেয়ামত তার চেয়েও নিকটবর্তী হয়ে যাবে।’ (মুসনাদে আহমাদ : ২২৪৮৭, আবু দাউদ : ২৫৩৫)।
৪. মুয়াবিয়া ইবনু কুররা রা. থেকে তার বাবার সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যখন সিরিয়াবাসী খারাপ হয়ে যাবে তখন তোমাদের (মুসলমানদের) মাঝে আর কোনো কল্যাণ থাকবে না। তবে আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল সব সময়ই সাহায্যপ্রাপ্ত (বিজয়ী) থাকবে। যেসব লোক তাদের অপমানিত করতে চায় তারা কেয়ামাত পর্যন্ত তাদের কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। (তিরমিজি : ২১৯২)।
৫. আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যখন বড় বড় যুদ্ধ সংঘটিত হবে, তখন আল্লাহ তায়ালা দামেস্ক থেকে মাওয়ালিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সেনাবাহিনী পাঠাবেন। তারা হবে সমগ্র আরবে সর্বাধিক দক্ষ অশ্বারোহী এবং উন্নততর সমরাস্ত্রে সজ্জিত। আল্লাহ তায়ালা তাদের দ্বারা দ্বীন ইসলামের সাহায্য করবেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৪০৯০)। ‘মাওয়ালি’ একাধিক অর্থবিশিষ্ট শব্দ। অনেকের মতে, এখানে মাওয়ালি বলতে প্রাচীন মুসলিমদের হাতে ইসলাম গ্রহণকারী অমুসলিম বংশোদ্ভূত মুসলিমদের বুঝানো হয়েছে।
বাকি আলোচনা শুনতে ভিডিও দেখুন...
[embed][/embed]