শাহনূর শাহীন: তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমায় দিল্লির মাওলানা সাদের আসাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংকট ক্রমেই ঘনিভূত হচ্ছে। মাওলানা সাদ বিভিন্ন সময় কিছু বিতর্কিত ও বিভ্রান্তমূলক বক্তব্যের জের ধরে সৃষ্ট সঙ্কটের কোনো সমাধান না হলেও তিনি ইজতেমায় অংশ নেয়ার জন্য আজ দুপুরে ঢাকায় চলে এসেছেন।
বর্তমানে তিনি প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তায় কাকরাইলের তাবলিগ জামাতের মারকাজে অবস্থান করছেন।
মাওলানা সাদের বিতর্কিত বক্তব্য ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসার নজরে এলে দেওবন্দ থেকে তাকে সতর্ক করা হয়। দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে তার বিতর্কিত বক্তব্য প্রত্যাহারে আহ্বন জানানো হয়।
দেওবন্দের প্রত্যাশা অনুযায়ী তিনি এখনো রুজু না করায় ওলামায়ে কেরাম তাকে এবারের ইজতেমায় না আসার সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব উপেক্ষা করে তিনি চলে আসেন বাংলাদেশে।
তার আগমনকে কেন্দ্র করে আজ সকাল থেকেই দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হয়।
কাজলায় বেফাক কার্যালয়ে বৈঠক
মাওলানা সাদ’র আসার সংবাদে সকাল ৯টায় কাজলা বেফক কার্যালয়ে উপদেষ্টা কমিটি জরুরি বৈঠকে বসে।বৈঠকে উপস্থিত ওলামায়ে কেরাম মাওলানা সাদ’র বাংলাদেশে না আসার ব্যাপারে আগের অবস্থানে অটল থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় মাওলানা সাদ বাংলাদেশে এলে তাকে বয়কট করা হবে। তাকে ইজতেমা ময়দানে উপস্থিত হতে দেয়া হবে না।
বেফাক কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ
মাওলানা সাদ বাংলাদেশে আসছেন যেনে সকাল থেকেই রাজধানীর যাত্রাবাড়ী কাজলাস্থ বাংলাদেশে কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাক এর কেন্দ্রেীয় কার্যালয়ের সামনে আশপাশের বিভিন্ন মাদরাসার শিক্ষার্থী ও ওলামায়ে কেরাম জড়ো হতে থাকেন। এ সময় প্রায় অর্ধলক্ষ মাদরাসা শিক্ষার্থী ও ওলামায়ে কেরাম উপস্থিত হন।
বেলা ১১টা বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, জামিয়া মাদানিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া যাত্রাবাড়ী মাদরাসার মুহতামিম তাবলিগের উপদেষ্টা কমিটির মুরুব্বী আল্লামা মাহমুদুল হাসান, বেফাকের সহ-সভাপতি আল্লামা আশরাফ আলী, বেফাকের মহাসচিব ফরিদাবাদ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, যুগ্ম মহাসচিব ও জামিয়া রাহমানিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুজুল হক, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা আবু ইউসুফ।
বিমানবন্দরে আলেম ও তাবলিগের সাথীদের অবস্থান
একই সময়ে উত্তরার আলেমদের নেতৃত্বে কয়েক হাজার মাদরাসা শিক্ষার্থী ও তাবলিগের সাথী বিমানবন্দরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিক্ষোভে মাওলানা সাদ’র বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বিমানবন্দর ঘেরাও এবং মাওলানা সাদকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ, মুফতি নেয়ামতুল্লাহ আমিন, মাওলানা আনিসুর রহমান, জামিয়া নূরিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাসউদুল করিমসহ উত্তরার বিশিষ্ট আলেমগণ।
এছাড়াও এসময় মাদানী নগর, মিরপুর ও কিশোরগঞ্জ সহ রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলন
দুপুর ১ টায় বেফাকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ওলামায়ে কেরাম সংবাদ সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় সরকার কর্তৃক গঠিত ওলামায়ে কেরাম ও তাবলিগের মুরুব্বীদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। এবং মাওলানা সাদকে ফিরে যেতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সহসভাপতি মুফতি ফয়জুল্লাহ, হাটহাজারী মাদরাসার মুফতি কেফায়েতুল্লাহ, মাখজানুল উলুমের মুহতামিম মাওলানা নুরুল ইসলাম, বাইতুন মাদরাসার মুহতামিম মুনিরুল ইসলাম, বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা আবু ইউসুফ, কাকরাইলসহ যাত্রবাড়ী মারকায়ের মুরুব্বীগণ।
মাওলানা সাদের আগমন ও ইস্তেকবাল
দুপুর ১.৩০ টায় মাওলানা সাদ বিমানের এক বিশেষ ফ্লাইটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। তার আগমন উপলক্ষ্যে তাবলিগের মুরুব্বী ওয়াসিফুল ইসলামের নেতৃত্বে তাবলিগের সাথীদের আরেক অংশ ইস্তেকবালের অপেক্ষায় থাকে সকাল থেকেই।
এরপর সাড়ে তিনটার দিকে মাওলানা সাদ পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তায় কাকরাইলের দিকে রওয়ানা হন।
কাকরাইলে অবস্থান
বিমানবন্দর থেকে রওয়ানা হয়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় কাকরাইল মারকাজ মসজিদে পৌঁছেন। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী মাওলানা সাদ পুলিশি নিরাপত্তায় কাকরাইল মারকাজে অবস্থান করছেন।
এদিকে ওলামায়ে কেরাম মাওলানা সাদ’র ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে এখনো অনঢ় অবস্থানে রয়েছেন। তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, আগামীকাল সকালে এ নিয়ে দুই পক্ষের উপস্থিতিতে বৈঠকের কথা রয়েছে।
কী হবে আগামীকাল?
কী হবে আগামীকাল এই প্রশ্নটাই এখন দোল খাচ্ছে দীন প্রিয়, তাবলিগ প্রিয় লাখো কোটি জনতার মনে। মাওলানা সাদ কি ইজতেমা ময়দানে যাবেন? নাকি পুনরায় দিল্লি ফিরে যাবেন!
দিল্লি ফিরে গেলে কখন যাবেন, কীভাবে যাবেন, কিংবা যদি তিনি না ফিরেন তাহলে কি ইজতেমা ময়দানে যাবেন? ওলামায়ে কেরাম কি মেনে নিবেন ইজতেমা ময়দানে তার উপস্থিতি? যদি মেনেই নেন তাহলে সেটা কিসের ভিত্তিতে।
যদিও আজ বিমানবন্দরে উলামায়ে কেরাম মাওলানা সাদের ইজতেমায় উপস্থিত না হওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়েই বিক্ষোভ শেষ করেন।
ইনস্টল করুন ইজতেমার অসংখ্য বয়ানের মোবাইল অ্যাপ
আঁধার ঘনিভুত এই সংকটের সমাধান-কী হবে এ নিয়ে এখনো আকাশসম সংশয় বিদ্যমান সবার মনে। দীর্ঘ সময় গত হওয়ার পরেও মাওলানা সাদ তার বিতর্কিত বক্তব্যের ব্যাপারে রুজু হওয়া নিশ্চিত করতে পারেননি।
এখন কি তিনি পারবেন এই অল্প সময়ে ওলামায়ে কেরামকে আশ্বস্ত করতে? কাটবে কি জনমনে জমানো সংশয়? এগুলো নিয়ে সবাই তাবলিগের মুরব্বি ও শীর্ষ আলেম ব্যস্ত সময় পার করছেন। কাটাবেন নির্ঘুম রাত।
অন্ধকারের ঘোর ছায়া দূরিভুত হয়ে আলোর সূর্য উদিত হোক নতুন ভোরে। সংকটমুক্ত হোক বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা দীনি মেহনতের এই সাময়িক ঝঞ্ঝাট। আজ রাতে সবাই সে চাওয়া নিয়েই নিশ্চয়ই ঘুমাতে যাবেন।
এসএস