রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের বিকল্প নেই: তারেক রহমান জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেন শায়খ মাওলানা আবদুর রহীম ইসলামাবাদী কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন আগামীকাল মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে চরমোনাই পীরের শোক প্রকাশ জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী রহ.-এর বর্ণাঢ্য জীবন কওমি সনদকে কার্যকরী করতে ছাত্রদল ভূমিকা রাখবে: নাছির বড় ব্যবধানে জিতে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা আইফোনে ‘টাইপ টু সিরি’ ফিচার যেভাবে ব্যবহার করবেন  স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা আল্লাহকে পেতে হলে রাসূলের অনুসরণ অপরিহার্য: কবি রুহুল আমিন খান

স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়াচ্ছে পক্ষে বিপক্ষের চিঠি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আতাউর রহমান খসরু: টঙ্গী ইজতেমায় মাওলানা সাদ কান্ধলভি অংশগ্রহণ করবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় ছিলো দীর্ঘদিন। অবশেষে উলামায়ে কেরাম ও তাবলিগের শুরা সদস্যগণ দীর্ঘ আলোচনার পর সিদ্ধান্ত দেন এবারের ইজতেমায় তার অংশগ্রহণ না করাই মঙ্গলকর হবে।

বোরবার জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া যাত্রাবাড়ীতে তাবলিগ জামাতের শুরু সদস্য, আলেম উপদেষ্টা ও ভারত সফরকারী প্রতিনিধি দলের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে এ সিদ্ধান্ত সরকারকে হস্তান্তরও করা হয়েছে।

তবে মাওলানা সাদের ইজতেমায় আসাকে কেন্দ্র করে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন মহলে। সাথে সাথে বিভ্রান্তিকর নানা বিষয় উঠে আসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

বিশেষত ফেসবুক ও হোয়াটস অ্যাপে ঘুরছে নানা দেশের চিঠি। যার কোনোটি কাকরাইলের শুরার নামে লিখিত আবার কোনোটি বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নামে লেখা। কোনোটিতে মাওলানা সাদ কান্ধলভির ইজতেমায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে আবার কোনোটিতে বিরোধিতা করা হয়েছে।

কোনো নিরপেক্ষ সূত্র থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়ানো এসব চিঠির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয় নি।

আওয়ার ইসলামের হাতে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়ানো ৫ দেশের ৬টি চিঠি এসেছে। দেশগুলো হলো, আমেরিকা, কানাডা, সাউথ আফ্রিকা, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। এর মধ্যে মালয়েশিয়া শুরার নামে পরস্পর বিরোধী দুটি চিঠি পাওয়া গেছে।

ইন্দোনেশিয়া

ইন্দোনেশিয়ার শুরার সিল অংকিত ও জিতজিপ ফেরদাউস স্বাক্ষরিত চিঠিতে আয়োজক দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। এরপর টঙ্গী ইজতেমার গুরুত্ব বর্ণনা করে বলা হয়েছে, বিশ্ব ইজতেমা আল্লাহর অনুগ্রহে ইসলামের প্রচার ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীকে পরিণত হয়েছে এবং তা পরিণত হয়েছে নিজামুদ্দিনের মুরব্বিদের পথনির্দেশনার কারণে।

৮ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, দীর্ঘকাল যাবৎ প্রশ্নাতীতভাবে মাওলানা সাদের নেতৃত্ব আল্লাহর দরবারে তার গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ।

চিঠির শেষে বলা হয়, আমরা চাই অতীতের মতো ইজতেমা নিজামুদ্দিনের নির্দেশনায় পরিচালিত হোক।

সাউথ আফ্রিকা


সাউথ আফ্রিকার সাথীদের পক্ষ থেকে ১৩ জনের স্বাক্ষরসম্বলিত একটি চিঠি বাংলাদেশের  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর পাঠানো হয়। এতে ৫০ বছর ধরে বিশ্ব ইজতেমার সফল আয়োজন করার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ দেয়া হয়।

এরপর বলা হয়, ইজতেমা কাকরাইল, নিজামুদ্দিন ও রায়বেন্ডের মুরব্বিদের পরামর্শে পরিচালিত হয়েছে। ভবিষ্যতেও তাই হবে।

চিঠির শেষ পর্যায়ে বলা হয়েছে, মাওলানা যুবাইরুল হাসান রহ. ইজতেমার মুনাজাত পরিচালনা করতেন। তিনি নেই তবুও ইজতেমা হয়। হাজী আবদুল ওয়াহাব সাহেব এক সময় ইজতেমায় আসতেন। তিনি অসুস্থ্যতার দরুণ দীর্ঘদিন ইজতেমায় আসেন না তবুও ইজতেমা হচ্ছে। তাহলে মাওলানা সাদ ব্যতীত কেনো ইজতেমা হবে না?

তাবলিগের কাজ কেবল আল্লাহর জন্য এবং তার সাহায্যে পরিচালিত। কোনো ব্যক্তির উপর তা নির্ভরশীল নয়।

চিঠিতে দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানানো হয়েছে।

আমেরিকা

৫ জানুয়ারি আমেরিকার তাবলিগের সাথীদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের উলামা ও সরকারের প্রতি লেখা একটি চিঠি পাওয়া গেছে। চিঠিতে কারো স্বাক্ষর ও কোনা সিল না থাকলেও রয়েছে ১১ ব্যক্তির নাম।

বাংলাদেশের উলামায়ে কেরাম ও সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে শুরুতেই আশা করা হয়েছে সরকার ও উলামাদের সিদ্ধান্ত দাওয়াত ও তাবলিগের জন্য কল্যাণকর হবে।

চিঠিতে জানানো হয়েছে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে আমলি শুরার একটি প্রতিনিধি দল আমেরিকা সফর করে। তাদের কথায় আমেরিকার তাবলিগের সাথীরা আশ্বস্ত এবং তারা চান বিশ্বব্যাপী তাবলিগের কাজ শুরা ভিত্তিতে পরিচালিত হোক।

চিঠির শেষে উলামায়ে কেরামের দুটি সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে তার পক্ষে যুক্তি দেখানো হয়েছে।

চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন, ইকবাল ভোলাদ, পারভেজ খান, ইরফান খান, আব্বাস প্যাটেল, ইকবাল তেলি, সাবির কাপাডিয়া প্রমুখ।

কানাডা

কানাডা শুরার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ শুরা ও সরকারের উদ্দেশে  লেখা ৭ জানুয়ারির চিঠিতে মাওলানা সাদ কান্ধলভির প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছে।

এ চিঠিরও সূচনা হয়েছে ইজতেমার সফল আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে এবং বিশ্বব্যাপী ইজতেমার প্রভাব তুলে ধরে। চিঠির দ্বিতীয় প্যারায় দাওয়াত-তাবলিগের কাজের প্রচলন এবং তার পেছনে মাওলানা সাদ কান্ধলভির পরিবার ও দিল্লি নিজামুদ্দিন মারকাজের অবদান তুলে ধরা হয়।

এরপর বলা হয়েছে, ইসলামের শিক্ষা হলো মূল সূত্রে ফিরে যাওয়া এবং আস্থা রাখা। তাই আমাদের উচিৎ দাওয়াত ও তাবলিগের সূতিকাগার দিল্লির নিজামুদ্দিনের অনুগত হওয়া।

মালয়েশিয়া

মুসলিম দেশ মালয়েশিয়ার শুরা ও আহলে শুরার নামে দুটি চিঠি পাওয়া গেছে। যার একটিতে বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন জানানো হয়েছে। অপরটিতে সমর্থন জানানো হয়েছে মাওলানা সাদের পক্ষে।

মালয়েশিয়ার শুরার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ শুরা ও সরকারের উদ্দেশ্যে লেখা চিঠিতে মাওলানা সাদের প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছে।

৭ জানুয়ারি লেখা চিঠির শুরুতে ইজতেমাকে তাবলিগি মুরব্বিদের কষ্টের ফসল উল্লেখ করে তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে।

চিঠির শেষে স্বাক্ষর করেছেন হাজি আবদুল্লাহ চং

এদিকে মালয়েশিয়ার শুরা সদস্য আলি দাদ ফজল এলাহি উপরের চিঠির সঙ্গে দ্বিমত ঘোষণা করে বলেছে তিনি মালয়েশিয়ার জামে মসজিদ বারুসি থেকে চিঠির সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করছি।

মালয়েশিয়ার সাবাহ প্রদেশের আহলে শুরা মাওলানা সাদকে বিশ্ব তাবলিগের আমির মনে করে না এবং তার টঙ্গী ইজতেমায় অংশগ্রহণও গ্রহণযোগ্য নয় বলেই মনে করেন।

তবে প্রতিটি চিঠির শেষে পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক এবং এ থেকে পরিত্রাণের জন্য মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানানো হয়েছে।

স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এসব চিঠির বিষয়ে একজন মুরব্বির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেন, চিঠিগুলোর ব্যাপারে আমাদের কাছে নিউজ রয়েছে। তবে এগুলো নিয়ে সাধারণের মাধ্য আলোচনা না করাই ভালো। এগুলোর ব্যাপারে মুরব্বি ও শুরার সদস্যগণ সিদ্ধান্ত নেবেন।

মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বিষয়ে আলেমদের চূড়ান্ত মতামত


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ