রোকন রাইয়ান: এবারের ইজতেমায় দিল্লির নিজামুদ্দিনের মুরব্বি মাওলানা সাদ আসতে পারবেন কিনা এ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে চলছে আলোচনা। সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানতে বাংলাদেশ থেকে তাবলিগ ও উলামায়ে কেরামের সমন্বিত একটি প্রতিনিধি দল নিজামুদ্দিন ও দারুল উলুম দেওবন্দ যায়। তারা গুজরাটও সফর করেন।
প্রতিনিধি দল দেশ ফেরত এসে দারুল উলুম দেওবন্দসহ মাওলানা সাদ ও মাওলানা আহমদ লাট-মাওলানা ইবরাহিম দেওলার বক্তব্যসহ একটি প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সরকার পক্ষকে হস্তান্তর করেন। প্রতিবেদনে দারুল উলুম দেওবন্দ মাওলানা সাদের ব্যাপারে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে।
আওয়ার ইসলাম পাঠকদের জন্য দারুল উলুম দেওবন্দের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য ও প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো।
বিসমিহি তায়ালা
মাওলানা মুহা. সাআদ সাহেব প্রদত্ত আহলুসসুন্নাহ ওয়াল জামাতের মতাদর্শের সম্পূর্ণ পরিপন্থি কতক অসতর্ক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে উপমহাদেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম (ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ) -এর প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে দারুল উলুম দেওবন্দ দীনি দৃষ্টিকোণ থেকে নিজ বক্তব্য ও অবস্থান স্পষ্ট করেছিল (যা এখানো দেখা যেতে পারে)।
দারুল উলুম দেওবন্দের সুস্পষ্ট বক্তব্য জনসম্মুখে আসার পর মাওলানা মুহা. সাআদ সাহেব স্বাক্ষরিত রুজুনামা (বক্তব্য ও মতামত প্রত্যাহারপত্র ) দারুল উলুম কর্তৃপক্ষের হস্থগত হয়।
কিন্তু প্রত্যাহারপত্র লাভের কিছুদিন পরই মাওলানা সাহেবের কতিপয় ভক্তবৃন্দ বিশেষত মাওলানা সাহেবের নিকটাত্মীয় ও মাযাহেরে উলুম সাহারানপুরের নাযেম মাওলানা সালমান সাহেবের পক্ষ থেকে দারুল উলুম দেওবন্দের বক্তব্য খণ্ডন করে একটি পুস্তিকা প্রকাশিত হয় এবং তাদের খণ্ডনমূলক বক্তব্যের এধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
উপরন্তু মাওলানা মুহা. সাআদ সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল যে, আল্লাহর পয়গাম্বর হযরত মুসা আ. সম্পর্কে (ভুল ও বেয়াদবীমূলক) বক্তব্য যেভাবে তিনি সর্বসাধারণের মাহফিলে দিয়েছেন, তেমনিভাবে সর্বসাধারণের মাহফিলে তিনি এ বক্তব্য প্রত্যাহারের ষোঘণা দিবেন।
অ্যাপটি ইনস্টল করতে এখানে ক্লিক করুন
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা হলো, মাওলানা মুহা. সাআদ সাহেবের পক্ষ থেকে সর্বসাধারণের মাহফিলে এ জাতীয় প্রত্যাহারমূলক কোনো বক্তব্য সম্পর্কে আমরা এখনও অবগত হতে পারিনি।
সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দারুল উলূম কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ মূল্যায়ন হলো, মাওলানা মুহা. সাআদ সাহেব এবং তার মতাদর্শী ভক্তবৃন্দ নিজেদের পূর্বের বক্তব্যের (যার অসারতা ও ভ্রান্তি সম্পর্কে দারুল উলুম দেওবন্দ ইতোপূর্বেই দলিল ভিত্তিক বক্তব্য প্রকাশ করেছে) ওপর অটল অবিচল রয়েছেন বিধায় দারুল উলুম দেওবন্দও নিজ বক্তব্যের ওপরই দৃঢ় রয়েছে।
মাওলানা আবুল কাসেম নোমানী
২৫/ ১২/ ২০১৭
মাওলানা সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানী
২৫/ ১২/ ২০১৭
মাওলানা মুহাম্মাদ সা’দ সাহেবের রুজু তথা প্রত্যাহারমূলক বক্তব্য সম্পর্কে দারুল উলূম দেওবন্দ ও প্রতিনিধি দলের মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণ
মাওলানা মুহাম্মাদ সা’দ সাহেবের উল্লেখিত রুজু (প্রত্যাহারমূলক বক্তব্য)-এর উপর দারুল উলূম দেওবন্দ কর্তৃপক্ষ আস্থাশীল নয় এবং তা আমাদের নিকটও গ্রহণযোগ্য নয়। যার কারণসমূহ নিম্নরূপ।
এক. মাওলানা মুহাম্মাদ সা’দ সাহেবের হযরত মুসা আ. সম্পর্কে একাধিক বড় বড় মাহফিলে মারত্মক ভুল এবং আপত্তিকর বক্তব্য দেওয়া নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত। অথচ তার রুজু তথা প্রত্যাহারমূলক মূল বক্তব্য হলো এই-
‘বয়ানের মধ্যে কোথাও এ ধরনের কথা এসে থাকলে আমি তার থেকে রুজু করছি।’
একজন জলীলুল কদ্বর নবী হযরত মুসা আ. সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত মারাত্মক ভুল বক্তব্য থেকে এভাবে রুজু করা (বক্তব্য প্রত্যাহার করা) কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
দুই. মাওলানা মুহাম্মাদ সা’দ সাহেব হযরত মুসা আ. সম্পর্কে মারাত্মক ভুল বক্তব্য লাখো মানুষের উপস্থিতিতে একাধিক বড় বড় মাহফিলে দিয়েছেন। অথচ রুজু তথা প্রত্যাহারমূলক বক্তব্যটি নেজামুদ্দীন মারকাজের কয়েকশত মানুষের উপস্থিতিতে শুধুমাত্র একবারই দিয়েছেন।
তিন. রুজু তথা প্রত্যাহারমূলক বক্তব্যে তাঁর মারাত্মক ভুল বক্তব্যগুলো পূর্ণভাবে উল্লেখপূর্বক তা থেকে রুজু করা উচিত ছিল। কিন্তু তিনি তা না করে সংক্ষিপ্তভাবে কোনো রকম রুজু করেছেন। যা রুজু হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
চার. এতো বড় ভুল যে, একজন জলীলুল কদ্বর আল্লাহর নবী সম্পর্কে মারাত্মক ভুল বক্তব্য। অথচ তা থেকে রুজু তথা প্রত্যাহরমূলক বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সেই ভুলের উপর অনুশোচনা পরিলক্ষিত হয়নি।
পাঁচ. দারুল উলূম দেওবন্দের পক্ষ থেকে এক বছর পূর্বে প্রত্যাহারমূলক বক্তব্য প্রকাশ্যভাবে ঘোষাণা করার ব্যাপারে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি এতো দিন সেই ঘোষণা দেননি। এখন বাংলাদেশের ইজতেমার প্রাক্কালে ইজতেমায় অংশগ্রহণের অজুহাত তৈরি করার জন্য কোন রকম ঘোষণা দিয়েছেন। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
ছয়. মাওলানা মুহাম্মাদ সা’দ সাহেব উলামায়ে কেরামের নিকট আপত্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য বক্তব্য এখনও প্রতি নিয়ত দিয়ে চলেছেন। যার একাধিক প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : মাওলানা মুহাম্মাদ সা’দ সাহেব আমাদের প্রতিনিধী দলের মাওলানা মুহাম্মাদ যোবায়ের ও জনাব ওয়াসিফুল ইসলামকে এ কথা বলেছেন- যে আমরা উভয় গ্রুপ বাংলাদেশের ইজতেমায় একত্রিত হবো। এটা আমার জন্য অসম্ভব।
মাওলানা সাদ বিষয়ে উত্তরার পরামর্শ সভায় ২ সিদ্ধান্ত