ইশতিয়াক সিদ্দিকী: টেকনাফ থেকে
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধধর্মীয় জনগোষ্ঠীর হত্যা ও নিপীড়ন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে লাখো-লাখো রোহিঙ্গা। বাস্তুভিটা হারিয়ে অনেকে এক কাপড়ে রওয়ানা হয়েছে বাংলাদেশের দিকে।
কেউ বাবা-মা, কেউ ভাই-বোন কেউবা আপনজন হারানোর শোক নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছে। ২-৮ দিন পর্যন্ত পায়ে হেঁটে পথ পাড়ি দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে তারা। এত অসহনীয় কষ্টের পরও বাংলাদেশে প্রবেশপথে আলেমদের মেহমানদারি পেয়ে উচ্ছ্বসিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শতাধিক আলেম শাহপরীর দ্বীপ এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে আগত শরণার্থীদের শুকনো খাবার-পানি এবং নগদ অর্থ দিয়ে মেহমানদারি করছেন। দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়া মুহাযিরদের এ যেন অনেক বড় প্রাপ্তি।
আলেমগণ পানি পান করিয়ে কারো গলা ভিজিয়ে দিচ্ছেন, কাউকে খাবার দিয়ে ক্ষুধা মিটাচ্ছেন এবং সাধ্য অনুযায়ী তাদের হাতে নগদ অর্থ গুজে দিচ্ছেন।
কথা হয় ঢাকা থেকে আসা মুফতি মোস্তফার সাথে। তিনি জানান, আমরা চার বন্ধু মিলে প্রায় ৩লক্ষ টাকা নিয়ে এসেছি। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মানুষের হালত দেখে দেখে একদিনেই সব টাকা বিলি করেছি।
দ্বীপে আটকে থাকা রোহিঙ্গাদের পারাপারে সহযোগিতা করেছেন টাংগাইল থেকে আসা মুফতি সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, মাত্র বিশ টাকার জন্য শত শত মানুষ দ্বীপে আটকে আছে এমন খবর পেয়ে আমরা তিনজন মিলে নৌকা ভাড়া করে রাতভর তাদের সাগর পার করে দিয়েছি।
স্থানীয় দালালরা সাগর পারাপারে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করছেন বলেও তিনি জানান। সরকারকে এই সব এলাকায় আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তারা।
সীমান্ত পারাপারে এমন সহযোগিতা পেয়ে এক রোহিঙ্গা আবেগআপ্লুত হয়ে বলেন, বাঙ্গালিরা বউত বালা মানুষ (বাঙালিরা খুব ভাল লোক)।
আরেক রোহিঙ্গা বৃদ্ধ বলেন, আল্লারে বাঙালিরা হত হষ্ট গরের আরাল্লাই (আল্লাহ, বাঙালিরা কত কষ্ট করতেছে আমাদের জন্য!)
সদ্য সীমান্ত পার হওয়া রোহিঙ্গাদের নিরলসভাবে খাবার ও থাকার ব্যবস্থা করে যাচ্ছে স্থানীয় কিছু কওমি মাদরাসা। রাতে সীমান্ত পার হয়ে দিনে ঐসব মাদরাসায় বিশ্রাম নিচ্ছে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষেরা।
তাদের এমন দুঃসময়ে মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের এমন আপ্যায়ন-সহযোগিতা পেয়ে চিরকৃতজ্ঞ বলে জানান রোহিঙ্গারা।
সহযোগিতার জন্য শাহপরীর দ্বীপ কেন নির্বাচন করলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আলেমগণ জানান, দূরদুরান্ত থেকে বহু মানুষ রোহিঙ্গাদের সহযোগিতার জন্য আসছেন কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই কুতুপালং-বালুখালি ইত্যাদি এলাকায় ত্রাণ দিয়ে ফিরে যায়।
বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম, শাহপরীর দ্বীপে অর্থাভাবে বহু রোহিঙ্গা আটকে আছে। তাই আমরা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে তাদের পারাপারের ব্যবস্থা করছি। এ কাজে কষ্ট একটু বেশি তবু দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত আলেমগণ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এবং তাঁরা দেশবাসীকে রোহিঙ্গাজনগোষ্ঠীকে সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
রোহিঙ্গা শিবিরের হিরো : গাজী ইয়াকুব