মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা নতুন করে সংকটে পড়েছেন তাদের মেয়েদের নিয়ে। উখিয়া এবং টেকনাফের বিভিন্ন স্থানে ঠাঁই নেওয়া এ সব মেয়েদের বয়স ১৪ থেকে ২০ বছর। এদের অধিকাংশই অবিবাহিত।
আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলে তাদের দূর্বলতার সুযোগ নিতে চাচ্ছেন দালালরা। এমনকি দালালরা কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামের দিকে নিয়ে যাওয়ারও আশ্বাস দিচ্ছেন এসব সুন্দরী মেয়েদের। এ নিয়ে তরুণীরা যেমন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তেমনি আস্থাহীনতায় পড়েছেন তাদের পরিবারও।
অনুসন্ধানে জানা যায়, একটি সিন্ডিকেট টেকনাফের উখিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের সুন্দরী মেয়ে দেখলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তারা। সুন্দরী মেয়েদের টার্গেট করে নানাভাবে কু-প্ররোচনা দিচ্ছে। রোহিঙ্গা তরুণীদের বলা হচ্ছে, নিজ ভিটেতে থাকার জন্য বসত বাড়ি দেওয়া হবে। তাতে কোন প্রকার টাকাও দিতে হবেনা। এটা শুধুই মানবতার খাতিরে বলে আশ্বাস দিচ্ছে ওই সিন্ডিকেট। গার্মেন্টের চাকুরীসহ প্রতিষ্ঠিত করে দেওয়ার আশ্বাসও দিচ্ছেন তারা।
উখিয়ার বালুখালীতে আশ্রয় নিয়েছেন মিয়ানমার মংডু থেকে আসা হামিদুল আজম। তার দুই মেয়ে এক ছেলে। বড় মেয়ে জান্নাতুলের বয়স ১৮ এবং ছোট মেয়ে পারুলের বয়স ১৪। জান্নাতুল দেখতে খুবই রুপসী।
হামিদুল বলেন, প্রাণের ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি। বড় মেয়ে জান্নাতের বিয়েও ঠিক হয়েছিল, পার্শ্ববর্তী একটি ছেলের সাথে। আমরা লাম্বার বিল সিমান্ত দিয়ে ৯ সেপ্টেম্বর শনিবার বাংলাদেশে প্রবেশ করি। কিন্তু আসার পথে দুইজন লোক তাদের বাড়িতে আশ্রয় দেওয়ার কথা বলে। বলেন, শহরে নিয়ে যাবে। চাকুরীর করার সুযোগ করে দেবে।
তিনি আরও বলেন, সোমবার আবার রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ে কাজ করে যাচ্ছি বলে একজন আমার বড় মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমি তাতে রাজি হয়নি। একই অভিযোগ করেছেন, টেকনাফে’র ধামনখালীতে আশ্রয় নেওয়া মধ্যবয়সী নুরতাজ। দুটি মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন তিনি। এক ছেলের বউ এনেছেন। কিন্তু ছোট মেয়ে মনোয়ারাকে (১৬) নিয়ে পালিয়ে আসতে হলো তাকে। এখানেই এসেই যতো বিপদ। তার সুন্দরী মেয়েকে নিয়ে সে পড়েছে সমস্যায়। বাবা হারা মেয়েটি কেমন জানি ভীতস্থ। চেষ্টা করেও কথা বলানো সম্ভব হয়নি।
মনোয়ারার মা নুরতাজ বলেন, কিছু লোক এসে আমি এবং আমার মেয়েকে নিরাপদে রাখবে বলে অনুরোধ করে। তাকে লোভও দেখাচ্ছে। আমি কিন্তু ভয় পেয়েছি। তিনি বলেন, বাবা আপনারাতো এখানের। আমরাতো এখানে কিছু চিনি না। অন্তত নিরাপত্তায় থাকতে পারি মতো কোথাও ব্যবস্থা করা যায়? নুরতাজ বেগম ঝড়ে ভিজে অনেকটা অসুস্থ।
অনেক রোহিঙ্গা শরনার্থীরা জানান, লম্পটদের পাশাপাশি কিছু দালালও রয়েছে সুন্দরী মেয়েদের ভাগিয়ে নিতে। অসহায়ত্বের সুয়োগ নিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিয়ের প্রস্তাবও। যা রিতিমতো লোকদেখানো।
এমন আরেকজন লিয়াকত আলী। তার দুটি মাত্র মেয়ে। একটি ছোট অন্যটির বয়স ১৭ বছর। মেয়েটির নাম আয়েশা। লিয়াকত বলেন, মেয়েকে নিয়ে এখানে এসেও বিপদ পিছু ধরে রয়েছে। আমার খুব ভয়, না জানি মেয়েটা হাতছাড়া হয়ে যায়। তাই রাতদিন মেয়েকে নিজ হাতে ধরে রেখেছি। দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসেও শান্তি পাচ্ছি না।
উখিয়া টেকনাফের তমব্রু বালুখালী, আঞ্জুমানপাড়া, রহমতের বিল, ধামনখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কোন কারণ ছাড়া কিছু যুবককে মোবাইল ফোন নিয়ে ছবি তুলতে এবং ভিডিও করতে দেখা গেছে। এদের আচরণ ও গতিবিধি সন্দেহজনক হলেও প্রশাসন এ ব্যাপারে কঠোর না থাকায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সুন্দরী মেয়েদের বাবা-মা। পাশাপাশি আতঙ্কে রয়েছে সুন্দরী ওইসব তরুনীরা।
এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি নিয়োজিত রয়েছে। কিন্তু পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সংখ্যা খুব অপ্রতুল হওয়ায় নিরাপত্তার প্রকট সঙ্কট বিরাজ করছে। নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন বাড়ানোর পাশাপাশি নজরদারি বাড়ালে লম্পট দালারদের খপ্পর থেকে বাচঁবে, প্রাণে বেঁচে আসা এসব তরুণীরা।
সূত্র: পূর্বপশ্চিম বিডি