আওয়ার ইসলাম: কাতারভিত্তিক সংগঠন মজলিসে ইত্তেহাদুল মুসলিমীনের উদ্যোগে ইসলামি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ঈদ পূণর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত সোমবার কাতারের রাজধানী দোহায় ফানার মিলনায়তনে শায়েখ আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ আল মাহমুদ ইসলামিক কালচারাল সেন্টার এর ব্যবস্থাপনায় এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। কাতারে বাংলাদেশি আলেম উলামা, ইমাম ও খতীবদের সমন্বয়ে পরিচালিত মজলিসে ইত্তেহাদুল মুসলিমীনের এ বাৎসরিক অনুষ্ঠান প্রবাসীদের জন্য ঐতিহ্যমণ্ডিত অনুষ্ঠান বলেও সুপরিচিত।
হাফেজ মাওলানা মুফতি ফরিদ আহমাদ এর সভাপতিত্বে মাওলানা রেজাউল করীম ও শিল্পী মাসুদ কায়সারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন হাফেজ মাওলানা মুশাহিদুর রাহমান।
অনুষ্ঠানে ত্রিভাষায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাওলানা আব্দুল আউয়াল। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল জনাব জসিমুদ্দিন ও অতিথি শিল্পী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার আমানাত হসাইন। অনুষ্ঠানের সার্বিক দিক নির্দেশনায় ছিলেন মাওলানা মাহবুব আব্দুল মতিন ও মাওলানা মুফতি ইউসুফ।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা ফরিদ আহমাদ বলেন, আল্লাহর সাহায্য পেতে হলে আল্লাহর কাজ করতে হবে। মানব সেবা, নির্যাতিত ভাই বোনের পাশে দাঁড়ানো, সাধ্য মতো তাদের সাহায্য করাও আল্লাহর কাজ। দীনি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এটাও আল্লাহর কাজ। মুসলমানরা আজ পথহারা, আল্লাহ বিমুখ, জীবন পরিচালনায় সুন্নতি জীবনের বিপরীত স্রোতে নিমজ্জিত। আল্লাহর কাজ করলে, সুন্নতি জীবন যাপন করলে আল্লাহর নুসরত আসবেই। নির্যাতন নিপীড়ন বন্ধ হবে। নিজেদের ঐতিহ্য ফিরিয়ে পাবে।
বার্মার মুসলমানদের প্রসঙ্গ তিনি বলেন, তাদের অত্যাচারের ছবি দেখে কোনো সুস্থ বিবেকবান মানুষ স্থির থাকতে পারবে না। হাত পা গুটিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে থাকার সময় নেই। তিনি বার্মার মুসলমানদের জন্য হাত তুলে দোয়া করলে মিলনায়তন ভর্তি হাজার হাজার দর্শক স্রোতার মাঝে এক হৃদয় বিদারক কান্নায় রোল পরে যায়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে মাওলানা মুশাহিদুর রাহমান বলেন, মসজিদুল আকসার আর্তনাদে আমাদের মন না কাঁদলেও ফিলিস্তিনের শিশুদের মন ঠিকই কাঁদে। ছোট ছয় বছরের শিশু মেয়ে তার মাকে বলে আমাকে বিয়ে দাও! আমি সন্তান নিবো সেই সন্তান মুজাহিদ হয়ে মসজিদুল আকসাকে উদ্ধার করবে। মসজিদুল আকসা উদ্ধার করতে কোনো মুসলমান আসবে না। আজ মুসলমানরা সম্পদ, ক্ষমতা আর দুনিয়ার চাকচিক্যের প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত।
রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর রক্তপিপাসু বৌদ্ধদের বর্বর নির্যাতনের চিত্র উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন জানান, আমাদেরকে বার্মায় মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানোর অনুমতি দিন। সরকারের কিছুই করতে হবে না। লক্ষ লক্ষ তরুণ যুবক নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ষায় প্রস্তুত আছে।
তিনি আরও বলেন, মুসলমানদের নিজেদের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে, মসজিদুল আকসা উদ্ধার করতে অন্তরজুড়ে আল্লাহর বড়ত্বের স্থান দিতে হবে।
মজলিসে ইত্তেহাদুল মুসলিমীন দীর্ঘ ১০ বছর যাবত এ অনুষ্ঠান অত্যন্ত সুনামের সাথে করে আসছে। সেই সঙ্গে প্রবাসীদের পরিবার-পরিজনদের অংশগ্রহণে এমন অনুষ্ঠান প্রবাসজীবনে বিরল। মজলিসে ইত্যেহাদুল মুসলিমীন এ শূন্যতা কিছুটা হলেও পূরণ করছে বলে দাবি করেছেন এন্তেজামিয়া কমিটির আহবায়ক মজলিসে ইত্তেহাদুল মুসলিমীনের সহ সভাপতি মাওলানা মুশাহিদুর রাহমান। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, উলামায়ে কেরামের মাঝে এমন কিছু প্রতিভাবান আলেম আছেন যারা সমাজের সর্বস্তরে ধর্মীয় আঙ্গিকে সমাজের ধর্মীয় চাহিদায় সবকাজই করতে পারদর্শী। তাদের কাজে লাগিয়ে প্রতিভার বিকাশ এবং অপসংস্কৃতির স্রোতের বিপরীতে ইসলামি সাংস্কৃতির ময়দান তৈরি করাই এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথি ও দর্শকগণ রোহিঙ্গ মুসলমানদের গণহত্যার প্রতিবাদ জানান
অনুষ্ঠানে ইসলামি সঙ্গীতের পাশাপাশি ছিল নাটক, কৌতুক, রম্য সঙ্গীত, আঞ্চলিক সঙ্গীত এবং বৃদ্ধাশ্রমে থাকা মায়েদের নিয়ে কবিতা ও গল্প।
সুরের মূর্ছনায় দর্শকদের মাতিয়ে তুলেন শিল্পী মাযহারুল ইসলাম, আব্দুর রহমান আইমান, নিয়াজ মুহাম্মাদ রিফাদ, মুহাম্মাদুল্লাহ মাইমুন, ফয়জুর রহমান ফাহিম, সাকিব আল মাহদি, মাসুদুর রহমান, মাসুদ কায়সার।
আরবি সঙ্গীত গেয়েছেন, মুহাম্মাদুল্লাহ ফরীদ, সাইফুল্লাহ সিরাজ, আম্মার বিন ইয়ামিন, ইয়াহইয়া মুহিব্বুল্লাহ, আহমাদুল্লাহ ফরীদ, আলী আব্দুল হাফিজ, যায়েদ কামাল, উসামা আহসানুল্লাহ, মুহাম্মাদ মুহাম্মাদুল্লাহ ও সাআদ সিরাজ।