আওয়ার ইসলাম : ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। আজ সকাল ৬টা থেকে নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর শোঁ শোঁ শব্দ আর গর্জন তিস্তা অববাহিকা কাঁপিয়ে তুলেছে।
অপর দিকে এক নাগাড়ে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে নীলফামারী জেলাসহ পাশ্ববর্তী এলাকাসমূহ। নদীর পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। শুধু নদী লাগোয়া সকল গ্রাম নয়। অবিরাম বর্ষণের কারণে মাঠঘাট, বাড়িঘর, সড়ক, ফসলী জমি সব কিছু তলিয়ে গেছে। গত বুধবার থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে তা থামবার নাম নেই। চলছে তো চলছে। জেলার প্রতিটি নদী এখন বিপদসীমায়। অবিরাম বর্ষণে জনজীবন থমকে গেছে। রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচল কমে গেছে। মানুষজন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হচ্ছেনা। ভারী বর্ষণ ও নদীর পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করায় এ জেলার ২০ লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। কৃষকদের মতে জেলার ৫০ হাজার হেক্টর আমন ধানের জমি তলিয়ে গেছে।
গতেএকদিনে বৃষ্টি নীলফামারী জেলার গত কয়েক বছরের রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে। নীলফামারী সদরে ১৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। জেলা শহরের প্রতিটি পাড়া মহল্লার পথঘাট ও বাসাবাড়ি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।
এ ছাড়া এ জেলার ডোমারে ২২৩, ডিমলায় ১৫০, জলঢাকায় ২০৭, সৈয়দপুরে ২৫০ ও কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ২৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে জেলা কৃষি বিভাগ। অপর দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা অববাহিকার ডালিয়া পয়েন্টে ১৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানানো হয়েছে। কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে তিস্তা নদী ছাড়াও পানি বিপদসীমা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বুড়ি তিস্তা, চারালকাটা, বুড়িখোড়া, যমুনেশ্বরী, খড়খড়িয়া, দেওনাই, খেড়ুয়া, শালকি, নাউতারা, কুমলাই, ধুম, ধাইজান, চিকলি, আউলিয়া খানা, ইছামতি। শহরের বাবুপাড়া মহল্লার ফরিদা ইয়াসমিন জলি জানান, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে রাস্তাঘাট সব তলিয়ে গেছে। বাসার ভেতরেও পানি প্রবেশ করেছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা ব্যরাজ ডালিয়া পানি উনয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, শুক্রবার তিস্তা অববাহিকায় ডালিয়া পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল ১৩২ মিলিমিটার। একই সূত্র মতে গত বুধবার ১৫৮ ও বৃহস্পতিবার ১৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল তিস্তা অববাহিকায়। ফলে গত ৯৬ ঘণ্টায় ৬৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল। এ ছাড়া তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তা ব্যারজের ৪৪টি জলকপাট সার্বক্ষণিক খুলে রাখা হয়েছে।
নীলফামারীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শাহিনুর আলমের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের সকল সহকারী কমিশনার এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণসহ সকল সরকারি বিভাগের লোকজন মাঠে নেমে পরিস্থিতি পর্যক্ষণ ও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরূপণ করছেন। তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান জানান, চারদিনে অবিবরাম বর্ষণের পানি ছাড়াও উজানের ঢলে তিস্তা নদীতে বন্যা দেখা দিয়েছে।
-এজেড