শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


যে কারণে সামাজিক কর্মসূচিতে মনোযোগী হচ্ছে ইসলামি দলগুলো

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আতাউর রহমান খসরু : সম্প্রতি ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচিতে বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নিছক ধর্মীয় ইস্যুর বাইরে তাতে যোগ হচ্ছে খুন-ধর্ষণ-নারী নির্যাতনের মতো বিষয়। এমনকি চিকনগুনিয়া, ঢাকার জলাবদ্ধতা ও বৃক্ষরোপণের মতো সামাজিক কর্মসূচিও হাতে নিতে দেখা যাচ্ছে কোনো কোনো ইসলামি রাজনৈতিক দলকে।

গত মঙ্গলবার বগুড়ার আলোচিত ধর্ষণের ঘটনার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে খেলাফত মজলিস। সেখানে তারা ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান তুলে ধরে।

এর কিছু দিন পূর্বে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চিকুনগুনিয়ার বিরুদ্ধে মিছিল ও মেয়রের নিকট স্মারকলিপি পেশ করে।

সম্প্রতি দেশব্যাপী বৃক্ষরোপন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অঙ্গ সংগঠন ইসলামী কৃষক-মজুর আন্দোলন।

এছাড়াও পথশিশুদের সাথে ইফতার, পথশিশু ও অসহায় মানুষের মাঝে ঈদ সামগ্রি বিতরণ, বন্যাকবলিত অঞ্চলে ত্রাণ বিতরণে আগ্রহ দেখাচ্ছে ইসলামি রাজনৈতিক দলসমূহ।

ইসলামি দলগুলোর কর্মসূচির এ পরিবর্তনকে ইতিবাচকভাবে দেখছে সাধারণ নাগরিকগণ। তারা মনে করছে, এর মাধ্যমে ইসলামি দলগুলো ধর্মীয় বলয়ের বাইরে বিপুল সংখ্যক মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হবে।

ঢাকার নারিন্দার এলাকা বাস করেন আবদুল গফফার মিয়া। পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক। তার কাছে যখন জানতে চাইলাম ইসলামি দলগুলোর সামাজিক কর্মসূচিকে তিনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন। তিনি কিছুটা বিস্মিত হয়েই বলেন, তাই নাকি! ইসলামি দলগুলো গাছ লাগানোর কথাও বলে?’ এরপর তিনি বলেন, ‘এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। এমন কর্মসূচি তাদের জনবিচ্ছিন্নতা কমাবে।’

সামাজিক কর্মসূচিতে আগ্রহবোধ করছেন ইসলামি দলগুলোর সাধারণ কর্মীরাও। খেলাফত মজলিসের কর্মী আবু জায়েদ বলেন, ‘সমাজ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কর্মসূতিতে অংশগ্রহণ করতে আমার ভালো লাগে। আমি মনে করি, এতে দেশপ্রেম প্রকাশ পায় এবং আমরা যে দেশের জন্য কাজ করতে চাই তা মানুষকে বোঝানো সহজ হবে।’

ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট ও ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের একাধিক কর্মীর সাথে বললে তারাও অনুরূপ মত প্রকাশ করেন। তারা বলেন, ‘সমাজমুখী কর্মসূচি সমাজে আমাদের জায়গাকে প্রশস্ত করবে। মানুষ বুঝবে ইসলাম সামাজিক কল্যাণের কথাও বলে।’

তবে এ পরিবর্তনকে ঠিক পরিবর্তন বলতে রাজি নন ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমীর ড. মাওলানা ঈসা শাহেদী। তিনি বলেন, ‘আপনি যাকে পরিবর্তন বলছেন আমি তাকে পরিবর্তন বলতে রাজি নই। কেননা ঈমানি দায়িত্ব হিসেবেই আমরা বহু আগ থেকেই সামাজিক ইস্যুতে আন্দোলন করে এসেছি। যেমন, সুন্দরবন রক্ষা আন্দোলন আমরা করেছি। মাদক ও তামাকজাত দ্রব্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি।’

তবে তিনি মনে করেন ইসলামি দলগুলো এ বিষয়ে আরও মনোযোগী হতে পারে।

ইসলামী আন্দোলনের অঙ্গ সংগঠন ইসলামী কৃষক-মজুর আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শহিদুল ইসলাম কবিরের কাছে জানতে চেয়েছিলাম তার দল হঠাৎ কেনো সামাজিক কর্মসূচির প্রতি মনোযোগী হলো? তিনি বলেন, ‘ইসলামি দলগুলো আগ থেকেই সামাজিক ইস্যুতে সচেতন ছিলো। তবে ধর্মীয় ইস্যুগুলো তাদেরকে অনেক বেশি ব্যস্ত রাখায় তারা এসব বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারে নি।’

শিগগির ইসলামি দলগুলোর নির্বাচনী জোট!

তবে নেতৃত্বের পরিবর্তনও এ পরিবর্তনের পেছনে একটি বড় কারণ বলে মনে করেন তিনি। তার মতে ইসলামি দলগুলোর নেতৃত্ব এখন (তুলনামূলক) তরুণদের হাতে। যারা এ সময়ের চাহিদা ও মানুষের দাবিগুলো সহজে বোঝে। এ সময়ের মানুষ চিন্তার উদারতা প্রত্যাশা করে। তারা চায় ইসলামি দলগুলো ধর্মীয় ইস্যুর বাইরে সামাজিক ও জাতীয় ইস্যুতে কথা বলুক। মানুষের প্রত্যাশার কারণেও ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচিতে পরিবর্তন আসছে।’

দেশের প্রবীণ ইসলামি রাজনীতিবিদ ও খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের ইসলামি দলগুলোর এ পরিবর্তনকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তবে তিনি মনে করেন, ইসলামি দলগুলোর উচিৎ সামাজিক ও জাতীয় ইস্যুতে আরও বেশি মনোযোগ দেয়া। কেননা মানুষের কথা না বললে মানুষ কেনো আমাদের কথা শুনবে?

‘সামাজিক ও জাতীয়  ইস্যুতে আমাদের কর্মসূচি বাড়লে ইসলামি দাবিগুলো আদায় করা সহজ হবে’ বলেন তিনি।

তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম  ইসলামি দলগুলোর সামাজিক ইস্যুতে মনোযোগী হওয়ার কারণ কি? তিনি বলেন, ‘দুটি কারণ হতে পারে, এক. বৃহত্তর জনগোষ্ঠির দৈনন্দিন জীবনের সুবিধা ও অসুবিধার বিষয়গুলো পাশ কাটিয়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া এবং বৃহত্তর সামাজিক পরিবর্তন সম্ভব নয় তা ইসলামি দলগুলো বুঝতে পেরেছে।

দুই. নিছক ধর্মীয় ইস্যুতে মানুষের জাগরণ যে সাময়িক এবং তাতে সাড়া দেয় সমাজের বিশেষ শ্রেণির মানুষ এ সত্যও তারা উপলব্ধি করতে পেরেছে।

যে কারণেই হোক ইসলামি দলগুলোর সমাজমুখী হওয়া অবশ্যই ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। সমাজ বিচ্ছিন্নতায় এ দেশে ইসলামি দলগুলো পিছিয়ে থাকার কারণ। তবে শুধু সামাজিক আন্দোলন নয়; বরং সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড বাড়াবে হবে চূড়ান্ত সাফল্যের জন্য। নিজেদের কর্মসূচির মাধ্যমে প্রমাণ করতে দেশ, জাতি ও সমাজের জন্যও তাদের রয়েছে অসীম মমতাবোধ। মিসরে ইখওয়ানুল মুসলিম এবং তুরস্কের একে পার্টি তুমুল জনপ্রিয়তার অন্যতম প্রধান কারণ জনসম্পৃক্ততা ও সমাজসেবা। জনসম্পৃক্ততা ও সমাজসেবার বলেই তার প্রতিকূল পরিবেশেও সমান জনপ্রিয়তা নিয়ে টিকে আছে বছরের পর বছর।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ