ওয়ালি খান রাজু
ইংরেজ আমলে মুসলমানদের দাবির প্রেক্ষিতে ইসলামি জ্ঞানের মারকাজ হিসেবে আলিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমানে হাতে গোনা কিছু আলিয়া মাদরাসা ছাড়া সামগ্রিক অবস্থা হতাশাজনক, এর মাঝেও দ্বীনি শিক্ষার ঝাণ্ডাবাহী নাবিক হিসেবে ঢাকা ডেমরার দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসার ভূমিকা প্রশংসনীয়।
‘আয় দারুন্নাজাতে আয়, আয় ইলমের সন্ধানে’ দারুন্নাজাতের এই থিম সং এর সাথে বাস্তবতার মিল ও খুঁজে পাওয়া যায়, ইলমি অবস্থার হতাশাজনক পরিস্থিতে দারুন্নাজাত মাদরাসা আলিয়া জগতে তার নামের সুবিচার করতে বদ্ধপরিকর।
আলিয়া মাদরাসা পরিমণ্ডলে দারুন্নাজাত যেন মুক্তির দ্বার হিসেবেই ভূমিকা পালন করছে, ১৯৯০ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকার ডেমরার সারুলিয়ায় ইবতেদায়ী শাখা দিয়ে যাত্রা শুরু করে দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসা। প্রতিষ্ঠার মাত্র ২৭ বছর হলেও এর মধ্যে দেশ ও দেশের বাইরে সুনাম কুড়িয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটি।
দাখিল, আলিম, জেডিসি ইবতেদায়ী সমাপনীতে প্রতিবছর মাদরাসা বোর্ডে সেরা অবস্থানসহ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৭ এ জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়েছে স্বনামধন্য এ প্রতিষ্ঠান।
দারুন্নাজাত মাদ্রাসা ১৯৯০ সালে ইবতেদায়ী পর্যায় থেকে যাত্রা শুরু করলেও কামিল মাদরাসা হিসেবে যাত্রা শুরু করে ২০০৪ সালের জুলাই মাসে। মাদরাসায় বর্তমান ছাত্র সংখ্যা প্রায় ছয় সহস্র।
দারুন্নাজাত মাদরাসার রয়েছে দারুন্নাজাত মহিলা শাখা , নেছারিয়া হিফজ খানা, সালেহিয়া এতিমখানা ইত্যাদি শাখা প্রতিষ্ঠান। মাদরাসার রয়েছে সুবিশাল ১৭ টি আবাসিক হল। রয়েছেন প্রায় শতাধিক শিক্ষক।
দাখিল ও আলিম স্তরে রয়েছে বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগ। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার অধীনে চার বছর মেয়াদি ফাযিল অনার্স কোর্স চালু রয়েছে দারুন্নাজাত মাদরাসায়। এছাড়া হাফেজ ছাত্রদের সুবিধার জন্য তাখসিস রয়েছে জামাত। যারা কুর আন ও হাদীসের উপর মাহের আলেম হতে চান তাদের জন্য রয়েছে আলাদা নজর, সম্পূর্ণ দরসে নেজামি পদ্ধতিতে নবম শ্রেণি থেকে বিশেষভাবে পাঠদান করা হয়।
আলিম শ্রেণির মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ মিশকাতুল মাসাবিহ খতমের সুযোগ, এছাড়া ফাযিল ও কামিল শ্রেণিতে তাফসিরে জালালাইন, খতমে বুখারিসহ বিভিন্ন বিখ্যাত হাদিস ও তাফসির গ্রন্থ বাধ্যতামূলকভাবে খতম করা হয়।
দারুন্নাজাত মাদরাসায় ইলমের পাশাপাশি আমলের প্রতিও আলাদা গুরুত্ব দেয়া হয়। প্রত্যহ ফজর নামাজের পর আবাসিক শিক্ষার্থীদের কুরআন তিলাওয়াতসহ মাগরিব নামাজের পর আওয়াবিন সালাত, যিকির বাধ্যতামূলক।
মাদরাসার শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে সহস্রাধিক বই সংবলিত সুবিশাল গ্রন্থাগার যাতে রয়েছে ইন্টারনেট সুবিধাসহ বিভিন্ন ইসলামি কিতাব,গল্প, উপন্যাস, আন্তজার্তিক জার্নাল ইত্যাদি।
অন্যান্য কার্যক্রমের মধ্যে মাদরাসায় রয়েছে আন নাজাত শিল্পী গোষ্ঠী, সাহিত্য মজলিস, সাপ্তাহিক জলসা, আরবি, ইংরেজি বক্তৃতার প্রতিযোগিতা ইত্যাদি।
সাহিত্য শাখায় দারুন্নাজাতের রয়েছে অত্যাধিক গুরুত্ব। প্রতি মাসে মাদরাসার ছাত্র শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হয় বাংলা মাসিক পত্রিকা ‘বিকাশ’। এছাড়া ইংরেজিতে দক্ষ শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হয় ইংরেজি ম্যাগাজিন। প্রতি মাসে প্রকাশিত হয় আরবি দেয়ালিকা।
দারুন্নাজাতের উস্তাদদের রয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সরব পদচারণা । ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়াতে উস্তাদগন টকশো, কলাম লিখনসহ বিভিন্নভাবে দাওয়াতি কাজে অংশগ্রহণ করে থাকেন।
সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বলয় থেকে মুক্ত দারুন্নাজাতে একাডেমিক শিক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়, রয়েছে ক্লাস এর বাইরে আলাদা স্পেশাল ক্লাস, গ্রুপ ওয়াইজ এক্সট্রা টিচিং কেয়ার ইত্যাদি।
দারুন্নাজাত মাদরাসার আরেকটি সৌন্দর্য হল এর অসাধারণ ড্রেসকোড, সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা আর টুপি পরিধানকারী শিক্ষার্থীদের মিলিত রূপ দেখলে যে কারো মন জুড়িয়ে যাবে।
জাতীয় বিভিন্ন দিবস যেমন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শোক দিবস থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইসলামি স্মরণীয় দিনগুলোতে মাদরাসায় প্রতিযোগিতার পাশাপাশি দুয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
দারুন্নাজাতের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হল মহান আল্লাহ, রাসুলে কারিম সা. ও সাহাবায়ে কেরাম এবং সুফী সাধক আউলিয়ায়ে কেরামের দিক নির্দেশনা গ্রহণ করা। সেই উদ্দেশ্যে দারুন্নাজাত ছাত্র ছাত্রীদের সুন্নাতে রাসুলের পাবন্দী হতে জোরদান করে।
সফলতার ২৬ বছরে দারুন্নাজাতের তুলনা দারুন্নাজাত নিজেই। সাধারণ ধারাতেও দারুন্নাজাতের ছাত্রদের বলিষ্ঠ পদচারণা রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, মেডিকেল কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় , চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যেমন নর্থ সাউথ, ড্যাফোডিলসহ ঢাকা কলেজ এর মত প্রতিষ্ঠানে রয়েছে দারুন্নাজাত হতে দাখিল-আলিম সমাপ্ত করা শিক্ষার্থীদের এক বিশাল অংশ।
দেশের বাইরে আল আজহার, মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়, কিং সাউদ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছে দারুন্নাজাতের শিক্ষার্থীদের সরব পদচারণা।
দেশের ইসলামি সংগীত জগতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কলরবসহ সংগীতাঙ্গনে দারুন্নাজাতের শিক্ষার্থীদের রয়েছে সরব অংশগ্রহণ, দারুন্নাজাতের অব্যাহত সাফল্যের পেছনে রয়েছেন এক সুদক্ষ কারিগর, যিনি
দারুন্নাজাত মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল আ খ ম আবু বকর সিদ্দীক।
তার সুদক্ষ পরিচালনা শক্তি আর মোহনীয় বক্তৃতা শক্তি দারুন্নাজাতকে জুগিয়েছে অফুরন্ত সাহস আর সফলতার সঞ্চয়। ইলম ও আমলের সমন্বয়ে দারুন্নাজাতের এই প্রশংসনীয় অগ্রযাত্রা বিমুগ্ধ করেছে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষদের।
দারুন্নাজাত তার সফলতার চূড়ায় বিরতিহীন, নির্ভীকভাবে অগ্রসর হবে এ প্রত্যাশাই করেছেন দেশের ইসলামী শিক্ষাবিদসহ গুণীজন।
আলিয়ায় আলো ছড়াচ্ছে তামিরুল মিল্লাত