শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

শিশুকে শাসন; জানতে হবে যে বিষয়টি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ভালো মা-বাবা'র এক প্রধান বৈশিষ্ট হলো শিশুকে সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করা। তাকে নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য-শৃঙ্খলা শেখানো। তবে শাসন করা মানে শুধুমাত্র বকা বা মারা নয়। শৃঙ্খলার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত শিশুর সামগ্রিক উন্নতি। শিশুকে কীভাবে শাসন করবেন তা নিয়ে লিখেছেন খালেদ আহমেদ

নওশীনের বয়স এখন ৬ বছর। ওর বাবা-মা ওকে নিয়ে রীতিমতো নাজেহাল। কোনো কথা শুনতে চায় না, খেতে বললে খায় না, পড়তে বসতে বললে চিৎকার করে কান্না জুড়ে দেয়। স্কুল থেকেও প্রায়ই ওর কাণ্ডকারখানার জন্য নালিশ আসে। বোঝাতে গেলেও বুঝতে চায় না, উল্টো আরও জেদ করে। বুঝতে হবে বাড়িতে ছোট বাচ্চা থাকলে, সে দুষ্টুমি করবেই। বেশিরভাগ সময়েই আপনার কথা শুনতে চাইবে না। যা বলবেন তার উল্টোটা করবে, মুখে মুখে কথা বলবে। আর আপনি ভাববেন শিশুকে সঠিক রাস্তায় আনার একমাত্র উপায় তাকে বকা, মারা বা শাস্তি দেওয়া। কিন্তু ভেবে দেখুন তো এ রকম তো কতবার হয়েছে যে বাচ্চা দুষ্টুমি করেছে আর আপনি হয়তো শাস্তিও দিয়েছেন, কিন্তু তাতে কি আপনার শিশু শুধরে গিয়েছে? আপনার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা শুরু করেছে? মোটামুটি সব বাবা-মায়েরাই এই প্রশ্নের উত্তরে 'না' বলবেন।

আসলে শিশুকে মেরে, বকে বা অন্য কোনো শাস্তি দিয়ে ভালো-মন্দ শেখানো যায় না। শিশুর কী করা উচিত বা কী করা উচিত নয় জানানোই যথেষ্ট নয়। শিশুকে শৃঙ্খলায় আনতে হলে প্রথমে তার মনোভাব বুঝতে হবে। সব শিশুকে একই উপায়ে শাসন করা যায় না। আর আপনি যদি শিশুকে শুধুই শাসন করতে যান, শিশুর কিন্তু আপনার প্রতি নেগেটিভ মনোভাব তৈরি হয়ে যেতে পারে। শাসন নিশ্চয় করবেন তবে তার থেকেও জরুরি হলো শিশুাকে আদর করা। সে যেন কখনও মনে না করে যে, মা-বাবা তাকে ভালোবাসেন না। মনে রাখবেন, কোনো কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়, না আদর, না শাসন। শিশুকে শৃঙ্খলে আনার মূল মন্ত্রই হলো আদর এবং শাসনের সঠিক ব্যালেন্স। শিশুর মধ্যে ভালো অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য এবং তাকে শৃঙ্খলাবোধ শেখানোর জন্য মৌখিক নির্দেশের থেকেও বেশি জরুরি বড়দের নিজেদের আচরণ। শিশুরা সাধারণত বাড়ির বড়দের দেখেই কিছু শেখে। সে ক্ষেত্রে শিশুদের কিছু শেখানোর আগে দেখে নিতে হবে যে নিজেদের ব্যবহারে কোনো পরিবর্তন আনা প্রয়োজন কি না। ছোট ছোট আচরণ, যেমন—সময়ের কাজ সময়ে করা, জামাকাপড় ছেড়ে ভাঁজ করে রাখা, ঘর থেকে বেরোনোর আগে আলো-পাখা বন্ধ করা, খাবার নষ্ট না করা ইত্যাদি শিশুর সুঅভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

শিশুকে শৃঙ্খলা শেখানোর বা শাসন করার কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি হয় না। আপনাকে প্রথমে শিশুর সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশতে হবে। তার সমস্ত কথা মন দিয়ে শুনতে হবে। তবেই আপনি শিশুকে পুরোপুরি বুঝতে পারবেন। আসল কথা হলো, শিশুকে ভালোমন্দ শেখানো। শিশুকে তার দায়িত্ব বুঝতে দিন। অনেক সময় এ রকম হয় যে, আপনি রেগে গিয়ে হয়তো সন্তানকে মেরে বসবেন বা নিজের ঘরে যেতে বলবেন। কিন্তু ভেবে দেখুন তো, এতে তার কি কোনো উপকার হবে। পরিবর্তে আপনি যদি সন্তানকে আপনার কাজে সাহায্য করতে বলেন তা হলে তার প্রতি মনোযোগ দেওয়াও হবে আর আপনার কাজ করতেও সুবিধে হবে। সন্তানকে বাড়ির বিভিন্ন কাজকর্মে ইনভলব করুন। ওর মতামত নিন। এতে ও নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে এবং আপনার কথা শুনতে আপত্তি করবে না। সন্তানকে শাসন করার সময় মোটিভেট করা খুব জরুরি। যেমন ধরুন আপনার সন্তান হোমওয়ার্ক করতে চাইছে না। আপনি হয়তো অনেক বুঝিয়েও তার সঙ্গে পেরে উঠছেন না। না বকে আপনি বলতেই পারেন, যে হোমওয়ার্ক না করলে ও কার্টুন দেখতে পারবে না (যারা কার্টুনে অভ্যস্ত) বা বাইরে খেলতে যেতে পারবে না। ওর কাছে এটা মোটিভেশনের মতো কাজ করবে। দেখবেন এতে প্রথম দিকে কাজ না হলেও পরে ও নিজেই হোমওয়ার্ক করার জন্যে আগ্রহ দেখাবে। সন্তানকে এই সময় উত্সাহ দিন। আপনি হোমওয়ার্ক শুরু করতে সাহায্য করুন।

মাঝেমধ্যে গিয়ে দেখুন শিশুর কোনো অসুবিধে হচ্ছে কি না। ও যা কাজ করছে তার প্রশংসা করুন। এইভাবে ওর নিজের কাজের প্রতি সচেতনতা গড়ে তুলুন। অনেক সময় মা-বাবারা শাসন করতে গিয়ে সন্তানের সঙ্গে অতিরিক্ত কঠোর হয়ে পড়ে। তাঁদের মনে রাখতে হবে শাসন করা মানেই কিন্তু কঠোর মনোভাব পোষণ করতে হবে তার কোনো মানে নেই। উল্টো যদি আপনি আদর করে ওকে সঠিক বেঠিকের পার্থক্য শেখান, তা হলে সন্তান অনেক তাড়াতাড়ি বুঝে যাবে।

শিশুর মনোবিকাশ
মা-বাবাই শিশুর যাবতীয় শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন। শিশুর শরীর তা বাবা-মায়ের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে যেমন তৈরি, তেমনই তার মনের অবস্থার জন্য বাবা-মায়ের দায়িত্ব প্রচুর। তবে শিশুর মানসিক সমস্যায় এখন মা-বাবারা আগের থেকে অনেক বেশি সচেতন। শিশুর নানা সমস্যায় সব সময় ওষুধ নয়, রেসেডিয়াল এডুকেশন, সাইকোথেরাপি এবং ক্ষেত্রবিশেষে কাউন্সিলিং কাজ করে ভালো। দেরিতে শেখা শিশুদের ক্ষেত্রে বয়সের চেয়ে স্কুলের স্ট্যান্ডার্ড পালটে যায়। এসব ক্ষেত্রে আইকিউ টেস্টের দরকার। বহু ক্ষেত্রে দেখা যায় লার্নিং ডিজ্যাবিলিটি থাকলে বুদ্ধির পরীক্ষা করলে তার পড়াশোনা ছাড়া অন্য দিকের দক্ষতার প্রতি নজর দেওয়ার সুযোগ ঘটে। কারণ এসব ক্ষেত্রে ইন্টেলিজেন্স ও মেমোরি ঠিক থাকলেও কনসেপ্ট ফরমেশনে বেশ কিছু গÐগোল দেখা যায়। এ ধরনের সমস্যার কারণ মা-বাবারা নন, তবে রিডিং, রাইটিং বা এরিথমেটিকে সমস্যা দেখা দিলে শিশুর যে বিশেষ ধরনের ডিসঅর্ডারের আশঙ্কা থাকে এটা বুঝতে অনেক সময়েই দেরি হয়ে যায়।

টিপস
ছোটবেলা থেকেই স্কুল আর পড়াশোনা নিয়ে বাড়িতে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা উচিত নয়।
মা-বাবারা স্কুল/মাদরাসার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন।
শিক্ষকের প্রত্যাশা বনাম শিশুর দক্ষতা ও দুর্বলতার জায়গাগুলোকে চিহ্নিত করা দরকার।
শিশু আর বাবা-মায়ের কমিউনিকেশনটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
দুই সন্তানদের মধ্যে তুলনা করবেন না।
নিজের রাগ-দুঃখ-হতাশার জের শিশুর ওপর চাপাবেন না।
নিজের মাতৃত্ব বা পিতৃত্বের ভূমিকা ও দায়িত্ব সম্বন্ধে সচেতন হতে হবে।

দাম্পত্য সম্পর্ক ভালো রাখবেন যেভাবে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ