হাসান আল মাহমুদ
প্রতিবেদক, আওয়ার ইসলাম
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ প্রান্তে খোলা জায়গায় বসেছে বাংলাদেশ হালাল এক্সপো ২০১৭। ১৬ জুন থেকে শুরু হয়ে মেলা শেষ হচ্ছে আজ।
গতকাল বৃষ্টিমুখর বিকেলে মেলায় প্রবেশ করে দেখা যায় ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ নামের এক ক্রেতা আওয়ার ইসলামকে বলেন, হালাল পণ্যের সাথে হারাম পণ্যের ছড়াছড়িও রয়েছে বাজারে। পণ্যের প্রক্রিয়াজাতের কারণেই হারামের বিষয়টা আসে। আমরা বাজার থেকে হালাল টাকায় পণ্য কিনে যদি হালালটাই না কিনতে পারি! এ জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ। একটি হালাল মেলার প্রদর্শনী করার জন্য। এতে আমরা খুব সহজে চিনতে পারব কোন পণ্যটি হালাল আর কোনটি হারাম।
মেলা থেকে পণ্য কিনে ফিরছিলেন আরেক ক্রেতা মুহাম্মদ সাইদুর রহমান। তিনি আওয়ার ইসলাম হয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আসলে কি বাজার থেকে তো আমরা টাকা দিয়ে চিকেন, জুস ইত্যাদি পণ্য কিনে আনি। কিন্তু প্রক্রিয়াজাতের কারণে পণ্যটা হালাল না হারাম তা তো বুঝতে পারি না। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কোম্পানিগুলোর পণ্যকে যাচাই করে হালাল সার্টিফিকেট দিয়ে হালাল পণ্যের মেলা প্রদর্শনি করায় আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল এই পণ্যটা হালাল।
খোলা বাজার থেকে পণ্য কেনা আর হালাল সনদপ্রাপ্ত কোম্পানির পণ্য কেনার মধ্যে কেমন নির্ভার অনুভব করছেন জানতে চাইলে আয়েশা নামের এক ক্রেতা বলেন, অবশ্যই এখন নির্ভার অনুভব করছি। হালাল প্রদর্শনী করার মাধ্যমে আমরা পণ্যগুলোকে চিনতে পারছি এই পণ্যটার হালাল হওয়ার সনদ রয়েছে। এতে আমরা খুব আস্থার সাথে হালাল পণ্য কিনতে পারি।
তিনদিনব্যাপী এ মেলায় অংশ নিয়েছে ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টস লিমিটেড, এজি অ্যাগ্রো ফুডস্ লিমিটেড, হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াকফ) বাংলাদেশ, নেসলে বাংলাদেশ, প্রাণ ফুডস লিমিটেড , ডেন ফুডস লিমিটেড ও স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডসহ নামিদামি ১৬টি প্রতিষ্ঠান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেলা কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা জানান, সরকারি উদ্যোগে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে প্রণীত এবং ওআইসির হালাল স্যান্ডার্ড অনুসরণে প্রস্তুতকৃত ইসলামিক ফাউন্ডেশন হালাল সনদ নীতিমালা মোতাবেক ২০০৭ সাল থেকে আবেদনকৃত বিভিন্ন কোম্পানীকে যাচাই করে হালাল সনদ দিয়ে আসছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০টি কোম্পানিকে হালাল সনদ দেয়া হয়েছে। হালাল প্রদর্শনী মেলায় অংশ গ্রহণের জন্য অনেক কোম্পানিই আবেদন করেছে। তন্মধ্যে ১৬টি কোম্পানির কাগজপত্র থেকে শুরু করে সবকিছু ওকে হয়েছে বিধায় তাদেরকে এখানে নিজ নিজ হালাল পণ্য প্রদর্শনির সুযোগ প্রদান করা হয়েছে। বাকি কোম্পানিগুলোর আবেদন জাস্টিফাই করা হচ্ছে।
হালাল প্রদর্শনী মেলায় অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর সবার দাবি মেলাটির ধারাবাহিকতা যাতে বজায় থাকে। সেই সাথে মেলাটি যাতে বড় কোন মাঠে করা যায় সে উদ্যোগ নিতে আওয়ার ইসলাম মারফত ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে আহবান জানান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ।
হামদর্দ ল্যাবরেটরিজের ফিল্ড ম্যানেজার এস এম সেলিম উদ্দিন আওয়ার ইসলাম হয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমরা দৃঢ় আশা রাখি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন মেলার ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে এবং বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে হালাল পণ্যের প্রতি মানুষকে আরো সচেতন করে তুলবে।
মডার্ণ হারবাল গ্রুপের চিপ মেডিসিন ডাক্তার মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব আওয়ার ইসলামকে বলেন, আমি মনে করি এই হালাল প্রদর্শনী মেলা বাংলাদেশের জন্য একটা বিশেষ পাওয়া। এটা হওয়ার কথা ছিল আন্তর্জাতিকভাবে। সময়ের অভাবে তা বাংলাদেশে হচ্ছে। সারা বিশ্বে যেহেতু হালালের একটা মার্কেট-ওয়ার্লড ওয়াইড আছে। বাংলাদেশের জন্য আমি মনে করি অবশ্যই এটা একটা চমৎকার উদ্যোগ।
তিনি আরো বলেন, হালাল শব্দটা কিন্তু ইসলামের শব্দ। ইসলাম ধর্মটা যেমন সারা বিশ্বের সবার কাছে সমাদৃত, তেমনি হালাল প্রোডাক্টও পৃথিবীর সবার কাছে সমাদৃত। আমি মনে করি ইসলাম নির্দেশিত হালাল পণ্য ডে বাই ডে ভালো মার্কেট পাচ্ছে এবং পেতেই থাকবে। সেজন্য হালাল মেলা আন্তর্জাতিকভাবে হওয়া উচিত বলে মনে করি।
হাসিব এন্টার প্রাইজ এন্ড এগ্রোভেটের মার্কেটিন অফিসার রতন আওয়ার ইসলামকে বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের হালালজাত করণকে নষ্ট করে দিচ্ছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন এই মেলাটা করে সাধু-অসাধু ব্যবসায়ীর তফাৎ ধরিয়ে দিচ্ছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে এজন্য ধন্যবাদ জানাই। এ মেলা করার কারণে অলমোস্ট বাংলাদেশের মানুষ হালাল পণ্যগুলো জানতে পারছে। আমি মনে করি বাণিজ্য মেলার মতো এ মেলাটাকে বড় পরিসরে, বড় মাঠে আরো দীর্ঘায়িত সময় নিয়ে করলে সনদপ্রাপ্ত হালাল পণ্যের প্রতি মানুষের ঝোঁক বাড়বে।
বায়তুল মোকাররমে চলছে হালাল পণ্যের মেলা