নেত্রকোনা জেলার ঐতিহ্যবাহী দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া মিফতাহুল উলুম মাদ্রাসার মুহ্তামিম মুফতি মোঃ তাহের কাসেমীকে অন্যায়ভাবে বহিস্কার করার প্রতিবাদে রবিবার বিকালে নেত্রকোনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মুফতি তাহের কাসেমী ও তার অনুসারীরা।
সংবাদ সম্মেলনে মুফতি তাহের কাসেমী বলেন, অত্র অঞ্চলে দ্বীনী শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে ১৯৪২ সালে জেলা শহরের বারহাট্টা রোডে ১২.০৭ শতাংশ জমিতে মিফতাহুল উলুম মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে প্রায় ২৫ শতাংশ ভূমির উপর মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে মাদরাসার নামে দানকৃত মাদরাসা সংলগ্ন দক্ষিণ পাশে চারতলা একটি ভবন, দোকানপাট ও জমিজমাসহ মাদ্রাসার নামে অন্তত ২৪-২৫ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। প্রতি বছর মাদরাসার বাসা, দোকান ভাড়া ও নিজস্ব ধানী জমি থেকে সহাস্রাধিক মন ধানসহ অন্তত ৪০-৫০ লাখ টাকার মত আয় হয়ে থাকে। মাদ্রাসার এই বিশাল সম্পত্তি ভোগ ও কর্তৃত্ব নিয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাথে শিক্ষকদের মতদ্বৈততা ও দ্বন্ধ-কোন্দলের সৃষ্টি হচ্ছে।
মাদ্রাসার সম্পত্তি ভোগ ও কর্তৃত্ব নিয়ে বিরোধের কারনে বিগত ২০১০ সালে চরম অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। অচলাবস্থা নিরসনে ২০১০ সালের ১২ আগস্ট আমাকে মাদ্রাসার মুহতামিম হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সাথে কঠোরভাবে হাল ধরায় অল্প কিছুদিনের মধ্যে মাদ্রাসায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসায় ছাত্র শিক্ষক অভিভাবকসহ সকলের মাঝে স্বস্থি ফিরে আসে। মাদ্রাসার নানা অনিয়ম, কতিপয় শিক্ষকের নেতিবাচক কর্মকান্ড প্রতিরোধ ও কমিটির সদস্যদের কাছে থাকা দোকান ঘরের ভাড়া বৃদ্ধিসহ মাদ্রাসার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের উদ্যোগ গ্রহন করায় প্রভাবশালী সুবিধাভোগীদের স্বার্থহানীর আশঙ্কায় তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমার বিরুদ্ধে নানা ধরণের ষড়যন্ত্র শুরু করে।
মাদরাসার কাজে গত বছরের ৩ অক্টোবর নেত্রকোনা থেকে মোটর সাইকেল যোগে আটপাড়ায় যাবার পথে দরবেশপুর ব্রিজের কাছে সড়ক দুর্ঘটনায় আমি গুরুতরভাবে আহত হই। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্যরা আমাকে সহায়তার পরিবর্তে নভেস্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমার চার মাসের অর্ধেক বেতন কর্তন করেন। ষ
ড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কমিটির সদস্যরা আমার বিরুদ্ধে সাধারণ ছাত্রদের উস্কানী, অসত্য তথ্য উপস্থাপনসহ মাদরাসার সুনাম বিনষ্টের অভিযোগ আনয়ন করে গত ১৪ ফেব্রæয়ারি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কর্তৃক আমাকে শো’কজ করা হয়। আমি ২৭ ফেব্রুয়ারি শো’কজের জবাব দেই। গত ২৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ম্যানেজিং কমিটির সভায় ১ মে থেকে আমাকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমাকে অন্যায় ভাবে মাদ্রাসা থেকে বরখাস্ত করায় মাদ্রাসার ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক ও সচেতন ধর্মানুরাগীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। মাদ্রাসার অধিকাংশ ছাত্র কমিটির এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত ২ মে থেকে অনুষ্ঠিত বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন করে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মাদ্রাসার বিপুল সংখ্যক ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকগণ মুফতি তাহের কাসেমীর অন্যায়ভাবে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে মাদ্রাসার শিক্ষার অনুকুল ও সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন। খবর ইনকিলাব।
এসএস/