আওয়ার ইসলাম: অর্থের লোভে অন্ধ হয়ে যাওয়ার একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে। অর্থের লোভে কেউ কেউ মারাত্মক অপরাধের জন্ম দেন, আবার নিজের সন্তানকে বিক্রি করে দেয়ার নজিরও মেলে। কিন্তু ভারতের উত্তর প্রদেশের কনৌজে এর চেয়েও ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছে। সেখানে ‘বলি’ দেয়ার উদ্দেশ্যে নিজের নাবালিকাকেই তান্ত্রিকের হাতে তুলে দিলেন মা- বাবা।
এর পরের ঘটনাগুলো আরো ভীতিকর। কয়েকটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে ওই বাবা-মা’কে অর্থের লোভ দেখিয়ে ধর্মীয় আচরণের দোহাই দিয়ে শিশুটিকে বলি দেয় ওই তান্ত্রিক। এরপর মৃতদেহের ওপর সে চালায় পাশবিক নির্যাতন। এ ঘটনায় ওই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের পর সারা ভারতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড় ওঠে।
বৃহস্পতিবার ওই নাবালিকার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার বীভৎসতায় চমকে উঠেছে তারাও। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নাবালিকার বাবা-মাকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। জেরায় পুলিশ জানতে পেরেছে, ১৪ বছরের ওই শিশুর নাম কবিতা। তার বাবা মহাবীর প্রসাদ সোনা ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন ধরেই মন্দা চলছিল তার ব্যবসায়। আর্থিক চাপে দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন বলেই জানিয়েছেন বছর পঞ্চাশের মহাবীর এবং তার স্ত্রী পুষ্পা। এই দুর্দশা থেকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে তাদেরই গাড়িচালক। নাম কৃষ্ণ শর্মা। সে আবার ‘স্বঘোষিত’ তান্ত্রিকও বটে। ব্যবসা বাঁচাতে ওই গাড়িচালক ওরফে তান্ত্রিকের বিধান ছিল নানা ধর্মীয় উপাচারে কবিতাকে বলি দেওয়া। বলির ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই মিলবে ‘গুপ্তধন’ ৫ কিলোগ্রাম সোনা। সোনার লোভে নিজের মেয়েকেও বলি দিতে রাজি হয়ে যান মহাবীর ও পুষ্পা।
পুলিশ জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার রাতে, তান্ত্রিকের কথামতো কবিতাকে নিয়ে অন্নপূর্ণা মন্দিরে যান মহাবীর ও পুষ্পা। তার আগে কবিতাকে কোনো নেশার জিনিস খাইয়ে অচেতন করে রাখা হয়েছিল। গোটা ব্যাপারটারই তদারকি করছিল ওই স্বঘোষিত তান্ত্রিক ওরফে কৃষ্ণ। এর পর পিপারিয়া ও বাঢোসা গ্রামের মাঝে একটি অশ্বত্থ গাছের কাছে নানা তান্ত্রিক উপাচার শুরু হয়। প্রথমেই বলি দেওয়ার নামে কবিতাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে ওই তান্ত্রিক। ধর্মীয় বিধির দোহাই দিয়ে মৃতদেহকে নিয়ে যাওয়া হয় পাশের একটি মাঠে। দেহ লোকানোর সময় সেখানেই মৃতদেহ ধর্ষণ করে ওই তান্ত্রিক ওরফে কৃষ্ণ। এর পর গলা কেটে সেই রক্ত নিয়ে এসে ফের পুজো দেওয়া হয়। গোটা ঘটনাটাই ঘটে মহাবীর ও পুষ্পার চোখের সামনেই। মেয়ের এই দুর্দশা দেখেও মুখে কুলুপ এঁটে দাঁড়িয়েছিলেন তারা।
সমস্যা শুরু হয় এর পরেই। বলি দিয়ে ততক্ষণে গা ঢাকা দিয়েছে তান্ত্রিক। এদিকে সোনা পাওয়ারও আশা নেই দেখে নিজেরাই পুলিশের কাছে গিয়ে মেয়ের অপহরণের গল্প ফাঁদেন মহাবীর। অসংলগ্ন কথাবার্তায় সন্দেহ হয় পুলিশের। তদন্তে নেমে সামনে আসে এই ভয়ানক সত্য। ওই দম্পতির আরো একটি মেয়ে আছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। এর পরেই ওই তান্ত্রিকের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়। বুধবার নিজের গ্রাম থাতিয়া থেকে ওই ‘স্বঘোষিত’ তান্ত্রিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সুত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
এসএস/