আওয়ার ইসলাম: হবিগঞ্জের প্রসিদ্ধ মাদরাসা জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া উমেদনগর। মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানীর খলীফা মাওলানা মিসবাহুজ্জামান রহ. এর হাতে ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এ মাদরাসা। বর্তমানে মাদরাসাটির মুহতামিমের দায়িত্বে আছেন মাওলানা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী।
বেফাক বোর্ডভূক্ত মাদরাসাটি এ বছর দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষার জন্য আল হাইআতুল উলইয়ার লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীনে রেজিস্ট্রেশন করেও পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।
জামিয়া ইসলামিয়া উমেদনগরের দাওরায়ে হাদীস (মাস্টাস) পরীক্ষা গত কয়েক বছর ধরে কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের অধীনে হয়ে আসছে। এবছরও দাওরায়ে হাদীসে ১৬ জন ছাত্রের পরীক্ষার ফিসহ নিবন্ধন করা হয় বেফাকে। এর ভেতরেই সরকার বেফাকসহ দেশের ৬টি শিক্ষাবোর্ডকে একত্র করে কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদীসকে মাস্টার্সের মান দেয়া হয়। পরে ৬টি বোর্ডের সমন্নয়ে ‘আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া ’ নামে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের আলোকে ছাত্রদের নিবন্ধন করে। বেফাক তাদের মাধ্যমেই রেজিস্টেশন করে তাদের প্রবেশপত্র মাদরাসায় প্রেরণ করে। কিন্তু প্রবেশ পত্র পাওয়ার পর পরীক্ষা না দেয়ার ব্যাপারে আচানক সিদ্ধান্ত নেয় মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানায়, কর্তৃপক্ষ জামিয়া উমেদনগরকে কেন্দ্র না করাসহ আঞ্চলিক কিছু মতভেদের কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেন মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে মাদরাসার মুহতামিম জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্ত্রীয় সহ সভাপতি, বিএনপি নেতৃত্ত্বাধীন ২০দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী আওয়ার ইসলামকে বলেন, খতমে বুখারীর পর ছাত্ররা সাবাই বাড়ি চলে গেছে। তারা পরীক্ষার জন্য আর আসেনি।
জানা যায়, ছাত্ররা বার বার যোগাযোগ এবং অনুরোধ করেও প্রবেশপত্র পেতে ব্যর্থ হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্র বলেন, আমরা মাদরাসার উস্তাদ মাওলানা মাসরুরুল হকের পায়ে ধরে প্রবেশ পত্র দিতে অনুরোধ করি কিন্তু তিনি রাজি হননি।
এক ছাত্রের অভিভাবক আব্দুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, দাওরায়ে হাদিসের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় ছাত্রদের প্রবেশপত্র আটকে রেখে পরীক্ষা দিতে না দেয়া বড় অন্যায়।
তিনি বলেন, যেখানে আল্লামা আহমদ শফিসহ দেশের সকল আলেম স্বীকৃতির ব্যাপারে একমত তখন এমন আচরণ আল্লামা আহমদ শফি ও সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল।
জানা গেছে, এ ঘটনার প্রেক্ষিতে জামেয়ার ৭ শিক্ষক ১৫ মে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। গতকাল হবিগঞ্জ জেলার একমাত্র কেন্দ্র চুনারুঘাট শামসুল উলুম মাদরাসায় গিয়ে দেখা যায় জেলার ৮৮জন পরিক্ষার্থীর মাঝে ৬৬জন পরীক্ষা দিচ্ছে। উমেদনগর জামেয়ার ১৬ জনের কেউ নেই।
হল সুপার মাওলানা শিব্বির আহমদ জানান, উমেদনগর জামিয়ার তিন ছাত্র প্রবেশপত্র ছাড়া গতকাল হলে পরীক্ষা দিতে এসেছিল। প্রবেশপত্র না থাকায় আমরা সুযোগ দিতে পারি নি। বিষয়টি আমরা কেন্দ্রকে জানিয়েছি।
৭ জন শিক্ষকের পদত্যাগ বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে উমেদনগর মাদরাসার শিক্ষক মুফতি কবীর আহমদ আওয়ার ইসলামকে বলেন, ৭ জন শিক্ষক পদত্যাগের বিষয়টি ঠিক নয়। দুজন শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন। তবে তারা পরীক্ষা সংক্রান্ত কারণে নয় বরং আগে থেকেই প্লান ছিল তারা চলে যাবেন।
১৬ জন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা না দিয়ে ভবিষ্যৎ ক্ষতির মুখে ফেলে দেয়া হলো কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ এটা তো দু:খজনক।
কিন্তু আপনারা তাদের জন্য কোনো উদ্যোগ নিলেন না কেন? এ ব্যাপারে মুফতি কবীর বলেন, আমরা তো এ দায়িত্বে নেই। আমরা একটা পরিবারের মধ্যে রয়েছি এখানে সবাই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।
পরীক্ষা না দেয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে পরীক্ষার্থী হেলাল আহমদ নোমানকে ফোন করা হলে তিনি পাঁচ মিনিট পর ফোন করতে বলেন। পাঁচ মিনিট পর ফোন করলে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানি না। এগুলো হুজুররা বলবেন।
তবে চাপাচাপি করলে তিনি বলেন, আমাদের এবারের প্রস্তুতি ভালো হয়নি এ কারণে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী বছর ভালো প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দেব।
আরেক পরীক্ষার্থী মুহাম্মদ ওয়াসেক বিল্লাহকে ফোন করলে তিনিও প্রথমে পাঁচ মিনিট পর ফোন করতে বলেন। পাঁচ মিনিট পর কল দিলে বলেন, আমরা কেন পরীক্ষা দিচ্ছি না এর কারণ অচিরেই আপনারা জানতে পারবেন। এই বলে তিনি লাইন কেটে দেন। পরে দুইবার কল দিলেও আর সিরিভ করেননি।
এক স্ত্রীতে সন্তুষ্ট থাকা পাপ: সৌদি মুফতি আবদুল্লাহ
বাংলাদেশের ফতোয়া বিভাগ নিয়ে ফিকহবিদগণ যা বললেন