মুহাম্মদ রাকিব হাসান: আজ ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস। ১৯৭৬ সালের এই দিনে ভারত সরকার একতরফা গঙ্গার জল অপসারণের মাধ্যমে পদ্মা নদীকে জলশূন্য করে ফেলার বিরূদ্ধে মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এই প্রতিবাদী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
ফারাক্কা বাঁধ গঙ্গা নদীর উপর অবস্থিত একটিবাঁধ। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহ ওমুর্শিদাবাদ জেলায় এই বাঁধটি অবস্থিত। ১৯৬১ সালে এই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল থেকে বাঁধ চালু হয়। এই বাঁধ চালু করার কয়েক মাসের মধ্যে এর ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়।
শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার পানি অপসারণের ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এতে বাংলাদেশকে কৃষি, মৎস্য, বনজ, শিল্প, নৌ পরিবহন, পানি সরবরাহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়। বাংলাদেশের পরিবেশে ফারাক্কার সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে মাওলানা ভাসানী এর বিরূদ্ধে প্রতিবাদের জন্য জাতির প্রতি আহবান জানান।
এরই প্রেক্ষাপটে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ মে পদ্মা নদীর তীরবর্তী বিভাগীয় শহর রাজশাহী মাদ্রাসা ময়দান থেকে মরণবাঁধ ফারাক্কা অভিমুখী এই অভিযাত্রা শুরু করা হয়। ভারতীয় পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৭৬ সালের এই দিনে রাজশাহীর মাদরাসা ময়দান থেকে মারণবাঁধ ফারাক্কা অভিমুখে লাখো মানুষের লংমার্চ অনুষ্ঠিত হয়।
ভারতবিরোধী নানা স্লোগানে মুখরিত লাখো মানুষের স্রোতে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী তার জ্বালাময়ী ভাষণে ভারতের উদ্দেশে বলেন, "তাদের জানা উচিত বাংলার মানুষ এক আল্লাহকে ছাড়া আর কাউকে ভয় পায় না। কারো হুমকিকে পরোয়া করে না। আজ যে ইতিহাস শুরু হয়েছে তা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করবে।"
লংমার্চে মাওলানা ভাসানী সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের অভ্যন্তরে ফারাক্কা পর্যন্ত পদযাত্রার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকারের পরামর্শে এই পদযাত্রা ১৭ মে অপরাহ্নে ভারতীয় সীমান্তের কাছে কানসাটে গিয়ে শেষ করা হয।ঐ দাবি উত্থাপনের নিমিত্তেই আজকের এই দিনে ফারাক্কা লংমার্চ দিবস পালিত হয়।