আওয়ার ইসলাম : ভারতের বিজেপিশাসিত গুজরাটে গরু জবাই করলে এবার যাবজ্জীবন সাজা এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার শাস্তি রেখে আজ (শুক্রবার) গুজরাট বিধানসভায় গোরক্ষা সংক্রান্ত আইনের সংশোধনী বিল পাস হয়।
২০১১ সালে নরেন্দ্র মোদি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সেসময় ১৯৫৪ সালের গুজরাট পশুপ্রাণী রক্ষা আইন সংশোধন করা হয়। এতে গরু জবাই, গরুর গোশত আমদানি-রফতানি, বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়। ওই আইন অমান্য করলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের ব্যবস্থা রাখা হয়। এবার পুরনো আইন আরো কঠোর করে গরু জাবাইকারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দেশে এ পর্যন্ত গোরক্ষা নিয়ে যত আইন সংশোধন করা হয়েছে তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজ্য গুজরাটেই গরু জবাইয়ের অপরাধে সবচেয়ে কঠোর সাজার ব্যবস্থা করা হলো।
কিছুদিন আগেই গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, রাজ্য সরকার গোহত্যা সংক্রান্ত আইন আরো কঠোর করতে যাচ্ছে। বিজেপি গরু, গঙ্গা, গীতা রক্ষায় দায়বদ্ধ বলেও তিনি জানিয়েছিলেন।
গতবছর গুজরাটের উনায় স্বঘোষিত গোরক্ষকরা মরা গরুর চামড়া ছাড়ানোকে কেন্দ্র করে কিছু দলিত সম্প্রদায়ের মানুষজনকে বেদম প্রহার করায় দেশ জুড়ে ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানানো হয়।
গুজরাটে চলতি বছরের নভেম্বরে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তার আগে বিজেপি সেখানে গরু জবাই সংক্রান্ত আইন কঠোর করায় একে নির্বাচনের প্রস্তুতি বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এছাড়া রাজ্যটি প্যটেল/পাটিদার জন্য শিক্ষা ও চাকরিতে সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলনে কিছুদিন ধরেই উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে ওই দিক থেকে মোড় ঘোরাতে মেরুকরণে নয়া গরু রক্ষা আইন বিজেপি’র রাজনৈতিক অস্ত্র হতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
ভারতে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট, হিমাচল প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ছত্তিসগড়, চণ্ডীগড়, দিল্লি এবং জম্মু-কাশ্মিরে গরু জবাইয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
অন্যদিকে, বিহার, ঝাড়খণ্ড, উড়িষ্যা, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, গোয়া এবং চারটি কেন্দ্র শাসিত এলাকা দমন ও দিউ, দাদরা ও নগর হাভেলি, পন্ডিচেরি, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে এ নিয়ে আংশিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, অসম, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, সিকিম এবং কেন্দ্রশাসিত লাক্ষাদ্বীপে গরু জবাইয়ে আইনি কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। পশ্চিমবঙ্গ এবং অসমে কসাইখানায় গরু জবাইয়ের জন্য উপযুক্ত প্রমাণপত্রের প্রয়োজন হয়। সাধারণত ১৪ বছরের বেশি বয়স, যাদের প্রজনন ক্ষমতা নেই অথবা কাজের অনুপযুক্ত এমন গরুদের ক্ষেত্রে প্রমাণপত্র প্রযোজ্য।
-এআরকে