সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

ইসলামী যুব আন্দোলনের কর্মীচিন্তা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

Jubokমুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন : যুবকরাই জাতির নিয়ামক শক্তি। যে কোনো দেশ বা জাতি গঠনে, সমাজ বিনির্মাণে আদর্শ যুব শক্তির বিকল্প নেই। পৃথিবীর কোথাও, কোনো দেশে যুবকদের ভূমিকা ছাড়া কোনো সভ্য সমাজ গঠন হয় নি। কোনো বিপ্লব সফল হয় নি। কোনো আদর্শিক পরিবর্তন-পরিবর্ধন আসে নি। আমাদের দেশও এই ধারাবাহিকতার বাইরে নয়। ইতিহাসের সকল আন্দোলন সংগ্রাম সফল হয়েছে যুবকদের অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে। আমাদের ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সকল ক্ষেত্রেই যুবকদের ভুমিকা ছিল অগ্রগণ্য।

কোনো সমাজ গঠন বা আদর্শিক পরিবর্তনের জন্য যেমন যুবকদের বিকল্প নেই, তেমনি সমাজ বা জাতি ধ্বংস করতেও যুগে যুগে যুবকরা ব্যবহৃত হয়েছে। জাগিগতভাবে কাউকে ধ্বংস করতে হলে, আদর্শিক, নৈতিক বা সাংস্কৃতিক পতন ঘটাতে হলে সব সময় প্রথম টার্গেট করা হয় যুবকদের।

বিভিন্ন আগ্রাসনের মাধ্যমে যুব সমাজকে করা হয় বিপথগামী। যেমন দীর্ঘ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে, আমাদের প্রিয় দেশটাকে করদরাজ্য বানানোর বাসনায় আমাদেরই প্রতিবেশী কোনো কোনো রাষ্ট্র দীর্ঘ দিন যুবকদের বিপথী করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তারা ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক দিয়ে আমাদের যুবকদের মেরুদণ্ডহীন করার চেষ্টা করছে।

আকাশ সংস্কৃতির সুযোগ গ্রহণ করে আমাদের যুবকদের সাংস্কৃতিকভাবে হত্যা করার চেষ্টা করছে। তারা যুবকদের মধ্যে সফলভাবে ঢুকিয়ে দিয়েছে বিজাতীয় অপসংস্কৃতি। বিদেশি এই ষড়যন্ত্রকারীদের দোসর হিসাবে কাজ করছে, করেছে বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা শাসক গোষ্ঠি এবং কিছু জ্ঞানপাপী বুদ্ধিজীবী।

বিভিন্ন সময়ে শাসক গোষ্ঠি তাদের ক্ষমতা পাকাপক্ত করার জন্য যুবকদের হাতে তুলে দিয়েছে অস্ত্র। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ করে দিয়েছে। যুবকদের মোহগ্রস্ত করে রাখতে ঢাকাসহ জেলা শহরগুলো খুলেছে মদের দোকান। নৈতিক এবং চারিত্রিকভাবে যুব সমাজকে বিপথী করার জন্যে যতোগুলো মাধ্যম আছে তার সবগুলোই শাসক গোষ্ঠি সহজ করে রেখেছে।

চেতনা, প্রগতি, মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তা নামের কিছুচটকদারশব্দ ছড়িয়ে দিয়ে মুখচেনা কুবুদ্ধিজীবীরা যুব সমাজকে ধর্ম, আদর্শ এবং নৈতিকতা থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করছে। বিদেশি এনজিও এবং স্বদেশি শাসক গোষ্ঠির দালাল এসব বুদ্ধিজীবীরা আপদমস্তক জাতি বিধ্বংসী ষড়যন্ত্রে নিমজ্জিত।

তারা একজন যুবকের মুখে দাড়ি দেখলে আৎকে ওঠে, কিন্তু ফেনসিডিলের শিশি দেখলে, গাজার কৈলকে দেখলে, হিরোইন, ইয়াবার সরু ধোয়া দেখলে আৎকে ওঠে না। তখন তাদের গাত্রদাহ হয় না, বরং পুলকিত হয়।

একজন যুবতীর মাথায় হিজাব দেখলে তাদের শরীরে খিঁচুনি হয়। সংস্কৃতি গেল, প্রগতি গেল বলে শোরগোল বাধিয়ে দেয়, কিন্তু টাইট জিন্স, টিশার্ট দেখলে তাদের তা মনে হয় না। তখন তাদের আপন সংস্কৃতির কথা মনে পড়ে না। বরং যুবতীদের খোলা শরীরের গন্ধ তাদের নিয়ে যায় হারবাল ওষুধের দোকানে।

বাংলাদেশের প্রথম সারির সবগুলো রাজনৈতিক দলের যুব সংগঠন আছে। এসব সংগঠনের বয়স একেবারে কম নয়। কিন্তু তাদের নৈতিক বা আর্শিক কোনো উন্নতি ঘটেনি। দিনকে দিন তারা অধঃপতনের চুড়ান্ত সীমায় পৌছে গেছে। একটা সময় ছিল যুবকদের দেখলে মানুষ আশ্বস্ত হতো। সাহস পেতো। যুব সংগঠনগুলোকে মানুষ আপন ভাবতো। এখন আর ভাবতে পারে না। এখন তারা যুবকদের দেখলে ভয় পায়। কোনো কোনো সংগঠনের যুবকদের দেখলে এমনভাবে আৎকে ওঠে যেনো সাক্ষাৎ আজরাইল দেখেছে। এমন একটা নাজুক মুহূর্তে গঠিত হয়েছে, ইসলামী যুব আন্দোলন। বাংলাদেশের লাখো যুবকের আদর্শিক আশ্রয়স্থল, গণমানুষের আস্থার মারকাজ।

ইসলামী যুব আন্দোলন এবং অন্যান্য যুব সংগঠনের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য কি? সহজ এবং সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো- অন্যান্য সংগঠনের কর্মীরা তাদের দলীয় নেতাদের আদর্শ বাস্তবায়ন করতে চায়। তারা তাদের নেতাদের আদর্শে সংগঠন চালায়, নিজেরা চালিত হয়। আর ইসলামী যুব আন্দোলনের কর্মীদের আদর্শ হলো সর্বকালের শ্রেষ্ট মহামানব হযরত মুহাম্মদ সা. তারা রাসুলের সা. আদর্শে দেশ জাতি গঠন করতে চায়, সমাজ বিনির্মাণ করতে চায়।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহযোগী সংগঠন হিসাবে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী যুব আন্দোলনের উদ্দেশ্য লক্ষ সম্পর্কে আলাদা কিছু বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। বাংলাদেশের গণমানুষের আধ্যাত্মিক এবং রাজনৈতিক রাহবার মরহুম পীর সাহেব চরমোনাই, হযরত মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করীমের রহ. প্রতিষ্ঠিত দলইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশএদেশে রাষ্ট্রীয় ভাবে ইসলাম কায়েম করতে চায়।

সৈয়দ ফজলুল করীম রহ. তার কর্মী বাহিনীকে দুনিয়াবি আখের গোছানোর রাজনীতি শিক্ষা দেন নি। তিনি রাজনীতিকে ইবাদত মনে করতেন। তার কর্মী বাহিনীকে রাসুলের সা. আদর্শের উপর অটল থেকে রাজনীতি চর্চা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের শিক্ষা দিয়েছেন।

তাঁর অবর্তমানে ইসলামী আন্দোলনের হাল ধরেছেন মাওলানা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (আমীর, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ) এবং মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম (সিনিয়র নায়েবে আমীর, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ) তাদের নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মূল উদ্দেশ্য এবং লক্ষ থেকে এতটুকু পিছপা হয়নি, বরং আরো বেশি গতিশীল হয়েছে। দেশের গণমানুষের আস্থা অর্জন করেছে।

অনেক লোভ লালসা, ভয় ভীতি উপেক্ষা করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জানুয়ারীর সংবিধান বিরোধী, অবৈধ নির্বাচন বয়কট করেছে। অনির্বাচিত সরকারের দুশাসনে যখন দেশের কোনো রাজনৈতিক দল রাজপথে নামতে সাহস দেখায় নি তখন ইসলামী আন্দোলন বিভিন্ন ইস্যুতে রাজপথ প্রকম্পিত করেছে, করছে। সুতরাং ইসলামী যুব আন্দোলনের আদর্শ লক্ষ, কর্মসূচি নিয়ে নতুন কোনো ব্যাখ্যার দরকার আছে বলে মনে করি না। তবে ইসলামী যুব আন্দোলনের কর্মীদের জন্য স্বতন্ত্র কিছু কর্মসূচি থাকা দরকার। দৈনন্দিন কিছু কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করা দরকার।

দুই.

১. ইসলামী যুব আন্দোলনের প্রত্যেক কর্মীকে রাসুলের সা. আদর্শের উপর অটল থেকে নেতার নেতৃত্ব মানতে হবে। যতক্ষণ নেতার নেতৃত্বের মাপকাঠি থাকবেশরীয়তততক্ষণ নেতার প্রতি পূর্ণ আনুগত্য থাকতে হবে।

২. ইসলামি যুব আন্দোলনের প্রত্যেক কর্মীর জন্য রাসুলের সা. পূর্ণ সিরাত জানা এবং পড়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। পরিস্কার এবং ঝরঝরে ধারনা থাকতে হবে রাসুলের সা. সিরাত সম্পর্কে।

৩. বাংলাদেশ এবং প্রতিবেশি রাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অন্তত ৫টি দেশের সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, ভৌগলিক অবস্থান, রাজনীতি এবং ধর্মীয় সংগঠন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে।

৪. খেলাফত এবং এর শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। পৃথিবীর কোথায় কতদিন খেলাফতি শাসন ছিল, কি পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং কেনো পতন হয়েছিল তা জানতে হবে।

৫. বিশ্বের অন্তত জন মুসলিম মনিষী এবং জন অমুসলিম মনিষীর জীবনী জানতে হবে। নিয়মিত আন্তর্জাতিক মানের ইসলামী স্কলারদের বক্তব্য শুনতে বা পড়তে হবে।

৬. প্রচলতি শাসন ব্যসস্থা, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা থাকতে হবে। এগুলোর প্রবর্তকদের জীবনী, প্রয়োগের সময়, প্রেক্ষপট এবং সুফল-কুফল জানতে হবে। এসব বিষয়ে সাংগঠনিক সিলেবাস থাকতে হবে।

৭. হাট-বাজারে, চা দোকানে, যেখানে-সেখানে সংগঠন নিয়ে বিতর্ক করা যাবে না। দাওয়াত দেয়া যাবে, কিন্তু কোনো প্রকারের বিতর্কে জড়ানো যাবে না। কেউ আলোচনা বা বিতর্ক করতে চাইলে তাকে অফিসে বা নির্দিষ্টি স্থানে দাওয়াত করে প্রথমে সুন্নত মেনে সামান্য হলেও আপ্যায়ন করতে হবে। এরপর যুক্তি দিয়ে আলোচনা বা বিতর্ক করতে হবে।

৮. সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের বাইরে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে ব্যক্তিমত প্রকাশ করে ফেতনা সৃষ্টি করা যাবে না। সোস্যাল মিডিয়ায় অযাচিত বিতর্ক সৃষ্টি করা যাবে না। কোনো খবর প্রচারের আগে সত্যতা এবং তথ্যসূত্র সম্পর্কে জানতে হবে। কেউ অসৌজন্য মূলক বা বিভ্রান্তিকর কথা বললে, সমালোচনা করলে দায়িত্বশীল ছাড়া বা তাদের সাথে আলোচনা না করে কোনো প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা যাবে না।

৯. যুব আন্দোলনের দাওয়াতী পদ্ধুতির মধ্যে আধুনিকতা এবং প্রযুক্তির ব্যবহার থাকতে হবে। সাংগঠনিক দাওয়াতের জন্য আলাদা সেল গঠন করতে হবে। যারা সকল পর্যায়ের কর্মীদের আধুনিক দাওয়াত পদ্ধুতি শিক্ষা দেবে। দাওয়াত সেল আধুনিক দাওয়াত পদ্ধুতি নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করবে। একজন ব্যবসায়ীর কাছে কি ভাবে দাওয়াত নিয়ে যেতে হবে, একজন চাকরীজীবীকে কি পদ্ধুতিতে দাওয়াত দিতে হবে, একজন সাংবাদিকের কাছে কি ভাবে যেতে হবে, একজন বুদ্ধিজীবীর কাছে কি ভাবে যেতে হবে, একজন রাজনীতিকের কাছে কি ভাবে যেতে হবে, একজন আলেমের কাছে কি ভাবে যেতে হবে, একজন সাধারণ মানুষের কাছে কি ভাবে যেতে হবে, কি বলতে হবে, ইত্যাদী বিষয়ে তারা গবেষণা করবে এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবে।

১০. সাংগঠনিক প্রচারাভিযানেও আধুনিকতা থাকতে হবে। সাধারণ মানুষের বাইরে প্রত্যেক কর্মীকে অন্তত দু’জন প্রতিষ্ঠিত মানুষের সাথে সখ্যতা গড়তে হবে। এই প্রতিষ্ঠিত মানুষদের মাধ্যে শিক্ষক, সাংবাদিক, সম্পাদক, লেখক, কবি, শিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, চিকিৎসক, বুদ্ধিজীবী, আলেম, আইনজীবী, টকশোর আলোচক, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, সচীব, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ইমাম, বিচারকসহ বিভিন্ন স্তরের পেশাজীবীরা থাকবে। তাদের দলে ভেড়ানোর জন্য নয় বা এয়াতন আদায়ের জন্য নয়, একদম ছিমসাম ব্যক্তিগত সখ্যতা তৈরী করতে হবে। নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। ব্যক্তিগত সখ্যতার মাঝে শুধুমাত্র নিজের সাংগঠনিক পরিচয়টা তাকে জানিয়ে রাখতে হবে, এর বাইরে কিছু নয়।

১১. দেশের সকল ডানপন্থী এবং বামপন্থী, ইসলামের পক্ষের, বিপক্ষের সেলিব্রেটিদের তালিকা করতে হবে। যারা ডানপন্থী এবং ইসলামের পক্ষের শক্তি তাদের সম্মান এবং অবস্থান বিবেচনা করে সংগঠনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিতে হবে। সংগঠন সম্পর্কে তাদের সুধারণা দিতে হবে এবং তাদের কথা গুরুত্বসহকারে শুনতে হবে। কোনো ভাবেই তাদের অসম্মান করা যাবে না। তারা যদি কোনো ভুল বা বিভ্রান্তিকর কথা বলেন তা যুক্তি দিয়ে খন্ডাতে হবে, কিন্তু বিতর্ক করা যাবে না।

১২. সংগঠনের নিজস্ব একটা আর্কাইভ থাকতে হবে। যেখানে প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত খবর, ছবি, ভিডিও ছাড়াও নিজস্ব কিছু সংগ্রহ থাকবে। যেগুলো হুটহাট করে প্রচার করা যাবে না, কিন্তু প্রয়োজনে খুব সতর্ক এবং বিচক্ষণ ভাবে প্রকাশ করা হবে।

১৩আমরা জানি বাংলাদেশের অধিকাংশ পত্র-পত্রিকা বা টিভি মিডিয়ায় চালকের আসনে যারা বসে আছেন তারা সার্বিক ইসলামের পক্ষের মানুষ নন। খন্ডিত ইসলাম পালন করলেও সার্বিক ইসলাম সম্পর্কে তাদের জানার সীমাবদ্ধতা আছে। তাই বলে এদের থেকে দুরে থাকা যাবে না। কৌশলী হতে হবে।

মালিক, সম্পাদক, সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত আদর্শ বিশ্বাস সম্পর্কে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। তারা কি চায়, কি ভাবে চায় তা জানতে হবে এবং কৌশলে ইসলামের পক্ষে ব্যবহার করতে হবে। তাদের নিয়ে গবেষণা করতে হবে। প্রয়োজনে কাজের জন্যও আলাদা সেল গঠন করা যেতে পারে। বাংলাদেশের মিডিয়া কি চায়, কি ধরণের কথা তারা গুরুত্ব দেয়, কাভার দেয় তা বুঝে কথা বলতে হবে। একজন বক্তা ১৫ মিনিট বক্তৃতা করলে এর মধ্যে অন্তত মিনিটের কথা মিডিয়ার চাহিদা মাথায় রেখে বলতে হবে।

বিষয় ভিত্তিক আলোচনা করতে হবে। অর্থাৎ নিজেদের কথাই বলতে হবে, কিন্তু হেকমতের সাথে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলোসহ সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলতে হবে। দেশের জাতীয় সংকটগুলোকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। গণমানুষের নিত্য সমস্যা নিয়ে কথা বলতে হবে। মৌলিক অধিকার নিয়ে কথা বলতে হবে।

ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এবং আলোচিত অংশের উদৃত্তি দিয়ে কথা বলতে হবে। সংগঠনের প্রেস বিজ্ঞপ্তি লেখার সময় ভাষার প্রয়োগ, শব্দ চয়ন এবং বক্তব্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে আধুনিক সংবাদ গাঁথুনি মাথায় রাখতে হবে। মূল বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে কিছু মুখরোচক শব্দ বা লাইন ব্যবহার করা যেতে পারে, যা মিডিয়া এবং সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করবে।

১৪. যুব আন্দোলনের প্রত্যেক কর্মীকে সপ্তাহে অন্তত এক ঘন্টা পরোপকার করতে হবে। ধর্ম বর্ণ বিবেচনা না করে জনহীতকর যে কোনো কাজ করতে হবে। যে কাজে কোনো সংগঠনিক প্রচার থাকবে না। সোস্যাল মিডিয়ায় স্টাটাস দেয়া হবে না। সেলফি তোলা হবে না। শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জনহীতকর কাজ করতে হবে সপ্তাহে মাত্র এক ঘন্টা। রাস্তা ঝাড়দেয়া, ময়লা পরিস্কার করা, ভারি বোঝা টানতে সাহায্য করা, লাশ দাফন করা, রোগীর সেবা করা, গাছ লাগানো, সামাজিক কর্মকান্ডে সহযোগিতা করা, ইত্যাদী। অর্থাৎ যে কোনো ধরণের জনকল্যাণ মূলক কাজ করা।

১৫. মাসে অন্তত একজনকে অর্থিক সহযোগিতা করা। টাকা, ১০ টাকা, ১০০ টাকা, ৫০০ টাকা কোনো বিষয় নয়, অর্থাৎ টাকার অংক বড় কথা নয়। মাসে অন্তত একজনকে সামান্য হলেও আর্থিক কিছু সাহায্য করতে হবে। একটি রুটি, একটি বই, একটি খাতা, একটি কলম কিনে দেয়া বা এক বেলা খাওয়ানো, ইত্যাদী। মোট কথা হলো সমাজের অভাবী অন্তত একজন মানুষকে মাসে অন্তত একবার অর্থিক সহযোগিতা করতে হবে। কাজেও কোনো প্রকারের সাংগঠনি বা ব্যক্তিগত প্রচার করা যাবে না।

এইসব বিষয়গুলো মাথায় রেখে যুব আন্দোলনের কর্মীদের জন্য দৈনন্দিন কর্মসূচি এবং সিলেবাস নির্মান করতে হবে। যা যুব আন্দোলনের প্রতিটি কর্মী নিয়মিত ব্যক্তিগত ভাবে পালন করবে এবং সিলেবাস অনুযায়ী পড়াশুন করে জ্ঞানার্জনের চেষ্টা করবে।

তিন.

আজ ৩১ মার্চ ২০১৭, ইসলামী যুব আন্দোলনের প্রথম জাতীয় যুব কনভেনশন। প্রধান অতিথি, ইসলামী আন্দোলনের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। সভাপতি, ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহবায়ক কে এম আতিকুর রহমান। কনভেনশনের সার্বিক সাফল্য এবং কল্যান কামনা করি। মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি।

লেখকঃ আহবায়ক, ইসলামী যুব আন্দোলন, খুলনা মহানগর।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ