জামিল আহমদ : যে মহামনীষীগণ ইসলামের বিধি-বিধান সম্পর্কে গবেষণা চিন্তা করেছেন এবং তা অন্য মানুষের কাছে পৌছে দিতে জীবন উৎসর্গ করেছেন ইমাম শাফেয়ী রহ. ছিলেন অন্যতম। কুরআন হাদিস গবেষণা তথা ইজতিহাদের ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। তাকে সমকালীন যুগে ফকীহদের সর্দার বলা হতো। এছাড়া তিনি ইরাকের কুফা নগরীর মুফতী হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। ইলমী ময়দানে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি শাফেয়ী মাযহাবের প্রবর্তক। নিম্নে ইমাম শাফেয়ী রহ. এর সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হলো।
নাম, উপনাম ও বংশ পরিচয় :
নাম : মুহাম্মদ, পিতা ইদরিস, দাদা আববাস, উপনাম আবূ আব্দুল্লাহ্, বংশ নামা : মুহাম্মদ বিন ইদরিস বিন আববাস বিন উসমান বিন শাফি‘— আল কুরাশী আল শাফেয়ী আল মাক্কী। ইমাম শাফেয়ী রহ.-এর বংশ- কুরাইশ বংশের অন্যতম ‘‘আব্দে মানাফ বিন কুসাই’’ এর কাছে মিলিত হয়েছে, তাই ইমাম শাফেয়ীর বংশের মূল এবং রাসূল সা.-এর বংশ একই। এ জন্য তিনি আল-মুত্তালাবী বলে পরিচিত, তিনি কুরাইশ বংশের তাই কুরাশী এবং তাঁর দাদা ‘‘শাফে’’ সাহাবী এর দিকে সম্পৃক্ত করায় শাফেয়ী, মক্কায় প্রতিপালিত হওয়ায় মাক্কী বলে পরিচিতি লাভ করেন।
ইমাম শাফেয়ী রহ.-এর উপাধি হল, ‘‘নাসিরুল হাদীস’’ হাদীসের সাহায্যকারী বা সহায়ক, কারণ হাদীস সংগ্রহ, সংকলন, বিশেষ করে হাদীসের যাচাই-বাছাইয়ে তিনি সর্ব প্রথম অবদান রাখেন, তিনিই সর্ব প্রথম হাদীস শাস্ত্রের নীতিমালা প্রণয়নে কলম ধরেন ‘‘আর রিসালাহ ও আল উম্ম’’ গ্রন্থদ্বয়ে। অতঃপর সে পথ ধরেই পরবর্তী ইমামগণ অগ্রসর হন।
জন্ম ও প্রতিপালন:
সকল ঐতিহাসিকের মতে ইমাম শাফেয়ী রহ. ১৫০ হিঃ সনে জন্ম গ্রহণ করেন, যে সনে ইমাম আবূ হানীফাহ রহ. ইন্তেকাল করেন।
ইমামের জন্মস্থান সম্পর্কে কিছু মতামত পরিলক্ষিত হয় কেউ বলেন গাযা নামক স্থানে, কেউ বলেন আসকালান শহরে আবার কেউ বলেন ইয়ামান দেশে। এ মতবিরোধের সমাধানে ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী রহ. বলেন : গাযা ও আসকালান এ দু’টি পাশাপাশি এলাকা, মূলতঃ আসকালান প্রসিদ্ধ নগরী এরই অন্তর্গত (তৎকালীন) একটি এলাকা/গ্রাম গাযা সেখানেই ইমাম শাফেয়ী জন্মলাভ করেন, তার মা ছিলেন ইয়ামানের প্রসিদ্ধ ‘‘আয্দিয়্যাহ’’ গোত্রের, তাই জন্মের দু’বছর পর ছেলে ইয়াতীম হয়ে যাওয়ায় মা ছেলেকে নিয়ে গিতৃকূল ইয়ামানে চলে যান। কয়েক বছর পরেই ইমামের বাবার বংশ কুরাইশ বংশের সম্পর্ক দৃঢ় করার লক্ষ্যে আবার মক্কায় পাড়ি জমান। অতএব ইমাম শাফেয়ীর জন্মস্থান সম্পর্কে আর কোন মতভেদ থাকেনা।
শিক্ষা জীবন:
ইমাম শাফেয়ী রহ. ছোট কালেই পিতাকে হারিয়ে ইয়াতীম হয়ে যান, পিতার মৃত্যুর পর অভিভাবকহীনতা ও দারিদ্রতা ইত্যাদি নানা সমস্যার সম্মুখীন হন, পিতা মারা গেলে বিচক্ষণ মা তাকে দু’বছর বয়সে মক্কার পার্শ্ববর্তী নিয়ে আসলে তিনি কুরআন মুখস্ত করায় মনোনিবেশ হন এবং সাত বছর বয়সেই সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্ত করেন। তিনি নিজেই বলেন : আমি যখন মায়ের কাছে ইয়াতীম অসহায়, শিক্ষক দেয়ার মত মায়ের কাছে কিছু নেই এমতাবস্থায় শিক্ষক এর স্থলাভিষিক্তে দায়িত্ব পালনশর্তে পড়াতে রাযি হলে আমি তার কাছে কুরআন মুখস্ত খতম করলাম।
অতপর মাসজিদে বিভিন্ন আলিমদের কাছে বসে হাদীস ও মাসআলা মুখস্ত করতে লাগলাম এবং কিছু বিষয় হাড়ের টুকরায় লিখে রাখতাম। তিনি আরো বলেন : আমার বয়স যখন প্রায় দশ বছর তখন মক্কায় জ্ঞান চর্চায় ব্যস্ত থাকা দেখে আমার এক আত্মীয় আমাকে বললেন : তুমি একাজ কর না বরং অর্থ উপার্জনের পথধর। তিনি বলেন আমি তার কথায় কান দিলাম না বরং শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চায় আমি আরো মগ্ন হলাম ফলে আল্লাহ আমাকে এসব জ্ঞান দান করেছেন।
তিনি ছোটবেলা হতে শিক্ষানুরাগী এবং কঠোর জ্ঞান সাধনার ফলে সাত বছরে কুরআনের হাফেয এবং দশ বছরে মুয়াত্তা হাদীস গ্রন্থ হিফয করে পনের বা আটার বছর বয়সে ফাতাওয়া প্রদান শুরু করেন। সাথে সাথে মক্কায় আরবী পন্ডিতদের কাছে আরবী কবিতা ও ভাষা জ্ঞানে পূর্ণ পান্ডিত্ব লাভ করেন।
শিক্ষা সফর :
মহা মনীষী জ্ঞানপিপাসু ইমাম শাফেয়ী রহ.-এর এক ব্যক্তি বা অঞ্চল হতে জ্ঞান শিক্ষা করে পিপাসা নিবারণ হয়নি, তাই তিনি এক ব্যক্তি হতে আরেক ব্যক্তি এবং এক অঞ্চল হতে আরেক অঞ্চলে জ্ঞানারহনে ভ্রমণ করেছেন, সাথে সাথে দ্বীন ও জ্ঞান প্রচার ও প্রসারেরও কোন কমতি হয়নি।
মদীনা সফর : সর্ব প্রথম তিনি মদীনা সফর করেন এবং মদীনার ইমাম, ইমাম মালিকের সংকলিত গ্রন্থ মুয়াত্তা মুখস্ত করে তাঁকে শুনান, ইমাম শাফেয়ীর ছোট বয়সে এই প্রজ্ঞা ও প্রতিভা দেখে তিনি অভিভূত হন। ইমাম মালিক রহ. যত দিন বেঁচে ছিলেন ইমাম শাফেয়ী রহ. ততদিন তাঁর সঙ্গ ছেড়েন নি, তাই মুয়াত্তা ছাড়াও আরো অনেক কিছু তার কাছে শিক্ষা লাভ করেন।
মদীনার পর তিনি ইয়ামানে শিক্ষার উদ্দেশ্যে বের হন। সেখানে শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তারে আত্মনিয়োগ করেন। জনসমাজে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লে তিনি বিদ্বেষিদের চূান্তে পড়েন, ফলে তিনি ইয়ামান ত্যাগ করে আবার মক্কায় ফিরে আসেন।
ইরাক সফর : ইমাম শাফেয়ী ইরাকে দু’বার সফর করেন, প্রথমবার রাজনৈতিক কারণে খলিফা হারুনুর রশীদ তাকে ইরাকে জোরপূর্বক পাঠান, যেভাবেই হোক, সেখানে গিয়ে তিনি ইরাকের প্রসিদ্ধ জ্ঞানীদের নিকট শিক্ষা সমাপন করে আবার মক্কায় ফিরে আসেন এবং পূর্ণদমে দরস-তাদরীস ও ইসলাম প্রচার-প্রসারের কাজে একটানা নয় বছর আত্মনিয়োগ করেন।
অতঃপর ১৯৫ হিজরী ইমাম শাফেয়ী আবারো ইরাক সফর করেন, তবে এ সফর পূর্বের ইরাক সফর হতে অনেক ভিন্ন ছিল, প্রথম সফর ছিল জ্ঞান শিক্ষা গ্রহণের আর এ সফর হলো শিক্ষা গ্রহণ পাশাপাশি শিক্ষাদানের জন্য। ইমাম বায়হাকী রহ. স্বীয় সনদে আবূ ছাওর হতে বর্ণনা কারেন, তিনি বলেন, যখন ইমাম শাফেয়ী ইরাকে আসলেন তখন রায়পন্থী (আহলুর রায়) হুসাইন কারাবিসী আমার কাছে আসলেন এবং বললেন যে, আমাদের মাঝে একজন হাদীস পন্থী এসেছেন চল আমরা তার কাছে গিয়ে একটু হাসি-ঠাট্টা করি।
আবূ ছাওর বলেন : আমরা তাঁর কাছে গেলাম, হুসাইন ইমামকে এক মাসআল জিজ্ঞাসা করলেন, জবাবে ইমাম সাহেব ‘‘আল্লাহ তা’আলা বলেন এবং রাসূল সা. বলেন’’ এভাবে প্রচুর কুরআন ও হাদীসের উদ্ধৃতি উপস্থাপনের মাধ্যমে জবাব দিতে থাকলেন এভাবে রাত হয়ে গেল, তখন আমরা তাঁর কুরআন ও হাদীসের অগাধ পান্ডিত্ব দেখে আশ্চর্য হলাম, শেষটায় আমাদের রায় ও কিয়াসের বিদ’আত বর্জন করে তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করে তাঁর আনুগত্য স্বীকার করলাম। এ সফরেই ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ. ইমাম শাফেয়ীর সাক্ষাৎ করেন।
মিসর সফর : ইমাম শাফেয়ী রহ.-এর ইরাকে অবস্থান যেমনি প্রশংসনিয়, তেমনি আবার অপরদিক হতে কালো মেঘ নেমে আসতে লাগল। মুতাযিলা আলিমরা রাজনৈতিক প্রাঙ্গণ দখল করায় খলীফা হারুণসহ সে সময়ের আববাসীয় খলীফাগণ ফালসাফা ও তর্কবিদ্যা-মানতিকে প্রভাবিত হয়ে কুরআন মাখ্লুক (সৃষ্ট) ভ্রান্ত বিশ্বাস পোষণ করে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের ইমাম- ইমাম আহমাদ, ইমাম শাফেয়ী এবং যারা বিদ’আত মুক্ত সঠিক আকীদাহ্ বিশ্বাসের ধারক-বাহক তাদের উপর নির্যাতন শুরু করে, যার ফলে বাধ্য হয়ে ইমাম শাফেয়ী ইরাক ত্যাগ করে মিসরে পারি জমান।
মিসরে আগমন করলেই মিসরবাসী সানন্দে সাগতম জানান, মিসরের বড় মসজিদ – আমর বিন আল আস মসজিদে কিছু আলোচনা পেশ করলে সকলেই তাঁর আলোচনায় মুগ্ধ হয়ে যান, এবং তারা এক বাক্যে স্বীকার করেন যে, মিসরের বুকে এমন প্রতিভাবান ব্যক্তির কখনও আগমন ঘটেনি, যিনি কুরাইশ বংশোদ্ভুত, যার সালাতের ন্যায় উত্তম সালাত আদায় করতে কাউকে দেখিনি, যার চেহারার ন্যায় সুন্দর চেহারা খুব কমই আছে, যার বক্তব্য ও বাচন ভঙ্গির মত আকর্ষণীয় ও শ্রুতিমধূর কাউকে দেখিনি।
তাঁর হাদীস গবেষণা ও চর্চায় যারা হানাফী বা মালিকী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন, তার অনেকেই হাদীসের আলোকে ইসলাম চর্চার সুযোগ লাভে ধন্য হন। ইমাম শাফেয়ী জীবনের শেষ পর্যন্ত মিসরেই অবস্থান করেন এবং তাঁর মূল্যবান গ্রন্থসমূহ সেখানেই সংকলন করেন।
ইমাম শাফেয়ী রহ.-এর শিক্ষকবৃন্দ :
ইমাম শাফেয়ী রহ. স্বীয় যুগে বিভিন্ন দেশে অগণিত আলিম হতে শিক্ষালাভ করেন, ইমাম বায়হাকী, ইবনু কাছীর, মিয্যী, মুযানী ও ইবনু হাজার আসকালীন স্বীয় গ্রন্থসমূহে ইমামের শিক্ষক বৃন্দের বিস্তারিত অলোচনা করেছেন তন্মধ্যে কয়েকজনের নাম নিম্নে উল্লেখ করা হল-
১. ইমাম সুফইয়ান বিন উয়ায়নাহ রহ. মৃত: ১৯৮ হিজরী, মাক্কী।
২. ইমাম ইসমাঈল বিন আব্দুল্লাহ রহ. মৃত: ১৭০ হিজরী মাক্কী।
৩. ইমাম মুসলিম বিন খালিদ রহ. মৃত: ১৭৯ হিজরী মাক্কী।
৪. ইমাম মালিক বিন আনাস রহ. মৃত: ১৭৯ হিজরী মাদানী।
৫. ইমাম মুহাম্মদ বিন ইসমাইল রহ. মৃত: ২০০ হিজরী মাদানী।
৬. ইমাম হিশাম বিন ইউসুফ রহ. মৃত: ১৯৭ হিজরী ইয়ামানী।
৭. ইমাম ওয়াকী বিন আল জাররাহ্ রহ. মৃত: ১৯৭ হিজরী কুফী। এ ছাড়াও আরো অসংখ্য বিদ্বান ইমাম শাফেয়ীর শিক্ষক ।
ইমাম শাফেয়ী রহ. এর ছাত্রবৃন্দ :
ইমাম শাফেয়ী রহ. এর ছাত্র হওয়ার যারা সৌভাগ্য লাভ করেছেন তাদের সংখ্যা ও বর্ণনা দেয়া অসম্ভব, কারণ তিনি যে দেশেই ভ্রমণ করেছেন এবং শিক্ষার আসরে বসেছেন সেখানেই অগণিত ছাত্র তৈরী হয়েছে, নিম্নে কয়েকজন প্রসিদ্ধ ছাত্রের নাম উল্লেখ করা হলঃ
১. ইমাম রাবী বিন সুলায়মান আল মাসরী।
২. ইমাম ইসমাঈল বিন ইয়াহইয়া আল মুযানী আল মাসরী।
৩. ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ্ আলফাকীহ আল মাসরী।
৪. ইমাম আবূ ইয়াকূব ইউসুফ বিন ইয়াহইয়া আল মাসরী।
৫. ইমাম আবুল হাসান বিন মুহাম্মদ আয্যাফরানী। এ ছাড়া অগণিত, অসংখ্য ছাত্র রয়েছে যাদের সঠিক সংখ্যা একমাত্র আল্লাহ তা’আলাই ভাল জানেন।
ইমাম শাফেয়ী সম্পর্কে আলিম সমাজের প্রশংসা :
সত্যকে সত্য বলাই হলো ন্যায় বিচার, ইমাম শাফেয়ীর জ্ঞান, প্রজ্ঞা, আল্লাহ ভীরুতা ও সত্যের দাওয়াতের যথার্থতা বর্ণনায় কেউ কম করেন নি, যারা ন্যায়কে ন্যায় বলেছেন তন্মধ্যে :
১. ইমামুল মাদীনাহ- ইমাম মালিক রহ. বলেন : ‘‘আমি এ যুবক ইমাম শাফেয়ী এর মত অধিক বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান আর কোন কোরাইশীকে পাইনি।
২. ইমাম আবূল হাসান আয্যাফরানী বলেন : ‘‘আমি ইমাম শাফেয়ীর ন্যায় অধিক সম্মানী, মর্যাদাশীল, দানশীল, আল্লাহ ভীরু দ্বীনদার ও অধিক জ্ঞানী আর কাউকে দেখিনি।
৩. ইমাম ইসহাক বিন রাহ্উয়াহ রহ. বলেন : আমি ইমাম আহমাদ রহ. সহ মক্কায় ইমাম শাফেয়ী রহ.-এর কাছে গেলাম, তাঁকে বেশ কিছু জিজ্ঞাসা করলাম তিনি খুব ভদ্রতার সাথে সাবলীল ভাষায় প্রশ্নের জবাব দিলেন। অতঃপর আমাদের চলে আসার সময় একদল কুরআনের আলিম বললেন : ইমাম শাফেয়ী হলেন স্বীয় যুগে কুরআনের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী জ্ঞানী মানুষ।
৪. ইমাম ইসহাক বলেন : আমি যদি তাঁর কুরআনের পান্ডিত্ব সম্পর্কে আগে অবগত হতাম তাহলে তাঁর কাছে শিক্ষার জন্য থেকে যেতাম।
ইমাম শাফেয়ী রহ. এর রচিত গ্রন্থাবলী : প্রসিদ্ধ চার ইমামের মধ্যে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ.-এর গ্রন্থাবলী সর্বাধিক, অতঃপর ইমাম শাফেয়ী রহ.-এর। ইমাম শাফেয়ী অসংখ্য গ্রন্থ রেখে গেছেন, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য যেমন-
১. ‘‘কিতাবুল উম্ম’’ মূলতঃ এটি একটি হাদীসের গ্রন্থ, যা ফিকহী পদ্ধতিতে স্বীয় সনদসহ সংকলন করেছেন, এটি একটি বিশাল গ্রন্থ। যাহা ৯টি বড় ভলিয়মে প্রকাশিত।
২. ‘‘আর রিসালাহ’’ এটা সেই গ্রন্থ যাতে ইমাম শাফেয়ী উসূলে হাদীস ও উসূলে ফিকহে সর্বপ্রথম কলম ধরেছেন।
৩. ‘‘আহকামুল কুরআন’’।
৪. ‘‘ইখতিলাফুল হাদীস’’।
৫. ‘‘সিফাতুল আমরি ওয়ান্নাহী’’।
৬. ‘‘জিমাউল ইলম’’।
৭. ‘‘বায়ানুল ফারাইয’’।
৮. ‘‘ফাযাইলু কুরাইশ’’।
৯. ‘‘ইখতিলাফুল ইরাকিঈন’’।
১০. ইখতিলাফু মালিক ওয়া শাফিয়ী। ইত্যাদি আরো বহু গ্রন্থ রয়েছে।
ইমাম শাফেয়ী রহ. এর আকীদাহ্-বিশ্বাস :
ইমাম শাফেয়ী রহ. আহলুস সুন্নাহ্ ওয়াল জামাআতের ইমাম, যিনি ছিলেন কুরআন ও সুন্নাহর একনিষ্ঠ অনুসারী, আকীদাহ্-বিশ্বাস, আমল-আখ্লাক, ইবাদাত-বন্দেগী সকল ক্ষেত্রে তিনি সব কিছুর উর্দ্ধে কুরআন ও সুন্নাহ্কে প্রাধান্য দিতেন এবং আকড়িয়ে ধরতেন, তিনি কালাম পন্থী যুক্তিবাদী বিদ’আতীদের ঘোর বিরোধী ছিলেন, অনুরূপ রায় ও কিয়াস পন্থীদেরও বিরোধী ছিলেন। সুতরাং কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে আহ্লুস সুন্নাহ্ ওয়াল জামাআতের আকীদাহ্-বিশ্বাসই ইমাম শাফেয়ীর আকীদাহ্-বিশ্বাস। এতে কোনই বৈপরিত্য নেই।
ইমাম শাফেয়ী রহ. এর ইন্তেকাল :
ইমাম শাফেয়ী রহ. ও আল্লাহর নিয়মের বাইরে নন, একই নিয়মে তিনিও এসেছেন আবার সব কিছু রেখে আল্লাহর আহবানে সারা দিয়ে ২০৪ হিজরীর রজব মাসের শেষ দিন জুমআর রাত্রিতে পৃথিবী হতে বিদায় গ্রহণ করেন। আল্লাহ্ তাকে জানণাতুল ফিরদাউস দান করুন। আমীন!
লেখক : তরুণ আলেম ও সংগীত শিল্পী