সাজিদ নূর সুমন: কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরবাসী প্রায় এক শতাব্দী ধরে জেলার দাবিতে সোচ্চার রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সে দাবি তীব্র হয়েছে। এ উপজেলার বাসিন্দাদের দাবি সরকার ও প্রশাসন তাদের যৌক্তিক চাওয়া পূরণ করবে। তবে একই সঙ্গে ভৈরবাসী চাচ্ছেন কিশোরগঞ্জে আরেকটি জেলা হলে ভৈরবকেই করতে হবে।
জানা যায়, ময়মনসিংহের আগে বাজিতপুরে পৌরসভা স্থাপিত হয় ১৮৬৯ সালে। ব্রিটিশ সরকার ১৯১২ সালে তৎকালীন কিশোরগঞ্জ মহকুমাকে দুই ভাগ করে বাজিতপুরকে মহকুমা করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে লক্ষ্যে ওই বছরই বাজিতপুরে প্রায় ২০৬ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করা হয়। সে সময় প্রশাসনিক ভবন, অবকাঠামো নির্মাণের জন্য স্থান নির্ধারণসহ নানা প্রক্রিয়া চালানোর একপর্যায়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ফলে মহকুমাকরণ প্রক্রিয়া থেমে যায়।
১৮২৩ সালে ব্রিটিশ সরকার বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলায় 'বাজিতপুর' ও 'হয়বতনগর' নামে দুটি থানা প্রতিষ্ঠা করে। পরে হয়বতনগরকে কিশোরগঞ্জ এবং বাজিতপুরকে ভেঙে আরও কয়েকটি থানা প্রতিষ্ঠা করা হয়।
প্রস্তাবিত 'বাজিতপুর মহকুমার' পুরনো দলিলপত্র পর্যালোচনা করে জানা যায়, বাজিতপুরকে মহকুমায় রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে ব্রিটিশ সরকার ১৯২২ সালে লেভিঞ্জ কমিশন, পাকিস্তান সরকার ১৯৫২ সালে তিন সদস্যের হাসান বাউন্ডারি কমিশন ও বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৭ সালে অবিভক্ত ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক রফিউল করিমের নেতৃত্বে তিনটি পৃথক কমিশন গঠন করে। এ তিনটি কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনেই ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে মহকুমা করার যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয় এবং সুশৃঙ্খল প্রশাসন কার্যকরী করতে এ অঞ্চলের মধ্যবর্তী থানা বাজিতপুরেই মহকুমা স্থাপন জরুরি বলে মতামত দেওয়া হয় এবং তা অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়। আশপাশের এলাকার জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের বিষয়টিও এতে উলেল্গখ করা হয়। এছাড়া বাজিতপুরে যুগ্ম জেলা জজ আদালত স্থাপনের জন্য ২০০৬ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (মতামত) সরেজমিন তদন্ত শেষে একটি প্রতিবেদন প্রদান করেন। যাতে বাজিতপুরে যুগ্ম জেলা জজ আদালত স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।
বাজিতপুরকে জেলা করার দাবিতে আন্দোলনকারীরা বলছেন, প্রায় ১৫০ বছর আগে থেকে বাজিতপুরে ভৈরবসহ ছয় থানার (বর্তমানে পাঁচ থানার) দেওয়ানি (মুন্সেফ) আদালত কার্যকর রয়েছে। ভৈরব, কুলিয়ারচর ও বাজিতপুরের পুলিশ সার্কেল (এএসপি) অফিসও বাজিতপুরেই অবস্থিত। দেশের একমাত্র জিপি (গ্র্যান্ড প্যারেন্ট) পোলট্রি ফার্ম এখানে অবস্থিত। এছাড়া বাজিতপুরে একটি বড় বেসামরিক বিমান ঘাঁটি (কৃষি বিমানবন্দর), একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, পোলট্রি শিল্পনগরী, একাধিক নৌবন্দরসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা রয়েছে। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য যৌক্তিক দাবি নিয়েই তারা জেলা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলার দাবিতে মাঠে আন্দোলনের পাশাপাশি বাজিতপুরবাসী আইনি লড়াইয়ে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের অভিমত, কিশোরগঞ্জ ভেঙে নতুন জেলা করা হলে বাজিতপুরকেই জেলা করতে হবে।
স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মী নাসরুল আনোয়ার বলেন, ভৌগোলিক কারণেই বাজিতপুরকে জেলা করা উচিত। তিনি বলেন, 'বাজিতপুরের সীমানা ঘেঁষে দক্ষিণে কুলিয়ারচর, পূর্বে অষ্টগ্রাম, উত্তরে নিকলী এবং পশ্চিমে কটিয়াদীর অবস্থান। তাই বাজিতপুর জেলা হলে এসব উপজেলার লোকজন অল্প সময়ে জেলা সদরের কাজকর্ম সেরে সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরতে পারবেন। এছাড়া মহকুমা করার জন্য কয়েকশ' কোটি টাকা মূল্যের অধিগ্রহণ করা জমি থাকায় বাজিতপুরকে জেলা করা হলে সরকারের বহু টাকা বেঁচে যাবে।
আজকের একবিংশ শতাব্দীর চাহিদা পূরনে এই জনপদকে জেলার মর্যাদা দেয়ার দাবী জানাচ্ছে বাজিতপুর স্হায়ী বাসিন্দাসহ বাজিতপুর-নিকলী-অষ্টগ্রাম-কুলিয়াচরের বাসিন্দারা। তারা মনে করেন দুইজন জীবন্ত কিংবদন্তী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মহামান্য রাষ্ট্রপতি এ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এই যৌক্তিক দাবী পূরণে এগিয়ে আসবেন।
আরআর