[caption id="attachment_29483" align="aligncenter" width="911"] দর্জি কাজ শিখছে শিক্ষার্থীগণ[/caption]
আতাউর রহমান খসরু
তনজিমুল মোছলেমীন। চট্টগ্রামের ইসলামি শিক্ষার প্রসারে এক অনবদ্য নাম। সমাজের অনাথ, অসহায় ও এতিম ছাত্রদের ধর্মীয় ও কারিগরি শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে সাবলম্বী করে তুলতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দী কাল।
চট্টগ্রামের প্রখ্যাত আলেম ও সমাজ সেবক আল্লামা মোবারক আলী হেজাজী রহ. ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন তনজিমুল মোছলেমীন এতিমখানাটি। প্রতিষ্ঠাকালে এর ছাত্র ছিলো মাত্র ১০ জন। বর্তমানে প্রায় তিনশো এতিম ও দুস্থ শিশু রয়েছে এতিমখানায়।
[caption id="attachment_29484" align="alignnone" width="913"] আল্লামা মোবারক আলী হেজাজী রহ.[/caption]
আল্লামা মোবারক আলী হেজাজী রহ. ১৯১৪ সালে চট্টগ্রামের রাজউন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৪ জুন ২০১৬ সালে ইন্তেকাল করেন। তিনি তনজিমুল মোছলেনীন ছাড়াও চট্টগ্রামের অর্ধ শতাধিক ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ধারণা করা হয়, তার ৮০ বছরের জীবনকালে তিনি ৭০ হাজারের উপর এতিম ও অনাথ শিশুর প্রতিপালন করেছেন এবং তাদেরকে কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে সহায়তা করেছেন।
চট্টগ্রামের শাহ আমানত রহ. এর মাজার সংলগ্ন তনজিমুল মোছলেমীন এতিখানার বৈশিষ্ট্য হলো এখানে শিশুদের লালন, পালন ও ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি দেয়া হয় কারিগরি শিক্ষা। যেনো এসব শিশুরা পরবর্তী জীবনে আত্মনির্ভরশীল হতে পারে। কারিগরি শিক্ষার মধ্যে রয়েছে, দর্জি, হস্তশিল্প, ইলেক্ট্রিক মেকারি ইত্যাদি।
[caption id="attachment_29487" align="aligncenter" width="840"] নামাজ শিখছে শিশুরা[/caption]
তনজিমুল মোছলেমীনে শিক্ষা গ্রহণ করে আজ সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন অনেকেই। তাদের একজন হাফেজ মাহমুদুল হক। তিনি চট্টগ্রামে একটি ফুল দোকানের মালিক। তিনি জানান, মাত্র ৭ বছর বয়সে তিনি তনজিমুল মোছলেমীন এতিমখানায় ভর্তি হন এবং ১১ বছর বয়সে হেফজ শেষ করেন। হেফজ শেষ করার পর তিনি তারাবি পড়িয়ে সামান্য অর্থ পান এবং তা দিয়ে তিনি ফুলের ব্যবসা শুরু করেন।
[caption id="attachment_29485" align="alignnone" width="904"] নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হাফেজ মাহমুদুল হক[/caption]
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আল্লামা মোবারক আলী হেজাজী রহ. সব সময় বলতেন, নিজের হাতের উপার্জনের চেয়ে উত্তম কোনো রিজিক নেই এবং নিজের পরিচয়ের চেয়ে বড় কোনো পরিচয় নেই। তাই ছোট থেকে নিজেরা কিছু করার চেষ্টা করবে।’
আমরা তার কথায় অনুপ্রেরণা পেতাম এবং কোথাও থেকে কোনো অর্থ পেলে তা নিয়ে কিছু করার চেষ্টা করতাম। এভাবেই আমার ইনতিজার পুষ্প বিতানের প্রতিষ্ঠা। হাফেজ মাহমুদুল হক এখন গর্ববোধ করেন যে, তিনি এখন মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করতে পারেন।
[caption id="attachment_29486" align="aligncenter" width="825"] হজরত শাহ আমানত রহ. এর মাজারের পাশে তনজিমুল মোছলেমীন এতিমখানা[/caption]
তনজিমুল মোছলেমীন থেকে কারিগরি শিক্ষাগ্রহণ করে এখন সাম্বলম্বী ও সফল ব্যবসায়ী হাফেজ রাশেদুল ইসলাম। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় তার একটি কাপড়ের দোকান ও টেইলার্স রয়েছে। তিনি বলেন, আমি ছোট বেলায় আমার বাবা-মা মারা যায়। আমি তনজিমুল মোছলেমীনে শিক্ষা গ্রহণ করি এবং সেখান তিনি দর্জির কাজ শেখেন। হেফজ শেষ করে তিনি একটি দর্জি দোকানে কাজ নেন এবং ধীরে ধীরে নিজেই একটি দর্জি দোকান দেন।
এভাবেই যুগ যুগ ধরে কর্ণফুলি তীরের হাজার হাজার অসহায় ও দুস্থ শিশুর চোখে জীবনের স্বপ্ন এঁকে দিয়েছে। সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস জুগিয়েছে অসংখ্য শেকড়হীন মানুষকে।
-এআরকে